Logo
Logo
×

খেলা

জাতীয় ক্রীড়ানীতির সংস্কার হবে কবে?

Icon

মোজাম্মেল হক চঞ্চল

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম

জাতীয় ক্রীড়ানীতির সংস্কার হবে কবে?

ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের নানা জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছ। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

যেন লক্ষ্যহীনভাবে চলছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। একের পর এক ক্রীড়া স্থাপনা তৈরি হয়ছে; কিন্তু খেলা নেই, খেলোয়াড়ও নেই। পরিকল্পনা না থাকায় সব কিছু স্থবির হয়ে রয়েছে। কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বাংলাদেশে খেলাধুলা চলছে। ক্রীড়া উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে।

খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি প্রতিষ্ঠান-জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বিকেএসপি ও ক্রীড়া পরিদপ্তর থাকলেও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। বিকেএসপির রয়েছে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি। ট্যালেন্ট বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ক্রীড়া পরিষদ বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিভা বাছাই করে। ক্রীড়া পরিদপ্তরের রয়েছে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা।

ক্রীড়া পরিষদ ও পরিদপ্তর প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ক্রীড়া সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করে। কিন্তু কোনো মনিটরিং সেল নেই। ক্রীড়া উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, তার জবাবদিহিতা নেই। দেশের কত ভাগ লোক খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত কিংবা ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কত? উত্তর অজানা। ফুটবল ফেডারেশনের কথাই ধরা যাক। তাদের কাছে তথ্য নেই, কোন কোন জেলায় ফুটবল লিগ হয়, আদৌ হয় কি না। রেজিস্টার্ড ফুটবলারের সংখ্যা কত? প্রায় সব ফেডারেশনের অবস্থা ফুটবলের মতোই। অন্য সব দেশ যখন এগোচ্ছে তখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন শুধুই পেছাচ্ছে।

১৯৯৮ সালে সবশেষ জাতীয় ক্রীড়া নীতি পাশ হয়েছিল। ১৯ বছর পর ২০১৮ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নতুন করে জাতীয় ক্রীড়ানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। ক্রীড়া নীতি প্রণয়নের জন্য ২০১৮ সালে সরকারি কর্মকর্তা ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন কয়েক দফা বৈঠক করে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরিও করেছিল। কিন্তু কমনওয়েলথ সচিবালয়ের গেড়োতে আটকে যায় ক্রীড়া নীতিমালা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নীতিমালা তৈরির জন্য কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সহযোগিতা চেয়েছিল। সেই সহযোগিতা দিতে লন্ডন থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকের পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। কমনওয়েলথ সচিবালয় ক্রীড়া নীতিমালা তৈরির জন্য বাংলাদেশে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছিল। কনসালটেন্ট নিয়োগের পর নীতিমালা প্রণয়নে প্রায় বছরখানেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

১৯৮৯ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এইচএমএ গাফফার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথম ক্রীড়ানীতি ঘোষণা করেন। ওই বছরই ১২ জুলাই তা কার্যকর হয়। ২৫টি অনুচ্ছেদের ওই নীতির মধ্যে পাঁচটি ধারা ছিল সুনির্দিষ্ট। বাকি সব কিছুই দায়সারা, উদ্দেশ্যহীন ও বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল। প্রথম ক্রীড়ানীতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ডিসিপ্লিনগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ। দৈহিক কাঠামো, আবহাওয়া, জনপ্রিয়তা ও মেধার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে খেলাধুলাকে তিনটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাগ করা হয়। প্রথম তালিকায় ছিল ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, কাবাডি ও দাবা। দ্বিতীয় তালিকায় স্থান পায় ক্রিকেট, হকি, শুটিং, হ্যান্ডবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ও জিমন্যাস্টিক। তৃতীয় তালিকায় জায়গা পায় বাস্কেটবল, বক্সিং, শরীরগঠন, সাইক্লিং, জুডো, ভারোত্তোলন ও কুস্তি। ক্রীড়ানীতিতে ছিল স্কুলের পাঠ্যক্রমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া সম্পর্কে সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক থাকবে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ১০০ নম্বরের একটি ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে। ক্রীড়া সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিদিন টেলিভিশনে ৩০ মিনিট দেশি ও বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করা। প্রতিভাবান ও কৃতী ক্রীড়াবিদদের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে শতকরা পাঁচভাগ চাকরির কোটা সংরক্ষণ করা। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, শারীরিক শিক্ষার জন্য ১০০ নম্বর চালু ছাড়া ক্রীড়ানীতির কোনো অংশই বাস্তবায়ন হয়নি।

১৯৮৯ সালের ক্রীড়ানীতিকে ভিত্তি করে ১৯৯৬ সালের জাতীয় ক্রীড়া সম্মেলনের সুপারিশের আলোকে ক্রীড়ানীতিতে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করা হয়। ১৯৯৮ সালে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে ২৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তিত ক্রীড়ানীতি অনুমোদিত হয়। এ সংশোধিত নীতিতে তিনটির পরিবর্তে একটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ তালিকায় থাকা ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, শুটিং, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, দাবা ও ভলিবল সর্বোচ্চ আনুকূল্য লাভের জন্য বলে বিবেচিত হয়।

প্রতিটি বিভাগে একটি করে শারীরিক শিক্ষা কলেজ স্থাপন, ক্রীড়া ক্ষেত্রে অনুদানের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আয়কর মুক্ত করার বিধান রাখা হয় নীতিতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ও ক্রীড়া পরিদপ্তরকে একীভূত করে শক্তিশালী ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত করায় একটি নির্দিষ্ট দিনকে ক্রীড়া দিবস হিসাবে পালন করা, ক্রীড়ানীতি বাস্তবায়ন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জাতীয় ক্রীড়া উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব রাখা হয়। অথচ ১৯৯৮ সালের ক্রীড়ানীতির এসব অনুচ্ছেদের কেবল ক্রীড়া দিবস ছাড়া আর কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি।

জাতীয় ক্রীড়ানীতির সবশেষ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর্যালোচনার মাধ্যমে সময়োপযোগী পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ২০০৩ সালে ক্রীড়ানীতির সংযোজন-বিয়োজন হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। পেরিয়ে গেছে ২১ বছর। ২০১১ সালের ১৫ মে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) ক্রীড়া উন্নয়নে একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রণয়ন করে। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সংশিষ্টদের কাছে পাঠানো ওই প্রস্তাবনায় ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা ছিল। কিন্তু বিওএ’র ওই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৩ বছর ধরে অন্ধকারেই পড়ে রয়েছে উন্নয়ন পরিকল্পনাটি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম