Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

কানাডিয়ান চেখভ অ্যালিস মুনরো

Icon

সেলিম আকন্দ

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অ্যালিস অ্যান মুনরো কানাডিয়ান ছোটগল্পকার। গল্পের প্লট নির্বাচন, কাহিনির বুনন, চরিত্র চিত্রণ, ঘটনার ঘনঘটা, বর্ণনার বর্ণময়-ছটা, পরিবেশ-প্রতিবেশের বিশ্বস্ত বয়ান এবং ভাষাশৈলীর সমিলতার কারণে তাকে রুশ গল্পকার আন্তন চেখভের সঙ্গে তুলনা করে কানাডিয়ান চেখভ বলা হয়। তার লেখা দুনিয়ার সেরা গল্পকার চেখভের মতো একজন মহান লেখকের সঙ্গে তুলনীয়। ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সাহিত্যে নোবেলপ্রাপ্তি তার এ লেখক খ্যাতির অনন্য অর্জন।

অ্যালিস অ্যান্ড মুনরোর খ্যাতি মূলত একজন গল্পকার হিসাবে। উপন্যাস-কাব্য-কবিতায় যথেষ্ট সংখ্যক নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, ছোটগল্পে সেই তুলনায় খুব কম লেখকই পুরস্কৃত হয়েছেন। অ্যালিস অ্যান মুনরো সেই বিরলপ্রজ গল্পকার, যিনি শুধু ছোটগল্প লিখে ম্যান বুকারসহ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি শুধু ছোটগল্প লিখেছেন। ছোটগল্পই তার বিচরণের ক্ষেত্র। ছোটগল্পই তার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা, ভাবনা ও কল্পনা এবং ভালোলাগার ও ভালোবাসার একান্ত ভুবন ছিল। কানাডিয়ান গ্রামীণ জীবন, জনপদ, শহরতলীর মানুষের জীবনের গ্লানি, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, হাসি-কান্না, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি তার গল্পের মৌল উপজীব্য বিষয়।

অ্যালিস অ্যান মুনরো জন্মেছিলেন কানাডার অন্টারিওর উইংহ্যামে। কিশোর বয়সেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১১ বছর বয়সেই তিনি মনস্থির করেন যে, বড় হয়ে তিনি একজন লেখকই হবেন। সে মতোই তিনি সামনের দিকে এগিয়েছেন। পেশা হিসাবে লেখালেখিকে স্থির করেছেন। কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেননি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করেছিলাম, ‘লেখালেখি করেই শুধু আমি সফল হতে পারি। কেননা আমার মধ্যে অন্য কোনো গুণ ছিল না। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি বুদ্ধিজীবী ধরনের কেউ নই বরং একজন ভালো গৃহবধূ।’ কিন্তু ভালো একজন লেখক হলেও ভালো গৃহবধূ হয়ে ওঠা তার আর হয়নি। একান্ত ভালোবেশে জেমস মনুরোকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। একুশ বছর পর সেই বিয়ে ভেঙে যায়। তিন কন্যাসন্তানের জন্মদাত্রী হয়ে তিনি আবার নতুন করে বাঁচার আশায় জেরাল্ড ফ্রেমলিনকে বিয়ে করেছেন। ২০১৩ সালে ফ্রেমলিনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাকে আবার একাকিত্ব বরণ করতে হয়। তিনি তখন লেখালেখি ছেড়ে দেন। নির্জনতাকেই আপন করে নেন। ২০২৪ সালের ১৩ মে মহাপ্রয়াণের মাধ্যমে তার এ একাকিত্বের অবসান ঘটে। ১৯৫০ সালে তার প্রথম গল্ড দ্যা ডাইমেনশন অব আশ্যাঢো প্রকাশিত হয়। মুনরোর গল্পের প্রথম সংস্করণ দ্যা আটলান্টিক মান্থলি, গ্র্যান্ট স্ট্রিক হার্পরাস ম্যাগাজিন, ম্যাডে মৌসে, দি নিউইউর্ক ন্যারেটিভ ম্যাগাজিন এবং দ্যা প্যারিস রিভিউ-এর মতো জার্নালে প্রকাশিত হয়। বিশ্বের ১৩টি ভাষায় তার লেখা অনূদিত হয়েছে। তার গল্প ‘সেভ দ্যা রিপার’ এবং ‘প্যাশন’ একই বছরের দুটি ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রূপে প্রকাশিত হয়েছে। ‘হোম’ এবং ‘উড’ গল্প ত্রিশ বছরের ব্যবধানে নতুন রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। মুনরো তার গল্প ‘পাওয়ার্স’-এর ৮টি সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন। পুরোনো গল্প নবরূপ দানের ক্ষেত্রে ঘটনা, চরিত্র এবং থিম নতুন করে তিনি রচনা করতেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় চরিত্রগুলোকে তিনি বদলে ফেলতেন। গল্পের প্রেক্ষাপটেও পরিবর্তন আনতেন। ঘটনার ঘনঘটায় আসত নতুনত্বের ছোঁয়া। ১৯৮০ সালে যে গল্পের চরিত্র যেখানে মধ্য বয়সি ছিল, সেই একই চরিত্রকে তিনি বয়স্ক চরিত্র হিসাবে ২০০৯ সালে নতুনরূপে উপস্থাপন করেছেন। এভাবে পুরোনো গল্পকে নতুন খাতে প্রবাহিত করে ঘটনা ও চরিত্রে তিনি নতুনত্ব আনতেন। এক্ষেত্রে চরিত্র চিত্রণ, চরিত্রকে নবরূপ দান, কাহিনির গতিপথের পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি যে সংশোধনী আনতেন তা তার শ্রমসাধ্য প্রয়াসেরই এক নব উদ্ভাবিত ফলশ্রুতি। সমালোচকরা তার এ নবরীতির প্রশংসা করতে গিয়ে একে তার ‘কাব্যিক নির্ভুলতা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। কখনো কখনো তার পুরোনো গল্পকে নতুন সংস্করণে ‘উচ্চতর গীতি কবিতার’ স্তরে উন্নীত করেছেন। আসলে পুরোনো গল্পের ‘ফিনিশকে’ মুনরো ‘রিফিনিশ’ দানের ক্ষেত্রে তুলনারহিত ছিলেন। নিজস্ব অভিনব উদ্ভাবনী শৈলীতে আসলে তিনি তার পুরোনো গল্পগুলোকে বিভিন্ন চারুত্বে শৈল্পিক উপায়ে নবরূপ দান করেছেন। মূলত নিজের লেখা ভেঙে-চুরে এভাবে নবরূপ দানের ক্ষেত্রে অ্যালিস অ্যান মুনরো নতুন পথের পথিক এবং পথপ্রদর্শক ছিলেন।

অ্যালিস অ্যান মুনরোর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো একটি ‘শক্তিশালী আঞ্চলিক ফোকাসদান’ করা স্থানবাচকতা তার গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় জন-মানুষের অনুভূতিগুলোকে তিনি একান্ত জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের আচার-আচরণ, অনুভব-অনুভূতি, তাদের মতো করেই অবলীলায় তিনি প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য চেতনাকে তিনি তাদের বিশ্বাস ও আস্থার মর্মমূলে স্থান দিতেন। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘ছোট শহর বা শহরতলীর জীবনের বর্ণনা এত আকর্ষণীয় হতে পারে কী করে?’ মুনরো উত্তর দিয়েছিলেন ‘আপনাকে সেখানে থাকতে হবে এবং সেই ছোট্ট জায়গায় থেকে বিশ্বকে জানতে, বুঝতে ও অনুভব করতে হবে একজন সর্বজ্ঞভাবুক হিসাবে।’ অনেক সমালোচক মুনরোর ছোট শহরের এ অসাধারণ ‘সেটিংসকে’ গ্রামীণ আমেরিকান দক্ষিণের লেখকদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আসলে উইলিয়াম ফকনার এবং ফ্লানারি ও কনরের অসাধারণ কাজের মতো মুনরোর সৃষ্ট চরিত্রগুলো প্রায়শই স্থানীয় গভীরমূলে যেমন প্রথিত ছিল, তেমনি ছিল কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। কখনো কখনো তিনি সৃষ্ট চরিত্রের সঙ্গে স্থানীয় মিথ ও ঐতিহ্য এবং কৃষ্টির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর স্থানিক বৈশিষ্ট্য বহুলাংশেই তার জীবনের মতো সরল। কিন্তু তারা সবাই ছিল জীবনের দহনে দগ্ধ, কখনো ফুলের পুষ্পিত সুরভিতে স্নিগ্ধ। আবার তারা সবাই ছিল গ্রামীণ আমেরিকার তুলনায় কম তীব্র। মাটি এবং মানুষের নিবিড় আশ্লেষে তারা ছিল ওই এলাকার জন-জীবনের প্রতিভূ। তার পুরুষ চরিত্রগুলো প্রত্যেকে জীবনের সারৎসারকে ‘ক্যাপচার’ করে রক্তে মাংসের মানুষরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে পুরুষের তুলনায় তার সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলো অনেকাংশে জটিল। মুনরো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দক্ষিণ অন্টারিও গোথিক সাহিত্যের উপধারার ঐতিহ্যকে বহন করেছেন; মূলীভূত করেছেন ইতিহাসের চিরায়ত ধারাকে। তার কাজের একটি অন্যতম থিম, বিশেষ করে প্রথম দিকের গল্পগুলোতে বেশ জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। হেডশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, লাভশিপ, ম্যারেজশিপ এবং পলাতকের মতো গল্পে তিনি তার ফোকাস মধ্য বয়সি, একাকী নারী এবং বয়স্কদের দিকে স্থানান্তরিত করেছিলেন। প্রায়শই তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো একটি ঘটনাকে আলোকিত করে এবং তাতে নতুন অর্থ যোজিত হয়েছে। গল্পগুলো একটি অনন্য গদ্যশৈলীতে মানবজীবনে শুরু থেকে শেষাবধি গুরুতর নব-জীবনের অন্বেষণ করেছে। কখনো তার গদ্য জীবনের অস্পষ্টতাকে প্রকাশ করেছে। কখনো আবার একটি অদ্ভুত বিদ্রুপাত্মক মনোভঙ্গি তার গল্পের আবহকে গুরুতর করে তুলেছে। অকেজো জ্ঞান, ঈশ্বরত্ব সম্মান-অসম্মান, কূপমণ্ডূকতা, রিরংসা, ধর্মান্ধতা, তেতো স্বাদ, হৃদয়হীনতা, মানব মনের ভঙ্গুরতা, মানব-মানবীর তীব্র ও সুখী আক্রোশের সুর আনন্দিত হয়েছে। স্ফূর্তের উন্মীলন তার গল্পকে বিশিষ্টতা দান করেছে। আসলে গল্প বলার এক মোহময়ী আকর্ষণীয় নিজস্ব ঢং ছিল তার। তার নব-উদ্ভাবিত শৈলী যেমন ছিল মনোমুগ্ধকর, হৃদয়গ্রাহী এবং চমৎকার চারুত্বে চমকিত। সাধারণের সঙ্গে সাধারণ এবং কখনো অসাধারণের সঙ্গে সাধারণের সম্মিলন তার গল্পকে এক ভিন্নতর আমেজ দিয়েছে। বস্তুত মুনরোর কাজকে সমালোচকরা ছোটগল্পের স্থাপত্যে ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তার গল্পে ঘোষণার চেয়ে আবেগ বেশি। ছোট ছোট অনুভূতিগুলোকে চরিত্রের আচরণের মাধ্যমে তিনি অনির্বচনীয় অনুভূতির রং দিয়েছেন। আবার অদ্ভুত এক নৈর্ব্যক্তিক উপায়ে তাদের চাওয়া-পাওয়া, গুণাগুণ ও ত্রুটি-বিচ্যুতিকে প্রদীপিত করেছে। এভাবে তিনি নিজের জন্য যেমন, তেমনি উত্তর-প্রজন্মের গল্প লেখকদের জন্য নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। তাই সাহিত্যে নোবেলপ্রাপ্তির সংশাপত্রে সুইডিশ একাডেমি তাকে ‘ছোটগল্প বলার পথপ্রদর্শক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। তাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘সমসাময়িক ছোটগল্পের মাস্টার’ হিসাবে। মূলত ছোটগল্পের অবয়বে তিনি উপন্যাসের মহাকাব্যিক দ্যোতনাযোজিত করেছেন। তার মৃত্যুতে নিউইয়র্ক টাইমস তাকে ‘একটি নতুন প্রজন্মের পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার জন্য অভিনবত্বের কৃতিত্ব’ দিয়েছেন। সুইডিশ একাডেমির মতো তারাও তাকে ‘ছোটগল্পের মাস্টার’ বলে অভিহিত করেছে।

আসলে অ্যালিস অ্যান মুনরো একজন মহান ছোটগল্পকার। অন্টারিওর ছোট্ট একটি এলাকার মানুষের অনুভবপুঞ্জকে তিনি বিশ্বজনীন মানুষের প্রেক্ষণবিন্দু দিয়ে দেখেছেন। সমালোচকরা তার গল্পে চেখভের ‘মোহময়ী অনুকৃতি’ বলেছেন। আসলেই চেখভ বা চিভারের প্রবণতা তার কোনো কোনো ছোটগল্পে দেখা মিললেও তিনি নিজের মতো করে তার বিচরণের ক্ষেত্র অন্টারিওর উপযোগী করে উপস্থাপন করেছেন। কখনো তিনি গল্পের প্লটকে গৌণ মনে করেছেন। কাহিনি অনেক সময় তার কাছে মুখ্য ছিল না। স্থানবাচকতা এবং চরিত্ররাই আরাধ্য ছিল। তিনি সংক্ষিপ্ত, সূক্ষ্ম বিবরণের ওপর ভিত্তি করে ঘটনা এবং চরিত্রকে পরস্পর পরস্পরে পরিপূরকরূপে প্রতীকায়িত করেছেন। কখনো তিনি সময়ের সঙ্গে আবেগ ও অনুভূতিকে বিলম্বিত করে পাঠককে এক অন্তঃস্রোতে মহাচ্ছন্ন করেছেন। সমালোচকরা তার এ একান্ত ব্যতিক্রধর্মী কাজকে কানাডার ‘জাতীয় ধন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। মূলত তিনি নিজে একজন নারী হয়েও নারীত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে তার গল্পে জীবনের রূপায়ণ ঘটাননি। বিশেষ করে একজন কানাডিয়ান হিসাবে কানাডার গ্রামীণ জীবন ও জনপদকে তিনি উচ্চমূল্যে অধিষ্ঠিত করেছেন। অন্য বড় লেখকদের মতো তিনি বিশ্বভ্রমণ করেননি। নিজের চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে একান্তভাবে মন্থন করেছেন। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তাই তিনি গল্পের কাহিনি ও চরিত্রকে উৎকলিত করেছেন। নিজের চারপাশের গণ্ডির বাইরের বিষয় নিয়ে তিনি তেমন কিছু লেখেননি। নোবেল কমিটি বলেছে, ‘তার প্রায়শ গল্পে উপজীব্য ছোট কোনো শহরের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। এতে উঠে এসেছে সম্পর্ক ও নৈতিকতার টানাপোড়েন-যা এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির সম্পর্ক।’ মুনরো নিজেও স্বীকার করেছেন সে কথা। বলেছেন, এখানকার পরিবেশের ভেতরেই জীবন-যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই আমি বেড়ে উঠেছি। কাজেই এখানকার আবহ আমি যতটা গভীরভাবে অনুভব করতে পারি, অন্য কোনো নতুন জায়গা সম্পর্কে সেটা সম্ভব নয়। তাই তার সহকর্মী ও প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক মার্গারেট অ্যাড উট মুনরোকে ‘নারীদের জন্য এবং কানাডিয়ানদের জন্য অগ্রগামী’ বলে উল্লেখ করেছেন। অ্যাসোসিয়েট প্রেস বলেছে, ‘মুনরো যে কোনো শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলগুলোর মধ্যে একটি নিখুঁতশৈলী সংযোজন করেছেন; বিশেষ করে, সর্বজনীনকে আলোকিত করা, কানাডার চারপাশের গল্পগুলো তৈরি করা-যা বহু দূরের পাঠকদের কাছে এক অসাধারণ আবেদন তৈরি করেছে।’ জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শেরি লিংকন বলেছেন যে, ‘মুনরোর গল্পগুলো সংক্ষিপ্ত গল্পের রূপকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে নারীত্ব, মৃত্যু, সম্পর্ক, বার্ধক্য এবং স্থানীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে তিনি নবরূপে প্রতিভাত করেছেন।’ বুকার পুরস্কার জয়ের পর কমিটির বিচারকদের দ্বারা তার কাজগুলোকে ‘প্রত্যেকটি গল্পে যতটা গভীরতর প্রজ্ঞা এবং সূক্ষ্মতা আনা হয় বেশির ভাগ ঔপন্যাসিক আজীবন তাদের উপন্যাসে সে চেষ্টা করেছে।’

বস্তুত অ্যালিস অ্যান মুনরো একজন মহত্তর লেখক ছিলেন। তার মতো করে দক্ষিণ-পশ্চিম অন্টারিও এলাকা এবং স্কচ-আইরিশ বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর চারিত্রিক কেউ মেলে ধরতে পারেনি। তার ছোটগল্পে উপমার ব্যবহার তিনি করেছেন বর্ণনাত্মক ভঙ্গিমায়। পাশাপাশি তিনি অন্টারিও এলকায় গভীর ও জটিলতর মনোগত দিক উন্মোচন ও উদ্ভাসিত করেছেন। পল্লি অঞ্চলের পটভূমিকায় রচিত তার গল্পে মানব জীবনের ভঙ্গুরতার চিত্র উঠে এসেছে। তার মৃত্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ অন্যতম সেরা একজন গল্প লেখকে হারাল।’

তিনবার গভর্নর জেনারেল সাহিত্য পুরস্কার, হেনরি পুরস্কার, কমনওয়েলত্থ লেখক পুরস্কার, ম্যান বুকার পুরস্কার এবং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার মূলত তার প্রতিভার অনন্য স্বীকৃতি। এ পুরস্কার এবং দুনিয়াজোড়া সুখ্যাতি থাকার পরও তিনি মৃত্যু অবধি ছিলেন একান্ত নিভৃতচারী এবং প্রচারবিমুখ। তার গল্পের চরিত্রের মতোই তিনি ছিলেন সহজ-সরল এবং অনাড়ম্বর।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম