ভারতের রাজনীতি ক্রিকেটকে অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছে

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম

পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্ত এবং সাবেক খেলোয়াড়রা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ ধাপে এসে আরেকটি বড় ধাক্কা খাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। স্বাগতিক পাকিস্তানের হতাশাজনক আসর শেষ হলো আরও এক আঘাতের মাধ্যমে—লাহোরে নির্ধারিত ফাইনাল আর হচ্ছে না।
১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে দীর্ঘ তিন দশক পর প্রথমবারের মতো বড় কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়। যাকে ঘিরে উদযাপন ছিল দেশজুড়ে।
তবে এরপর থেকেই সব কিছু পাকিস্তানের উল্টোরথে চলতে শুরু করে। প্রথম ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয় স্বাগতিকরা। এরপর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয় তারা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটিও বৃষ্টিতে ভেসে যায়, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ।
এই রোববার লাহোরে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও একটি শর্ত ছিল—যদি ভারত ফাইনালে ওঠে, তাহলে ম্যাচ হবে দুবাইয়ে। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সেমিফাইনালে হারিয়ে ভারত ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পরই নিশ্চিত হয়ে যায়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা লড়াই হবে দুবাইয়ে।
ভারত রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তানে খেলতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই পুরো আসরেই তাদের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ফাইনালও হবে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
পাকিস্তান ‘হাইব্রিড মডেল’ মেনে নিয়েছিল এই শর্তে যে, ভবিষ্যতে তাদের দলও ভারতের মাটিতে আইসিসির কোনো ইভেন্ট খেলতে যাবে না। তবে এই চুক্তির ফলে ভারতের ক্রিকেটীয় প্রভাব আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ক্রিকেট ভক্ত আবদুল সামাদ বলেন, ‘আমরা এই চুক্তি মেনে নিয়েছি, তাহলে এত অভিযোগ কেন? যখন আপনার ক্ষমতা থাকে না, তখন মাথা নত করতেই হয়। পাকিস্তানের ক্রিকেট পিছিয়ে পড়েছে, তাই আমাদের আপস করতেই হয়েছে।’
তবে অনেকেই এত সহজভাবে বিষয়টি দেখছেন না। সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ বলেন, ‘ভেন্যুগুলোর উন্নয়নে এত বিনিয়োগের পরও পাকিস্তানে ফাইনাল না হওয়া বড় ধাক্কা। পাকিস্তান বর্তমানে আর্থিক দিক থেকে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, দলীয় পারফরম্যান্সও খারাপ। এটি আমাদের জন্য দ্বিগুণ ক্ষতি।’
পাকিস্তান লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডির তিনটি স্টেডিয়াম উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। অথচ আইসিসির কাছ থেকে স্বাগতিক ফি হিসেবে তারা পাবে মাত্র ছয় মিলিয়ন ডলার।
দেশের আগ্রহও অনেকটাই কমে গেছে। পাকিস্তান দল বিদায় নেওয়ার পর গ্যালারির আসনগুলো ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে, আর বৃষ্টির কারণে তিনটি ম্যাচ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বাতিল হয়েছে। রশিদ লতিফ বলেন, ‘ভারত অনেক উন্নতি করেছে, যা এই টুর্নামেন্টে স্পষ্ট হয়েছে। তবে রাজনীতি ক্রিকেটকে অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছে। যদি ভারত পাকিস্তানে এসে লাহোরে ট্রফি জিতত, তাহলে সেটি দারুণ ব্যাপার হতো।’
তবে তিনি সতর্ক করেন, এই বিভক্তি ক্রিকেটের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ‘এক দল যদি অন্য দেশে না যায় এবং ভবিষ্যতে পাকিস্তানও যদি ভারতে না যায়, তাহলে বিশ্ব ক্রিকেটের বড় ক্ষতি হবে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার।’
সূত্র- এএফপি