কে হবে ২৫ সালের মহাকাশ-নিয়ন্ত্রক
খালেদ আবু জাহের
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মহাকাশ শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত একগুচ্ছ প্রতিবেদন দিয়ে শুরু হয় একেকটি বছর। আমি মহাকাশ অর্থনীতির আকার ও গুরুত্ব নিয়ে বিশ্লেষণে যাব না। এটা সত্য, এ মুহূর্তের সাফল্যই মহাকাশের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করবে।
এ সাফল্য চীনের নেতৃত্বে আসুক-যেখানে মহাকাশবিষয়ক অভিযান বা কর্মকাণ্ডের নীতিনির্ধারকরা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আসুক-যেখানে বেসরকারি খাত নেতৃত্ব দিচ্ছে-বিশ্ববাসী বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে, যেখানে বিজয়ী পক্ষই সবকিছু কেড়ে নেয়। বস্তুত এ খাতে ২০২৫ সালের বিজয়ীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।
মহাকাশ শিল্পের ক্ষেত্রে এমন একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টির কারণ, এখনো এ বিষয়ক ব্যবসার আদেশের সিংহভাগ আসে সরকার এবং প্রধানত সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান থেকে। মহাকাশ অর্থনীতির বাণিজ্যিক পরিধি এখনো খুব ছোট। সুতরাং এ বছরের কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো মহাকাশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরাই নির্ধারণ করবেন; বোঝাই যাচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্বই এটি নির্ধারণ করবে।
এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই, এ বিষয়ে স্পেসএক্স একের পর এক সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে স্পেসএক্স একাই ১৩৮টি অভিযান সম্পন্ন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির অভিযানে চারটি স্টারশিপ টেস্ট ফ্লাইট রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্টারশিপের মহাকাশে উৎক্ষেপণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গত বছর কক্ষপথে উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা ছিল ২৫৯টি। এর মধ্যে মাত্র দুটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে ইউরোপ থেকে।
‘ব্লু অরিজিন’ নামক মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি সফলভাবে তার নিউ গ্লেন রকেট উৎক্ষেপণ করেছে; কিন্তু এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি প্ল্যাটফর্মে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ক গবেষণার একটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত হলো।
এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সুযোগের দ্বার উন্মোচিত হবে। তবু এটি অনেকটা মিডিয়া বা প্রযুক্তির মতো এক ব্যতিক্রমী ব্যবসা হিসাবেই রয়ে গেল। এ খাতে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর সংখ্যা সীমিত এবং অসম প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। বস্তুত প্রযুক্তি খাতের মতো এ খাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই মহাকাশ ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক গবেষণায় নতুন সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে; ইউরোপ এখনো তা করতে সক্ষম হয়নি।
মহাকাশ অর্থনীতির দিকে তাকালে লক্ষ করা যায়, উত্তরাধিকারীরাই এ খাতের প্রতিদ্বন্দ্বী। এ খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড শুরু হয় ১৯২০-এর দশকে; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংস্থাগুলোর প্রভাব বাড়তে থাকে। এ খাতে নতুন বিনিয়োগকারীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা খাতে দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, মহাকাশবিষয়ক সংস্থা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে রয়েছে।
আমরা বুঝতে পারি, মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণ করার ক্ষমতা এককভাবে কোনো দেশের নেই; তারা সর্বদা অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। এর অর্থ এই নয়, প্রতিটি দেশেরই এ বিষয়ে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনে মনোনিবেশ করা উচিত। একটি দেশ অন্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে এ বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সুফল মিলবে। কিছু দেশ বা ইইউ, সম্ভবত সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে অন্যান্য পরিষেবার তুলনায় এ খাতে অনেক বেশি খরচ করছে, যা তাদের এ বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
বর্তমান বাস্তবতায় প্রতিটি জাতিকে তাদের উপগ্রহগুলো রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ আজকের ডেটাচালিত বিশ্বে, উপগ্রহ হারানো মানে অন্ধ হয়ে যাওয়া। এ প্রেক্ষাপটে মহাকাশ-প্রতিরক্ষার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। এর সঙ্গে স্যাটেলাইটবিষয়ক পরিষেবার মানের বিষয়টিও জড়িত। বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতেও মহাকাশের সাফল্য প্রভাব ফেলতে পারে।
এক সময় সমুদ্র নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা হতো, এরপর দীর্ঘ সময় এ গ্রহ নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা চলেছে; এখন মহাকাশ নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা চলছে। অতীতের মতো এক্ষেত্রেও মাত্র কিছুসংখ্যক কোম্পানি বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে এ বছরও কিছুসংখ্যক বিজয়ীই হবে মহাকাশের নিয়ন্ত্রক।
খালেদ আবু জাহের : সম্পাদক, আল-ওয়াতান আল-আরাবি।
(আরব নিউজ থেকে ভাষান্তর মোহাম্মদ কবীর আহমদ)