২৫ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের মামলা
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকে চার্জশিট অনুমোদন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে তহবিল থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার সেগুনবাগিচায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান। মামলায় এজাহারভুক্ত ১৩ আসামির সঙ্গে তদন্তে পাওয়া নতুন আরও একজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান শিগগিরই আদালতে চার্জশিট জমা দেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। অন্য আসামিরা হলেন-গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। আসামি তালিকায় আরও আছেন, প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম। আর তদন্তে পাওয়া নতুন আসামি হলেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত ভেঙে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তহবিলের উল্লিখিত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অপরাধলব্ধ ওই অর্থ তারা স্থানান্তর-রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে আত্মসাৎ করে। যা দণ্ডবিধি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানি লন্ডাংি প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় কমিশন চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে।
অনুমোদিত চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও হিসাব খোলা হয় একদিন আগে ৮ মে। সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এরকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি এক লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে অতিরিক্ত এক কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে মোট তিন কোটি টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের হিসাবে তিন কোটি ও সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার হিসাবে তিন কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে চার কোটি টাকা, সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে পাঁচ কোটি টাকা ও আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ছয় কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।