Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

প্রেম ও দ্রোহের কবি শারদুল সজল

Icon

অনিরুদ্ধ দিলওয়ার

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুন্দরের বিরুদ্ধে যাইনি এই বইয়ের কবি শারদুল সজল। এটি কবির সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা। অন্যভাবে বললে-কবির দৃঢ় উচ্চারণ যা সচরাচর কেউ করে না। সামাজিক অবক্ষয় ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির ভয়াল গ্রাসে কবির মন আহত হয়েছে বারবার। কবি প্রেম দিয়ে অসুন্দরকে পিষিয়ে দিয়ে সৌন্দর্যের পথে হাঁটার আহ্বান। এটি কবির ৫ম কবিতার গ্রন্থ। কবির চোখ সুন্দরের পক্ষে-মায়ায় ছলছল করে। বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া লাইনগুলো-

যে মানুষ হৃদয়ের পক্ষে থাকে-সে মানুষ সুন্দর।/তাকে কোন কলুষতা স্পর্শ করতে পারে না

সে চিরদিন হৃদয়ের উচ্চাঙ্গসংগীত

বা

এই সুন্দর হচ্ছে সত্য, সত্য হচ্ছে মানুষ/মানুষ হচ্ছে প্রেম আর প্রেম হচ্ছে চুমুর পারফিউম

যা ছড়াতে তোমার দিকে যাই/সুন্দরের দিকে যাই...

কবির উচ্চারণ নান্দনিক। মন ভেসে যায় স্বর্গীয় হাওয়ায়। কবি যেন তার অমৃতের বাণী পৌঁছে দিতে চান বিশ্বময়। কবির আরেকটি বিষয় অবাক লেগেছে, তা হলো উৎসর্গ পাতা। উৎসর্গ কবি নিজেকেই করেছে। যে প্রেম বিষয়টি হৃদয়ে ধারণ করে সে মহান। তাই তো কবি লিখেছেন-

যে বুকে প্রেম-ওম থাকে/সে মহান-মহারাজ, মহাপৃথিবীর ঊর্ধ্বে সে

অর্থ-সম্পদে করো না তাকে/প্রেম ছাড়া কোন কিছুর কাছেই নত নয় সে (উৎসর্গ পাতা/পৃষ্ঠা-৫)

একমাত্র কবিতাকে আঁকড়ে ধরে কবি বেঁচে আছেন। সংসার নয় কবি যেন খণ্ড খণ্ড ধ্বংস নিয়ে আনন্দ বৃদ্ধি করছেন জীবনে। আত্মীয় শিরোনাম কবিতায় তিনি লিখেছেন-

এমন হাসিমাখা মুখ আমাকে নেশার মতো টানে/তাই নিয়ম করে ছোট হই

আমি ছোট না হলে মানুষের হাসি মুখ দেখব কী করে! (পৃষ্ঠা ১০)

কবিতার মর্মবস্তু উপলব্ধি করাটাই পাঠকের কাজ। আত্মশুদ্ধির জন্য হলেও মহাগ্রন্থের দ্বারস্থ হওয়া পাঠকের কাজ। আমাদের মূল সমস্যা কবিতা নয়-কবিকে পড়ি। আর এভাবেই আমরা মূল কবিতা থেকে দূরে সরে যাই। শিল্পের স্বার্থে হলেও কবিতার মুখোমুখি হওয়াটাই শ্রেয়। এ গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা রোমান্টিক ধারার। কবির বয়স এবং একাকিত্বে থেকেও যৌন সুড়সুড়ি নয় বরং কবি নারীর শরীর ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করেছেন। এ রকম কিছু চুম্বক লাইন তুলে ধরলাম-মাংসল ত্বকজুড়ে ঘুমিয়ে আছে/ভূগোলবিদ্যার ইবাদতনামা অথবা রাত নামে বিশ্রাম আর প্রেয়সীর চুলের গন্ধে। অথবা কৃষিউর্বর তোমার শরীর /লাল মোরগের ডাকাডাকির প্রচ্ছদ এঁকে/জোছনার তরল ওমে তুমি এক মায়ার জলাশয়।

আগেও বলেছি কবিও প্রেমিক। প্রেম দিয়ে সত্যকে জয় করা সম্ভব। প্রেম সুন্দরের আরেক নাম। প্রেমহীন মানুষ পাথর সমান। এটা বলতেই পারি প্রেম ও দ্রোহের কবি শারদুল সজল। এ বই ছাড়াও পূর্বের কবিতাগুলোতে তার প্রেমিকা মুনিয়া নামটি উঠে এসেছে। মুনিয়া চরিত্রটি ব্যাপকতার কারণে হয়তো পাঠককুলে ঠাঁই করে নেওয়া অমূলক নয়। এ গ্রন্থে বেশ কয়েকটি কবিতায় মুনিয়ার উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। পাঠকের সুবিধার্থে এখানে কিছু লাইন দেওয়া হলো-

আমার মাথার কাছে একটু বসবে মুনিয়া? খুব ঘুম পাচ্ছে-কিন্তু ঘুমাতে পারছি না

কদিন ধরে কেঁপে কেঁপে জ্বর উঠছে, মনে হয় তুমি পাশে বসলে ঘুম হবে

(প্রযন্তে মুনিয়া/পৃষ্ঠা ৩৩)

অথবা

মুনিয়া-একদিন আমার বুক খুলে তোমাকে দেখাবো; রক্তনালী বেয়ে

কীভাবে প্রবাহিত হচ্ছে ক্রমাগত দিন রাত/আমার মগজে, মনে, ধমনিও শিরায়

দেখবো তোমাকে (ছায়াদীঘল কোলাহল/পৃষ্ঠা ৩৪)

অথবা

মুনিয়া-এই থাকলো রক্তের ফুল! তোমার চুলের খোঁপায় পরে নিও

না না রক্ত ঝরবে না, পুড়ে পুড়ে তা এখন কালো গোলাপ (হৃদয়ের রাজদণ্ড /পৃষ্ঠা ৩৫)

কবি শত যন্ত্রণা সহ্য করে নিজেকে তৈরি করে। যন্ত্রণার বদলে যন্ত্রণা দেওয়া কবির কাজ নয়। নীরবে নিভৃতে লিখে যান। সেসব লেখায় কিছুটা হলেও পাঠক বুঝতে পারে কবির গভীর বোধের উপলব্ধি। যেহেতু শারদুল সজল প্রেমিক কবি। প্রেমকে বুকে ধারণ করে সুদূর অস্ট্রেলিয়া নিজের কাজের মধ্যে ডুবে থাকেন। আবার এটাও হতে পারে মুনিয়া কবির কল্পনামাত্র। যে প্রতিদিন আসে-যার স্পর্শে শিহরিত হয় মন। হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় নক্ষত্রপুঞ্জে। আবার হতাশার চাদরে নিমজ্জিত হতেও দেখা যায়। কবি যেন এ একাকিত্বকে বেছে নেয় পরম মমতায়। হতে পারে একাকিত্বের ঘোরে মুনিয়া কবির একমাত্র সান্ত্বনা।

সুন্দরের বিরুদ্ধে যাইনি : শারদুল সজল। প্রকাশক : দেশ পাবলিকেশন্স।

প্রচ্ছদ : আল নোমান। মূল্য : ২০০ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম