
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম
সব্যসাচী ক্রীড়াবিদ ফারহানা এখন কাপড় বিক্রি করেন

ওমর ফারুক রুবেল
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৭ এএম

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার বাজারে ছোট্ট দোকান। থরে থরে সাজানো মেয়েদের পোশাক। বিক্রেতা নারীকে দেখে চমকে উঠি। একসময়ের আলোচিত সাইক্লিস্ট ও কাবাডি খেলোয়াড় ফারহানা সুলতানা শিলা। রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া সাবেক তারকা সাইক্লিস্ট। দীর্ঘ ২৭ বছর ক্রীড়াঙ্গনে কাটিয়েছেন। ক্যারিয়ারে অগণিত সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। দুই চাকার সাইকেলে গড়েছেন রেকর্ড। কাবাডি ম্যাটে লড়ে জিতেছেন আন্তর্জাতিক পদক। কিন্তু ক্ষোভ ও অভিমানে ক্রীড়াঙ্গন ছেড়েছেন ফারহানা। কাপড় বিক্রি করে জীবনযুদ্ধ চলছে তার।
১৯৯৭ সালে সাইকেলের প্যাডেলে পা চালিয়ে ক্যারিয়ার শুরু ফারহানার। খেলেছেন কাবাডিও। পরে কাবাডি ও সাইক্লিং কোচ হয়েছেন। জাতীয় নারী কাবাডি দলের অধিনায়ক ছিলেন টানা ১৩ বছর। ফুটবলও খেলেছেন। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবল দলের প্রথম গোলদাতা তিনি (২০০৪ সাল)। তায়কোয়ান্দোও বাদ দেননি। পেয়েছেন ব্ল্যাক বেল্ট। ফারহানা ২০১৭ সালে অবসর নেন সাইক্লিং থেকে। দীর্ঘ ২২ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করেন জাতীয় সাইক্লিং দিয়ে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পর্যায়ে জিতেছেন ৮০টি স্বর্ণপদক। ২০০০ সালে নয়াদিল্লিতে এশিয়ান আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে জেতেন দুটি করে রুপা ও ব্রোঞ্জ। ২০১৪ এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড সাইক্লিংয়ে জেতেন একটি করে রুপা ও ব্রোঞ্জ। কাবাডিতে রেফারিং কোর্স করেন। ২০১৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন ফারহানা। পেয়েছেন সরকারি সহায়তাও। তারপরও ক্রীড়াঙ্গন ছেড়ে দিয়েছেন।
এই সব্যসাচী ক্রীড়াবিদের কথায়, ‘২০১৮ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমি ডান পায়ে আঘাত পাই। প্রায় একবছর বাড়িতে ছিলাম। ঘরে তিন ছেলের দুজন। স্বামী আগেই ছেড়ে গেছে। কোনো মেয়ে নেই। ঘরের কাজ আমাকেই করতে হতো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ করেছি। ক্রীড়াঙ্গনের কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। কতটা অসহায় অবস্থায় ছিলাম, কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। এক বছর পর আবার ফিরেছিলাম ক্রীড়াঙ্গনে।’
নিজের কষ্টের কথা বলে যান ফারহানা, ‘২০ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। ঘরে আমি আর দুই ছেলে। এক ছেলে বাবার কাছে। দুই ছেলে নিয়ে করোনা মহামারির মধ্যে অনেক কষ্ট করেছি। খেলা ছিল না। আনসারের চাকরিটা ছিল। কেউ খবর নেয়নি।’ সবশেষে তার ওপর হওয়া অবিচারের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন, ‘গত বছর মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি। সেখানে আমাকে বলা হয়েছিল রেফারিং করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে নেওয়া হয়নি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। খেলা চালিয়েই আমি সংসারের খরচ জোগাড় করতাম। আমার সঙ্গে অবিচার হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিই খেলা ছেড়ে দেওয়ার।’
অসুস্থতা থেকে ফিরে অনেকের হাত-পা ধরে গত বছর সরকারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। সেটা ফিক্সড ডিপোজিট। টাকা তুলতে পারেননি। কাপড়ের দোকানের আয় থেকেই তার সংসার চলে। ফারহানা বলেন, ‘ফিক্সড ডিপোজিট থেকে মাসে ১৬ হাজার টাকা আসে। বাকিটা কাপড়ের দোকান চালিয়ে। কী আর করব ভাই, জীবন তো চালাতে হবে।’ সাইক্লিংয়ের ঘোষিত নতুন কমিটিতে সদস্য হিসাবে তার নাম থাকলেও ক্রীড়াঙ্গনে আর নয়, জানান তিনি, ‘আমি হজে যাব। ক্রীড়াঙ্গনে আর নয়।’