-67c57fc289efc.jpg)
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দিকে তাকালে আপনি হয়তো ভেবে বসতে পারেন অধিনায়কের কাজটা বোধহয় টস করা পর্যন্তই। আদতে মোটেও তেমনটি নয়। একজন অধিনায়কের কাজ কোনোভাবেই টস করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। মাঠে নামার আগে দল গড়া, একাদশে কাকে রাখা যেতে পারে, উইকেট বুঝতে পারা, টস জিতলে কী করতে হবে, প্রতিপক্ষের কোন ব্যাটারের বিরুদ্ধে কাকে বোলিংয়ে আনা যায়, ফিল্ডিং পজিশন ঠিক করা; সর্বোপরি মাঠে দলকে সাহসের সঙ্গে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই রাখা। এসবই একজন আদর্শ অধিনায়কের গুণাবলীর অংশ।
সেই বিবেচনায় বর্তমান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে আপনি কত নাম্বার দেবেন সেটা আপনার ওপর নির্ভর করছে। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে এমন বহু অধিনায়ক এসেছেন যারা এখনও নেতৃত্বগুণে মানুষের হৃদয়ে স্থান ধরে রাখতে পেরেছেন। তাই অধিনায়ক প্রসঙ্গ আসলেই ঘুরে ফিরে আপনাকে তাদের নাম বলতেই হবে। সে সব কিংবদন্তি অধিনায়কদের নিয়েই এই প্রতিবেদন।
ক্লাইভ লয়েড (১৯৭৫-৮৫)
অধিনায়কের প্রসঙ্গ উঠলে ক্লাইভ লয়েডকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই আপনার। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তার অধীনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল হয়ে উঠেছিল বিশ্বসেরা। লয়েডের নেতৃত্বে টানা দু’বার বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুযোগ ছিল হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তোলার। তবে সেবার কপিল দেবের ভারত সেটি হতে দেয়নি। লয়েডের অধীনে ৮৪ ম্যাচ খেলে ৬৪ ম্যাচেই জয় তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেখানে তার নেতৃত্বে জয়ের হার ৭৭.৭১ শতাংশ।
ইমরান খান (১৯৮২-১৯৯২)
নেতৃত্বের প্রসঙ্গ আসলে ইমরান খানকে সেখানে না রেখে উপায় নেই। গোটা দলকে এক সুতোয় গেঁথে বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তান ক্রিকেটকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিলেন ইমরান। মাঝারি মানের একটা দলকে বিশ্বসেরা বানিয়ে ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জিতেয়ে নেতৃত্বের ইতি টেনে ছিলেন ইমরান। নেতৃত্ব ছাড়ার আগে পাকিস্তানকে ১৩৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৭৫ ম্যাচে জয় পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। যা করে দেখাতে পারেনি আর কোনো পাকিস্তানি। পরবর্তীতে তার নেতৃত্ব গুণ বিকশিত হয়েছে রাজনীতির ময়দানেও। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে কোনো একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনন্য নজিরও স্থাপন করেছেন তিনি।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা (১৯৮৮-১৯৯৯)
১৯৯৯ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার জন্য অধিনায়কত্ব ছাড়া ও পরে অবসরে যেতে হলেও অর্জুনা রানাতুঙ্গার উত্থানটা ছিল স্বপ্নের মতো। তার অধীনে শ্রীলংকা হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরুদ্ধ। বিশ্বকে চমকে দিয়ে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা। ক্রিকেট পরবর্তী জীবনে রানাতুঙ্গাও শ্রীলংকায় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাফল্য পেয়েছেন। তবে ক্রিকেটের মাঠে এখনও রানাতুঙ্গা এক আদর্শের নাম লংকানদের কাছে। তার অধীনে ১৯৩ ম্যাচে ৮৯ জয় পেয়েছিল শ্রীলংকা।
স্টিফেন ফ্লেমিং (১৯৯৭-২০০৭)
কোনো ট্রফি জিততে পারেননি। তবে এখনও তার পরিসংখ্যান বলছে নিউজিল্যান্ড তো বটেই বিশ্বসেরা ওয়ানডে অধিনায়কদেরও একজন ফ্লেমিং। ২১৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৯৮ ম্যাচে জয় এনে দিয়েছিলেন ফ্লেমিং। তার অধীনেই নিউজিল্যান্ড হয়ে উঠেছিল বিশ্বসেরা দলের একটি।
এমএস ধোনি (২০০৭-২০১৮)
চাপের মুহূর্তেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে ম্যাচ শেষ করে আসা। বোলারদের ছোট একটা উপদেশ কিন্তু খুব কার্যকর। নেতৃত্ব গুণের যেকোনো বিবেচনায় আপনি লেটার মার্ক দিতে বাধ্য হবেন ধোনিকে। ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত যতজন অধিনায়ক এসেছে তাদের মধ্যে ধোনি সব দিক বিবেচনাতেই সেরাদের কাতারে থাকবে। ধোনির অধীনে সবচেয়ে বেশি বিশ্বমঞ্চে সাফল্য পেয়েছে ভারত। ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ আইসিসি ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে ভারত। ধোনির নেতৃত্বে ভারত মোট ২০০ ম্যাচ খেলেছে। যেখানে জয় পেয়েছে ১১০ ম্যাচে। তবে বিশ্বমঞ্চে সাফল্য বিবেচনায় ধোনি সেরাদের সেরা হিসেবেই থাকবে।
রিকি পন্টিং (২০০২-২০১২)
বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদটা স্টিভ ওয়াহর অধীনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপেই পেয়েছিলেন রিকি পন্টিং। তবে সেই স্বাদ ভুলতে পারেননি তিনি। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়াকে দুবার (২০০৩, ২০০৭) বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন পন্টিং। রানের খেলা ক্রিকেটে পন্টিং হয়ে উঠেছিলেন বোলাদের মাথা ব্যথার প্রধান কারণ। শুধু রান তোলায় নয় ফিল্ডিং সাজানো কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার রণকৌশল সাজানোতেও পারদর্শী ছিলেন পন্টিং। মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন। ওয়ানডে নেতৃত্বে সেই পরিসংখ্যানও কথা বলে তার পক্ষেই। পন্টিংয়ে অধীনে ২৩০ ম্যাচ খেলে ১৬৫ ম্যাচে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। যা অধিনায়ক হিসেবে সেরা।