Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

রূপকথার রাজ্যে হারিয়ে

Icon

ফরিদুল ইসলাম নির্জন

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শৈশবে আমরা অনেক গল্প পড়েছি। রূপকথার অসংখ্য কাহিনি। যেসব কাহিনির ভেতর থাকত পাহাড়ি বুড়ি, রাক্ষস রাজার গল্প, ডাইনি রানিসহ অসংখ্য গল্প। যেসব গল্প শুনে বুক কাঁপতে শুরু করত। তাদের ভয়ংকর রূপরেখা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইলেও মনের ক্যানভাস তারা দখল করার চেষ্টা করত। সেসব ভূতুড়ে গল্প বেশির ভাগ ভুটানকে কেন্দ্র করে। ড্রাগন রাজার দেশ মানেই তো সেই ভুটান। চোখের সামনে ভেসে বেড়াবে পাহাড়ের গায়ে নানা রঙের কাঠের তৈরি ছোট ছোট বাড়ি, ভুটানের রঙিন সংস্কৃতিতে মাতম হওয়া দৃশ্য, স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা এসব কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছি বই পড়তে গিয়ে। বইতে উল্লেখ করেন লেখক, ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সেখানে থেকেছেন। চোখের সামনে সব দেখেছেন, সেগুলো আত্মস্থ করে মনের ক্যানভাসে রং-তুলিতে এঁকেছেন সেসব ঘটনা বা সময়কে। সে সময়কার ভুটানকে বর্তমান সময়ে মিলাতে ২০১৮ সালে আবার যান সেখানে। ঘুরে এসে আবার লিখতে শুরু করেন। বহমান জীবনের এক বাস্তব উপখ্যান গড়ে তুলেছেন এ বইটিতে। অনেক বই আছে, যার চরিত্রের মাধ্যমে পাঠক হারিয়ে যান। চরিত্রের সঙ্গে মিলে ছুটে চলেন, পাহাড়ে, সমুদ্রে, খালে, বিলে, পর্বতমালা, গুহা, বনায়নসহ অনেক জায়গায় নিজেকে নিয়ে যান। কেউবা শূন্যতায় বন্দি করেন। ‘ড্রাগন রাজার দেশে’ বইটি ৫৬ পর্বে সাজিয়েছেন লেখক। প্রতিটি পর্ব ভিন্ন রকমের। প্রথম পর্বের নাম ‘বিমান থেকে নেমে’। শেষ পর্বে ‘ঘরে ফেরা’র মাধ্যমে সমাপ্তি হয়। এর ভেতর অসংখ্য পর্ব রয়েছে। প্রতিটি পর্বে কোনো ইতিহাস, খাবার বর্ণনা, সংস্কৃতির রূপরেখা, পাহাড়ের ঘরে নিয়ে চিত্রপট সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সহজ বর্ণনায়, বাক্যও নান্দনিকতায় সাজিয়েছে। পাঠক খুব সহজে পড়তে পারবে। আসলে সে দেশে গেলে এই বই তার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ‘ড্রাগন রাজার দেশে’ বইটি ভ্রমণবিষয়ক আত্মজীবনী গ্রন্থ বলা যেতে পারে। তথ্যসমৃদ্ধ বইয়ে সেখানকার স্থান বা প্রকৃতির বর্ণনা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ওখানকার ইতিহাসের অনেক বিষয় টেনে আনা হয়েছে। ভুটানের রাজতন্ত্র। আইন ক্ষমতা। শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারতার ইতিহাস টেনে আনা হয়েছে। ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে কাউকে ছাড় দেন না। সেসব নিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভুটানের বর্তমান রাজার গল্প এসেছে এ বইতে। সে যখন ক্লাস সিক্সে পড়েন, জংখা বিষয়ে ফেল করেন। সে রাজার ছেলে, কিন্তু তার জন্য কেউ তদবির করেনি। শিক্ষাব্যবস্থার নীতি অনুযায়ী এগিয়ে গেছে। আজকের ভুটানের স্বপ্নদ্রষ্টা রাজা জিগমে দরজি ওয়াংচুক। যিনি শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন করেন। ভারত থেকে মেধাবী শিক্ষক এনে নিজের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতেন। শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। ১৯১৫ সালে ভুটানের জনগণ এক ঘণ্টায় ৫০ হাজার গাছ রোপণ করেন রাজপুত্রের জন্মদিন উপলক্ষ্যে। এ বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে গিনেস বুকে নাম লেখেন। মোট আয়তনের ৭২ শতাংশ বনভূমি। ভুটান একমাত্র দেশ যেখানে প্রতিবছর কার্বন নিঃসরণ হওয়ার চেয়ে অক্সিজেন উৎপাদন হয় বেশি। এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য তথ্যভান্ডার বইটিতে। মন্দির দর্শন করতে মমোর অনুসন্ধান। সেই আগের মতো আর ভুটান নেই। গড়ে উঠেছে উঁচু উঁচু ইমারত। সে সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে বর্তমান সময়কে ধারণ করে উপস্থাপিত হয়েছে বইটি। এখানে বর্ণনার সঙ্গে উঠে এসেছে ইতিহাস আর সভ্যতার কথামালা। ছোট ছোট পর্বে সংক্ষিপ্তভাবে সাজানো হয়েছে লেখাগুলো, যাতে করে পাঠকের মনোযোগ হারিয়ে না যায়। খুব সহজে বুঝতে পেরেছি স্থান বা প্রকৃতির বর্ণনাশৈলী। সানডে মার্কেটে সবাই বড় বড় ব্যাগ নিয়ে বাজার করেন। বিভিন্ন সুখ-দুঃখের আলাপ করেন। সেখানে কম দামে ভালো সবজি পাওয়া যায়। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে বাজার কার্য পরিচালনা করে। সেখানকার নারীরাও বেশ সংগ্রামী। নিজের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে চলে। কোনো কোনো নারী পিঠে বাচ্চা নিয়েই দোকানদারি, বিভিন্ন চাষাবাদে শরিক হন। তাছাড়া ভুটানের মানুষদের খাদ্যাভ্যাস নিয়েও আছে মজার বর্ণনা। যেগুলো নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে পাঠককে। যেমন তারা অতিথিদের চা পান করায়। শেষ হলে আবার দেয়। তাই চা পান ধীরে ধীরে করতে হয়। সুপারি আর পান বেশ জনপ্রিয় সে দেশে। বেশির ভাগ লাল চালের ভাত খাওয়া হয়। তারা শুকনো খাবার খেতে পছন্দ করেন। ঝোলজাতীয় খাবারকে এড়িয়ে যান। গরুর মাংস রোদে শুকিয়ে অনেকেই চুইংগামের মতো খেয়ে থাকেন। এটা নাকি অনেকেই নেশার মতো খান। তাদের এটা ঐতিহ্য আর এমন অসংখ্য মজার খাদ্যাভ্যাসের কথা তুলে আনা হয়েছে বইটিতে। পাশাপাশি তাদের পোশাক, ধর্মরীতি, ভুটানের শিক্ষাব্যবস্থা, নারীর অবস্থান, সামাজিক জীবন, তাদের স্বভাব, বিনোদন ও খেলাধুলা, বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইতিহাস, প্রথা ও সংস্কার, রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীসহ অসংখ্য গল্প আছে এ বইয়ে। যা আমি পড়তে গিয়ে রূপকথার রাজ্য হারিয়ে গিয়েছি।

ড্রাগন রাজার দেশে : ফারাহ্ আজাদ দোলন। প্রকাশক : রাওয়া পাবলিকেশন।

প্রচ্ছদ : চারু পিন্টু। মূল্য : ৩৫০ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম