মারাদোনার সেলিব্রেশন ‘নকল’ করে কী বার্তা দিলেন নেইমার

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
নেইমারের ৩৩ বছর বয়সে সান্তোসে প্রত্যাবর্তন অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছিলেন। বোদ্ধাদের কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন যে তার সেরা সময় পেরিয়ে গেছে এবং তিনি নিজের পুরোনো ম্যাজিক আর দেখাতে পারবেন না। কিন্তু নেইমার তাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করছেন। তিনি শুধু ফিরেই আসেননি, বরং নিজের পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তার গোল, তার উদযাপন—সবকিছুই একের পর এক সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিচ্ছে। তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, বয়স শুধুই একটি সংখ্যা এবং খেলার প্রতি তার আবেগ ও দক্ষতা এখনো অটুট রয়েছে। এটি সত্যিকার অর্থেই দেখার মতো এক পুনর্জাগরণ।
মারাদোনার ১৯৯৪ বিশ্বকাপের বিখ্যাত উদযাপন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী দৃশ্য। গোলের পর তার নির্ভেজাল আবেগ এবং ক্যামেরার সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মুহূর্তটি কিংবদন্তিতুল্য। অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে গোল করার পর নেইমারের একইরকম উদযাপন যেন সে একই আবেগের প্রতিচ্ছবি। এই উদযাপন দিয়ে শুধু মারাদোনার প্রতি শ্রদ্ধা-ই জানাননি নেইমার, বরং ভক্তদের সঙ্গে তার সংযোগ এর মাধ্যমে আরও গভীর হয়েছে এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে আগের সেই আগুন নিয়েই খেলছেন।
সৌদি আরবের আল হিলালে নেইমারের সময়টা ছিল হতাশাজনক। চোট তাকে ভুগিয়েছে এবং মাঠের বাইরের নানা কর্মকাণ্ড তার ফুটবলের প্রতি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। মনে হচ্ছিল, তার ফুটবলের প্রতি আবেগ ফিকে হয়ে গেছে। এ কারণেই তার সান্তোসে ফিরে আসা এতটা তাৎপর্যপূর্ণ। এটি কেবলমাত্র তার জন্মস্থানেই ফিরে আসা নয়, এটি এমন এক ক্লাবে ফিরে আসা, যা তার প্রতিভার আঁতুড়ঘর এবং তার ক্যারিয়ারের ভিত হিসেবে কাজ করেছিল। এটি যেন তার শিকড়ে ফিরে যাওয়া, সেই ভালোবাসা ও আনন্দ পুনরায় খোঁজার চেষ্টা, যা একসময় তাকে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের কাতারে নিয়ে গিয়েছিল।
২০২০ সালে কোভিড-বিঘ্নিত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে নেইমারের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। পিএসজি বনাম বায়ার্ন মিউনিখের সেই ম্যাচে তিনি একাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, পুরো দলের দায়িত্ব তার কাঁধেই। কিন্তু, তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বায়ার্নের শক্তিশালী স্কোয়াডের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। যারা ম্যাচটি দেখেছেন, তারা জানেন নেইমার সেই শিরোপার জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন। পরাজয়ের পরও সেই পারফরম্যান্স তার অসাধারণ প্রতিভার প্রমাণ ছিল এবং যখন তিনি পুরোপুরি মনোযোগী হন, তখন তিনি কী করতে পারেন, সেটির স্মারক হয়ে থাকবে।
এর আগে বার্সেলোনার হয়ে মেসি, সুয়ারেজের সঙ্গে নেইমারের সেই কম্বিনেশন কিংবদন্তিতুল্য। এই ত্রয়ীর কাঁধে চড়ে বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় ছিল এক দুর্দান্ত কীর্তি এবং নেইমার ছিলেন সেই দলের প্রাণ। বিদ্যুৎগতি সম্পন্ন এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি ছিলেন নেইমার। কিন্তু এরপরের বছরগুলোতে নিজের সেই মান ধরে রাখতে পারেননি তিনি। চোট, বিতর্ক, এবং অপূর্ণ সম্ভাবনার ছায়া তার পথকে আচ্ছন্ন করেছে।
এটি একপ্রকার মিশ্র অনুভূতি দেয়—সে সময়ের শীর্ষে থাকা নেইমারকে মনে পড়ে এবং প্রশ্ন জাগে, কী হতে পারত? তবে হয়তো সান্তোসে তার প্রত্যাবর্তন একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে তিনি আবারও সেই আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারবেন এবং সবাইকে মনে করিয়ে দেবেন, তিনি আসলে কে ছিলেন।