
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৯ এএম

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংগৃহীত ছবি
আরও পড়ুন
সংযম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা। দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার পর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে সারা বিশ্বে মুসলমানের কাছে সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাস এই পবিত্র মাহে রমজান ফিরে আসে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার প্রতি যত অনুগ্রহ করেছেন তার অন্যতম রমজানুল মোবারক। এটা উম্মতের জন্য এক মহাপ্রাপ্তি ও নিয়ামত।
রোজাদার আল্লাহর কাছে এত প্রিয় যে, ‘রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকের সুগন্ধির চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়’ বলে হাদিসে বিবৃত হয়েছে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষকে ইহ-পারলৌকিক সফলতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছান। জাগ্রত করেন মনুষ্যত্ববোধ। সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা। রমজানের সাধনায় আল্লাহ মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে, রিপুর তাড়না থেকে তাকে মুক্ত করে তার ভেতর তাকওয়া তথা খোদাভীতি ও আল্লাহ প্রেম জাগ্রত করেন। যা তাকে আজীবন সত্য-সুন্দরের পথে পরিচালিত করতে সহযোগিতা করে। তাই আল্লাহ এ রমজানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘যাতে তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-বাকারা, আয়াত-১৮৩)।
রমজানে আল্লাহ তার সব দয়া ও করুণার দ্বার খুলে দেন। আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন-‘রোজা আমারই জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে-আমিই এর প্রতিদান তথা আমার সন্তুষ্টি লাভই হবে এর সত্যিকার প্রতিদান। হজরত আবু উবায়দা বলেন-‘রোজাকে বিশেষভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত করার কারণ এই যে, অন্যান্য ইবাদতে লোক দেখানোর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা নেই। রোজা শুধু আল্লাহর জন্যই হয়।
রমজানের মতো এত বিরাট নিয়ামত পেয়েও যারা অবহেলায় কাটিয়ে দেন-তাদের জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন কঠিন ও কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা-‘নবিজি একদিন মসজিদে নববির মিম্বারে আরোহণ করছিলেন; মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে তিনি বললেন, আমিন! মিম্বারের দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি আবার বললেন, আমিন! মিম্বারের তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি তৃতীয়বারের মতো আবার বললেন, আমিন! যার অর্থ-হে আল্লাহ তুমি কবুল করো! নবিজির জীবনে এই প্রথমবার এমন ঘটনা দেখে সাহাবায়ে কেরাম খুতবার পর এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। তখন নবিজি (সা.) বলেন, ‘এইমাত্র হজরত জিবরাইল (আ.) এসে-আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি আমাকে (কানে কানে) বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেল অথচ তার পাপমোচন হলো না। আমি বললাম, আমিন। আমি দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরুদ পড়েনি। আমি বললাম, আমিন। আমি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে পেল অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন!’
আমাদের কর্তব্য হলো, এই মোবারক মাসকে যথাযথ সমাদর করা। যথার্থ মূল্যায়ন করা। কারণ আমরা যদি এর উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারি, জান্নাত লাভের এমন সুযোগকেও হাতছাড়া করে ফেলি, তাহলে এ জগতে আমাদের চেয়ে বড় হতভাগা আর কে হতে পারে? আল্লাহ যেন আমাদের অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত না করেন। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা যেন সিয়াম সাধনার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না হই।
আমরা হয়তো অনেকেই নবিজির সাহাবি ইবনে আহমাসির (রা.) ঘটনা জানি। তিনি একবার সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধের ময়দানে লড়ছিলেন। লড়তে লড়তে তিনি এক সময় আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়লেন। তার সঙ্গীরা তাকে সংরক্ষিত স্থানে নিয়ে গেলেন। তারপর তারা তাকে পানি পান করতে দিলেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি বললেন, আমার সিয়াম ভেঙে যাবে। কিছুক্ষণ পরই তিনি দুনিয়া ছেড়ে তার কাছে চলে গেলেন, যার জন্য সিয়াম রেখেছিলেন। দুনিয়াতে সিয়াম সাধনা করে আখেরাতে মহান প্রভুর কাছে ইফতার করতে গেলেন। হজরত ওমর এ ঘটনা শুনে বললেন, এ সাহাবি দুনিয়া দিয়ে আখেরাতকে ক্রয় করে নিয়েছেন।
লেখক : উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ