-67c9c09a6a62c.jpg)
বুধবার রাতে মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র তার ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ কিছু কীর্তি গড়েছেন। দুই দশকের ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন। তার কয়েকটি ইনিংস শুধু ব্যক্তিগত পোর্টফোলিওই সমৃদ্ধ করেনি, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অংশও হয়ে গেছে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক তার ছয়টি সেরা পারফরম্যান্স—
অল্প বয়সেই পরিপক্বতার ছাপ
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ২০০৭ বিশ্বকাপে মুশফিকুর রহিমের সুযোগ পাওয়া অনেকের কাছে ছিল বিস্ময়ের। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি বুঝিয়ে দেন কেন তাকে দলে টানা হয়েছিল।
১৯২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়ায় তামিম ইকবালের আগ্রাসী ইনিংসের পর তিনি শান্ত থেকে অ্যাঙ্করের ভূমিকা নেন। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক এক জয় এনে দেন। জয়সূচক রানটিও আসে তার ব্যাট থেকে।
শচীনের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির রাতটা নিজের করে নিয়েছিলেন সেদিন
সেদিন শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সব আলো ছিল শচীন টেন্ডুলকারের ওপর। ভারতীয় কিংবদন্তি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শততম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান। কিন্তু ম্যাচ শেষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন মুশফিকুর রহিম।
২৯০ রানের বিশাল লক্ষ্যে বাংলাদেশকে শেষ আট ওভারে ৬৬ রান দরকার ছিল। অধিনায়ক মুশফিক মাত্র ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬ রান করেন, তিনটি ছক্কায় ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেন এবং মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দলকে শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
‘ভায়েরা’কে নিয়ে ইতিহাসগড়া জুটি
বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিল। অল্পেতেই একাধিক উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ ছিল খাদের কিনারে। তবে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক দুই ‘ভায়েরা’ ব্যাট হাতে দলকে উদ্ধার করেন।
মাহমুদউল্লাহর প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ওদিকে ৭৭ বলে ৮৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে মুশফিকও দলকে বড় পুঁজি পেতে সহায়তা করেন। তার ইনিংসে তিনি মারেন আটটি চার ও একটি ছক্কা। সেই ইনিংসের পরে ইংল্যান্ড আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি, বাংলাদেশ পেয়েছিল স্মরণীয় এক জয়, যা দলকে প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি নকআউটে তুলে দেয়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সেরা সে সিরিজ
বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক। তামিম ইকবালের সঙ্গে ১৭৮ রানের জুটির পর তিনি মাত্র ৭৭ বলে ১০৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন।
তিন ম্যাচের সিরিজে তিনি আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস (৬৫ ও অপরাজিত ৪৯) খেলেন, যা বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে সাহায্য করে। ১৬ বছর পর পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো ওডিআই সিরিজে হারানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন মুশফিক।
নিঃসঙ্গ শেরপা
২০১৮ এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ একের পর এক উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। প্রথম ওভারেই লিটন দাস ও সাকিব বিদায় নেন, এরপর হাত ভেঙে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। কিন্তু মুশফিক থেমে থাকেননি।
মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটি গড়েন। তবে এরপর একাই দলকে টেনে নেন। শেষ উইকেটে ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নামা তামিমকে দেখে আরও অনুপ্রাণিত হয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন। ১৪৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ২৬১ রানে পৌঁছে দেন এবং দল জেতে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।
বাংলাদেশের দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি
বাংলাদেশের ওডিআই ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক এখন মুশফিকুর রহিম। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ বলে ঝড়ো শতক হাঁকিয়ে ভেঙে দেন সাকিবের ৬৩ বলের রেকর্ড।
তার ১৪ চার ও দুই ছক্কায় ভরা এই ইনিংস বাংলাদেশকে ৩৪৯ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দেয়, যা এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।