-67a1d71032145.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
‘রাতের সব তারাই আছে, দিনের আলোর গভীরে’; শোয়েব মালিকের মধ্যেও কি এখনও আছে সেই প্রাণশক্তি। যেই শক্তিতে ঘায়েল হতো প্রতিপক্ষ। আছে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে দলকে জেতানোর সেই রসদ? হয়তো আছে। তবে বয়স বলেও তো একটা বিষয় আছে। যা ক্ষণে ক্ষণে কঠিন বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়; ‘যতই তারুণ্য ধরে রাখুন না কেন; বয়সের ছাপ আপনার চেহারায় না পড়লেও আপনার শক্তি সামর্থ্যে তা প্রতীয়মান হবেই।’
পাকিস্তানের কিংবদন্তি তারকা শোয়েব মালিক এখনও ক্রিকেটে আছেন। তবে ২২ গজে তার থাকা না থাকার মধ্যে এখন আর খুব বেশি পার্থক্য নেই। তরুণদের বিড়ে বুড়ো নিতিয়ে যাওয়া এক ক্রিকেটার তিনি। যার ক্রিকেটের প্রতি গভীর অনুরাগ আছে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কঠিন মানসিকতা আছে। তবে আগের সেই শক্তি নেই।
একক নৈপুণ্যে ব্যাট কিংবা বল হাতে দলকে জিতিয়ে দেবেন সেই সামর্থ্য নেই। গোটা বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়ালেও এখন আগের সেই কদর নেই। ফিল্ডিংয়ে আগের সেই ক্ষীপ্রতা নেই। যেন মাঠে নিস্তেজ এক বাঘ। যার হুঙ্কারে এখন আর প্রতিপক্ষ ভয় পায় না।
অথচ, এক সময়ের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন শোয়েব মালিক। লম্বা সময় পাকিস্তান ক্রিকেটকে সার্ভিস দিয়েছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে ক্রিকেটে পা রাখার পর দুই দশকের বেশি সময় পাকিস্তান দলকে সার্ভিস দিয়েছেন। পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন ৩৫টি টেস্ট, ২৮৭টি ওয়ানডে ও ১২৪টি টি-টোয়েন্টি। যেখানে তার রান যথাক্রমে ১৮৯৮, ৭৫৩৪ ও ২৪৩৫। অন্যদিকে বোলিংয়ে তার উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে- ৩২, ১৫৮ ও ২৮টি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু কীর্তিও আছে তার নামের পাশে। ওয়ানডেতে ১০০০ রান ৫০ উইকেটের সঙ্গে ৫০টি ক্যাচ নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। এছাড়াও ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান ও ফিল্ডিংয়ে ৫০টি রানআউট করা একমাত্র ফিল্ডারও তিনি। টি-টোয়েন্টিতে তিনবার সিরিজসেরা হয়েছেন শোয়েব। যা টি-টোয়েন্টিতে দশম সর্বোচ্চ। এর বাইরে টি-টোয়েন্টিতে টানা ৬৯ ইনিংসে শূন্য রানে আউট না হওয়ার কীর্তি আছে তার।
এর বাইরে টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট মিলিয়ে তৃতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক মালিক। টি-টোয়েন্টিতে ৫৫১ ম্যাচে ৫১০ ইনিংস ব্যাট করে তার রান সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৯২। যেখানে ফিফটি আছে ৮৩টি। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রান ক্রিস গেইলের। ৪৬৩ ম্যাচে গেইলের রান ১৪ হাজার ৫৬২। দ্বিতীয় অবস্থানে কাইরন পোলার্ড। এই ক্যারিবীয় ব্যাটারের রান ১৩ হাজার ৫৩৭। অর্থাৎ এই ফরম্যাটে গ্রেটদের কাতারে শোয়েব।
তবে শোয়েব তার সেই সোনালি সময় পেরিয়ে এসেছেন বহু আগেই। সবশেষ মৌসুমে বিপিএলে খেললেও এবার তাকে রাখেনি ফরচুন বরিশাল। দল পাননি অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও। তবে এখনও ক্রিকেটটা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সবশেষ পাকিস্তানের ঘরোয়া চ্যাম্পিয়ন্স টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেছেন তিনি। তবে সেখানেও খুব একটা সফল হতে পারেননি তিনি। তার আগে খেলেছেন বুড়োদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ লিজেন্ডস লিগে। এতেই বোঝা যায় তরুণের সঙ্গে খেলার পাঠ শেষ হয়ে গেছে শোয়েবের।
বুড়োদের লিগে খেললেও অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণা দেননি শোয়েব। তবে মাঝে এই তারকা জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তানের হয়ে আর খেলার ইচ্ছে নেই তার।’ সে হিসেবে মিরপুরে ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটিই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
তাছাড়া কদিন আগেই ৪৩-এ পা দেওয়া শোয়েব নিশ্চয় এখন তরুণদেরকেই জায়গাটা ছেড়ে দিতে চাইবেন। বাস্তবতা মেনে নেবেন। আর এর মধ্যে তো তার ভাতিজা মোহাম্মদ হুরাইরার পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকটাও হয়ে গেছে। উত্তরসূরি হুরাইরার মধ্যেই না হয় নিজের ছায়া খুঁজবেন শোয়েব। তবে তিনি চাইলেই দীর্ঘ ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা তরুণদের গড়ে তোলার কাজে লাগাতে পারেন। মেন্টর কিংবা কোচ হিসেবে দিক নির্দেশনা দিতে পারেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের। যারা কিনা ২২ গজে পা রাখবে কিংবদন্তি শোয়েবকে আদর্শ মেনে।