লোকসান এড়াতে টেলিটককে বাংলালিংকের সঙ্গে অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের সুপারিশ
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ১০:২১ পিএম
লোকসান এড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটককে বাংলালিংকের সঙ্গে অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারিং বা অ্যাকটিভ টাওয়ার শেয়ারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছে। এতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে টেলিটককে লাভজনক করতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) দেওয়ার কথাও বলা হয়।
সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (আইসিটি) সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ মতামত দেওয়া হয়। কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র দেখে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, টেলিটকসহ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থাগুলোকে কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে দাঁড় করানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এজন্য কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রধান করে একটি এবং কমিটির আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিমকে প্রধান করে আরেকটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তারা প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন।
কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বিএম কবিরুল হক, নজরুল ইসলাম বাবু, আবদুলাহ নাহিদ নিগার, আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও সিদ্দিকুল আলম।
কমিটির কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সংসদীয় কমিটির পরপর দুটি বৈঠকে টেলিটক নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বৈঠকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেলিটকের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করা হয়েছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকার বিনিয়োগ করলেও টেলিটক লাভজনক হয়নি। টেলিটক কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভুল তথ্য দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী সংসদীয় কমিটির কাছে সহযোগিতা কামনা করে বলেন, টেলিটক বাংলালিংকের সঙ্গে অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারিং বা অ্যাকটিভ টাওয়ার শেয়ারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে টেলিটকের যাত্রা শুরু হয়। গত অর্থবছর (২০২২-২০২৩) পর্যন্ত টেলিটকের মোট লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিট লোকসানের ধারাবাহিক প্রবণতার প্রতিফলন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী টেলিটক কেবল ২০১০-২০১১ এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে মুনাফার মুখ দেখেছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ১৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর আগের ২০২০-২০২১ অর্থবছরে লোকসান দেয় ১৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি। নিম্নমানের সেবা এবং বছরের পর বছর লোকসানে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম হাবিবুর রহমানকে তুলাধুনা করেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার টেলিটকে কী কারণে গ্রাহক বাড়ছে না, কেন তাদের নিম্নমানের নেটওয়ার্ক, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বৈঠকে।
কমিটির আরেক সদস্য সিদ্দিকুল আলম বৈঠকে বলেন, টেলিটকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পেশাদারির সঙ্গে কাজ করছে কি না, তাদের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে কি না, বসে বসে সরকারি বেতনভাতা নেন কি না- এসব খতিয়ে দেখা দরকার। এ সময় টেলিটককে লাভজনক করতে কমিটির পক্ষ থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়।