Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ফেসবুকে শিশু নিখোঁজের পোস্ট

গুজব বলছে পুলিশ, সতর্কতা জারি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক ভেসে আসছে নিখোঁজের নানা তথ্য। দেখা গেছে, পোস্টের বেশিরভাগই শিশু নিখোঁজ, বিশেষ করে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিখোঁজের তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। নেটিজনেরা নিখোঁজের এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে পোস্ট শেয়ার করায় অভিভাবকসহ জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ বলছে, শিশু নিখোঁজের বেশিরভাগ ঘটনাই গুজব। কিছু ঘটনা সত্য হলেও পরে সেসব শিশুদের পাওয়া গেলেও সেটি আর জানানো হয় না। এ নিয়ে আতঙ্কিত না হতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত আইডি ও বিভিন্ন গ্রুপ থেকে শিশু-কিশোর হারানো বা নিখোঁজের তথ্য শেয়ার হচ্ছে। মূলত ৬ জুলাই সকাল থেকে হঠাৎ শিশু নিখোঁজের তথ্য নিয়ে ফেসবুকে শত শত পোস্ট আসতে শুরু করে। যেখানে বলা হয়, গত ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়েছে ৩৫ শিশু। হেল্প ইন চট্টগ্রাম নামের একটি গ্রুপে এজে আব্দুল্লাহ নামে একজন লেখেন, ‘আমার ফ্রেন্ডের বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার নাম উম্মে অবতাহি, বয়স ১৪। দুপুর ১টা ২০ থেকে দেড়টার সময় সিডিডিএল স্কুল থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। তার পরনে ছিল স্কুল ড্রেস। তাকে ওয়াসার গলিতে দেখা গেছে, এরপর আর খোঁজ মিলছে না।’ এই পোস্টটি মুহূর্তে ভাইরাল হতে দেখা যায়। চট্টগ্রাম গ্রুপ নামে একটি পেজে মো. নওশাদ নামে একজন পোস্ট দেন, ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৪৮ বাচ্চা নিখোঁজ।’ চিটাগাং ইউনিভার্সিটি নিউজ নামে একটি পেজ থেকে পোস্ট দেয়া হয়, ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা নিখোঁজ।’ তবে ফেসবুকের এমন পোস্টে দেওয়া নম্বর থেকে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনোটির সত্যতা পাওয়া যায় আবার কোনোটিতে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। কোনো ঘটনায় নিখোঁজের পর খুঁজে পাওয়া গেলেও সেটি আর জানাননি এমন ঘটনাও পাওয়া গেছে।

ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার এক শিশু নিখোঁজের তথ্য শেয়ার করে একটি নম্বর দেওয়া হয়। আসিফ ইকবাল প্রিন্স নামের সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, রবিউল ইসলাম রাফি নামের শিশুটিকে না পেয়ে তারা নিখোঁজ সংক্রান্ত পোস্ট দেন। পরে তাকে পাওয়া গেলে সেটি জানাতে ভুলে যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক শাহিন মাহফুজ ফেসবুক পোস্টে নিজের ভাগনে নিখোঁজের তথ্য শেয়ার করেছেন। তিনি লেখেন, তার ভাগনে হাফেজ মো. সাকিবুল হাসান (নিরব) ৯ দিন ধরে নিখোঁজ। ২৮ জুন সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) সংলগ্ন বাসা থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়ে যায়। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রোববার দুপুরের পর তার সঙ্গে যোাগযোগ করা হলে ভাগনেকে খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন। ঢাকা মহানর পুলিশের (ডিএমপি) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাইর শুরু থেকে রোববার পর্যন্ত ৭ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় নিখোঁজের ঘটনায় ৭৬টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। এসব নিখোঁজদের মধ্যে যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়েসি মানুষ রয়েছেন। এছাড়া নিখোঁজের সংখ্যা অন্য সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে স্বাভাবিক বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে ২১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২১৭, মার্চে ২১৩, এপ্রিলে ২২১, মেতে ১৯৯ ও জুনে ২৬০ জন নিখোঁজের ঘটনায় রাজধানীর থানাগুলোতে জিডি হয়।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, শিশু নিখোঁজের বিষয়টি গুজব মনে হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। এমন নিখোঁজের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এটি কীভাবে শুরু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিএমপি ছাড়াও পুলিশ সদর দপ্তর শিশু নিখোঁজের ঘটনাকে গুজব বলেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশু নিখোঁজসংক্রান্ত পোস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের নজরে এসেছে। শিশু নিখোঁজসংক্রান্ত এ ধরনের পোস্ট নিছক গুজব। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত বা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ তৎপর রয়েছে। কেউ এ ধরনের গুজব ছড়ালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফ্যাক্ট চেকার কাদরুদ্দিন শিশির বলেন, ফেসবুকে ভাসতে থাকা শিশু নিখোঁজের সব ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে শিশু-কিশোর হারানো বিজ্ঞপ্তিসংক্রান্ত পোস্ট নিউজফিডে বেশি বেশি দেখার পেছনে ফেসবুকের অ্যালগরিদমের ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম