Logo
Logo
×

আইটি বিশ্ব

ডিজিটাল প্রতারণার ৭ ধরন, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে

Icon

আজিম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম

ডিজিটাল প্রতারণার ৭ ধরন, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন প্রতারণা বা স্ক্যাম একটি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষ নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, যার ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিও বাড়ছে।

অনলাইন প্রতারণার সাধারণ ধরনগুলো হচ্ছে—

ফিশিং আক্রমণ: প্রচলিত এ প্রতারণার কৌশলে প্রতারকরা ই-মেইল, মেসেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস বা পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়। বিভিন্ন ব্যাংক বা সংস্থার নামে ফেক ইমেইল বা মেসেজ পাঠায়। সেই মেসেজে তারা কোনো লিঙ্কে ক্লিক করতে বলে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন—পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি চাওয়া হয়। সেই লিঙ্কে ক্লিক করে তথ্য দিলেই প্রতারকরা সেই তথ্য ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করতে পারে।

ফেক ই-কমার্স স্ক্যাম: বিভিন্ন ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে কম মূল্যে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে প্রতারণা করা হয়। পণ্য কিনে টাকা পরিশোধের পর তা আর হাতে আসে না অথবা নিম্নমানের পণ্য পাঠানো হয়। এ ধরনের ওয়েবসাইট সাধারণত কম দামে ব্র্যান্ডেড পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের ক্যাশ অন ডেলিভারি অপশন থাকে না এবং তাদের পণ্যে রিভিউ বা কাস্টমার ফিডব্যাক থাকে না।

ভুয়া চাকরির অফার: বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে প্রতারকরা এখন চাকরির নামেও বিভিন্ন প্রতারণা করছে। তারা বিভিন্ন লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। প্রতারকরা বিভিন্ন পরিচিত কোম্পানির নামে ফেক চাকরির বিজ্ঞাপন দেয় এবং চাকরির আবেদন করার সময় রেজিস্ট্রেশন ফি এর নামে টাকা চায়।

অনলাইনে আয়ের নামে প্রতারণা: সাধারণত ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেইলে প্রথমে যোগাযোগ করে পরে আপনার কিছু তথ্য নিয়ে অনলাইন আয়ের জন্য লোভ দেখায়। প্রথম দিকে খুবই সাধারণ কিছু কাজ করাবে যেমন কোনো ফেসবুক পেজে লাইক দেওয়া বা কোনো গ্রুপে জয়েন করলে ১০০-২০০ টাকা দেবে। বিশ্বাস অর্জন করে পরে বিভিন্ন নামে টাকা চাইবে। অনেকে লোভ করে প্রতারককে টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়।

অনলাইন গেম ও ক্যাসিনো: প্রতারকরা সাধারণত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বা তাদের পেইড এজেন্টদের মাধ্যমে সহজে অনলাইন গেম খেলে নিশ্চিত আয় করা যায় বলে প্রচারণা চালায়। এ ধরনের অনলাইন গেম ও ক্যাসিনোগুলো এমনভাবেই তৈরি করা হয় যাতে ইউজারদের দীর্ঘ মেয়াদে তাদের সঙ্গে যুক্ত রাখা যায়। প্রথমে সামান্য টাকা আয় করলেও পরবর্তীতে এই লোভ থেকে ইউজার আর বের হতে পারে না, অনেকটা জুয়ার নেশার মতোই তাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়।

ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম: এ ধরনের প্রতারণায় প্রতারকরা খুব কম সময়ে বেশি লাভের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকায়। কয়েক দিনে বা মাসে টাকা দ্বিগুণ করবে, বিভিন্ন স্কিম ও প্ল্যানে বিনিয়োগ করলে খুব তাড়াতাড়ি অনেক টাকা লাভ করা যাবে এসব বলে ও দেখিয়ে মানুষকে ঠকায়। এ ছাড়া আজকাল ক্রিপ্টোকারেন্সি ও শেয়ার মার্কেটের নাম করেও অনেক প্রতারণা হচ্ছে। প্রতারকরা নিজেদের তৈরি ফেক ক্রিপ্টোকারেন্সি বা শেয়ারে বিনিয়োগ করতে বলে এবং মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়।

অনলাইন ব্ল্যাকমেইলিং: অনলাইন ব্ল্যাকমেইলিং হলো এমন একটি অপরাধ, যেখানে প্রতারকরা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে, এছাড়া বিভিন্ন এডিটিং সফটওয়্যার বা এআই ব্যবহার করে নিকট পরিচিত মানুষদের আপনার আপত্তিকর অডিও ভিডিও পাঠিয়ে তারা টাকা বা অন্য কিছু আদায়ের জন্য আপনাকে চাপ দেয়। এ প্রতারকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ডেটিং অ্যাপে প্রথমে ভুয়া পরিচয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।

অনলাইন প্রতারণার মূল কারণগুলো হলো অসচেতনতা, লোভ ও সহজেই কোনো কিছু বিশ্বাস করা। আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যদি কখনো অনলাইন প্রতারণার শিকার হন, তাহলে দ্রুত আইনি সহায়তা নিন এবং পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানান।

লেখক : আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও এক্টিভিস্ট

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম