Logo
Logo
×

খেলা

বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাজ্জাদুল আলম ববি

৪ মাসে ৯ বার বিদেশ সফরে গেছেন কেউ কেউ, এর জবাবদিহি করতে হবে

আবদুল মজিদ চৌধুরী

আবদুল মজিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

৪ মাসে ৯ বার বিদেশ সফরে গেছেন কেউ কেউ, এর জবাবদিহি করতে হবে

ছবি ও গ্রাফিক্স: যুগান্তর

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক সাজ্জাদুল আলম ববি। দেশের ক্রিকেটের গৌরবজনক ওয়ানডে ও টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির আগে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টানা ক্রিকেট বোর্ডে ছিলেন তিনি। মাঝখানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সরে যেতে হলেও ২০০৭ সাল থেকে পরিচালক ছিলেন। সর্বশেষ ফারুক আহমেদের বর্তমান বোর্ড দায়িত্বগ্রহণের আগ পর্যন্ত বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এ সংগঠক।

বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ থেকে অব্যাহতি, রাসেল ডমিঙ্গোর বিদায় থেকে শুরু করে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রত্যাবর্তন, সাকিব আল হাসানবিহীন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনের সুপারিশ এবং বর্তমান বোর্ডের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন যুগান্তর অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুল মজিদ চৌধুরীআজ থাকছে তিন পর্বের বিশেষ এ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব।

যুগান্তর: বিসিবিতে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছিলেন আপনি, এটা একটু ভেঙে বলবেন কি? আপনি বলেছিলেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে হওয়া মিটিংয়ে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ তখনো আপনি বোর্ড পরিচালক। 

সাজ্জাদুল আলম ববি: বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। আমাকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সচিব ফোন করে বললেন, সরকার চাচ্ছে আপনি আপনার কাউন্সিলরশিপ ও ডিরেক্টরশিপ থেকে অতিসত্বর পদত্যাগ করুন। আমি আর কোনো কিছু জিজ্ঞেস করিনি। আমি বলেছি, দেখেন আমি ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচিত। আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে ক্রিকেটের কাজ করার জন্য, আমি সেই ম্যান্ডেট পূর্ণ করার জন্য থাকব। আমি বলেছি, আমাকে জোর করবেন না। আমি পদত্যাগ করব না। কিন্তু এরপর তারা যেটা প্রক্রিয়া করার সেটা করেছে। যদিও সেটা অবৈধ।

যুগান্তর: তারপর কি হলো?

সাজ্জাদুল আলম ববি: পরে আমি কোর্টেও যেতে চেয়েছিলাম। আমার সহকর্মীরাই আমাকে উপদেশ দিলেন, এ মুহুর্তে করো না। এতে আমাদের অসুবিধা হবে। আমি বললাম, অসুবিধা হলে আমার হবে, তোমাদের হবে না। কিন্তু তার পরও তাদের অনুরোধটা আমার রাখতে হয়েছিল। সে জন্য আমি আইনগতভাবে আর এগোয়নি। 

যুগান্তর: সহকর্মী বলতে বিসিবির বাকি পরিচালক যারা ছিলেন, তাদের কথা বলছেন?

সাজ্জাদুল আলম ববি: হ্যাঁ। তবে এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য নতুন নয়। কয়েকবার ঘটনা ঘটেছে।  ২০০০ কি ২০০১ সালের দিকে। তখন আমি বিসিবির পরিচালক। আমাকে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত করা হলো নিউজিল্যান্ড সফরে টিম ম্যানেজার হিসেবে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই ফলশ্রুতিতে গভর্মেন্ট অর্ডার (জিও) হয়। টিকিট হয়, ভিসা হয়। আমি টিমের সঙ্গে মিটিং করি। তখন টেলিভিশন ছিল না, শুধু বিটিভি ছিল। পত্রপত্রিকায় দুয়েকটা বক্তব্যও রাখি। নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার তিন-চার দিন আগে আমাকে জানানো হয়, আপনি যেতে পারছেন না।  সরকার চাচ্ছে না আপনি যান। আমি আশ্চর্য হইনি তবে কষ্ট পেয়েছিলাম। ঘুরেফিরে এখন আসলো আবার একই প্রক্রিয়া। একই জিনিস বারবার চলে আসছে। আশা করি, এ ধরনের দৃষ্টান্ত একদিন আমাদের ক্রীড়াঙ্গন থেকে উঠে যাবে। এটুকুই আমার আশা।

যুগান্তর: আইসিসির কোনো প্রতিনিধি এ নিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বা আপনি তাদের কিছু জানিয়েছিলেন?

সাজ্জাদুল আলম ববি: এটাও আমাকে অনেকে বলেছিলেন। আমি জানতাম এটা করলে বিরাট হইচই পড়ে যেত। আইসিসিও নিশ্চয়ই কিছু একটা তাদের পদক্ষেপ নিতে হতো। কিন্তু কি নিত জানি না। কিন্তু আমি জানি, তারা (আইসিসি) এটা জানতে চাচ্ছিলেন বুঝতে চাচ্ছিলেন। আমি চিন্তা করলাম, আমরা এত কষ্ট করে দেশটাকে— প্রথমে আইসিসির ওয়ানডে, তারপর টেস্ট স্ট্যাটাস পেলাম। এটার সঙ্গে কতটুকু আমার অবদান জানি না। তবে প্রত্যেকটা পদক্ষেপের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম। সেখানে আমি একটা চিঠি দিয়ে তাদের জানানোর ফলে বাংলাদেশে ওই স্ট্যাটাসে আবার কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ুক, এটি কিন্তু আমি চাইনি। এটা আমি মেনে নিতে পারি না। এটার কথা চিন্তা করেই আমি আর ওই পথে যাইনি। আমি মনে করি, আমি ঠিকই করেছি। যেটার বিচার হওয়া উচিত, সেগুলো নিশ্চয়ই একদিন হবে।

যুগান্তর: সরকার পতনের পর আড়ালে চলে যাওয়া বোর্ড পরিচালকদের সমালোচনা করে বর্তমান পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘তারা ক্রিকেটের প্রকৃত সেবক ছিলেন না। তাদের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল’। গত বোর্ডের নীতিনির্ধারক হিসেবে এ  সমালোচনা আপনি কীভাবে দেখেন?

সাজ্জাদুল আলম ববি: আমি আসলে কোনো নাম ধরে বলতে চাই না। আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি। আমার সঙ্গে সেই সময় জালাল ইউনূস ছিলেন। তাকেও পদত্যাগ করতে বলা হয়। উনি পদত্যাগ করে সরে যান। এরা কি এই অঙ্গনে অচেনা কোনো মানুষ? নাকি নিজেদের আখের গোছাতে চলে আসছিল? আমরা তো বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। চার মাসে ৯ বার কিন্তু বিদেশ যাইনি আমরা। এটা কিন্তু লক্ষণীয়। এটা যার বোঝার তিনি নিশ্চয়ই বুঝে নেবেন। চার মাসের মধ্যে ৯ বার ট্যুরে গেছেন কেউ কেউ। এগুলোও জবাবদিহি করতে হবে। এটুকুই যেন ব্যক্তিবিশেষ মনে রাখেন।

যুগান্তর: এবার একটু পেছনে যাই। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু বিশ্বকাপে আমরা ভরাডুবি দেখলাম। ব্যর্থতা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন হলো, কিন্তু এই প্রতিবেদন তখনকার বোর্ড গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেনি, এটার দায় দেখেন?

সাজ্জাদুল আলম ববি: না, এটা কিন্তু আমি মনে করি না। যারা তদন্ত কমিটিতে ছিলেন তারা আমাদের সহকর্মীই ছিলেন। প্রকাশ না পাক এমন কোনো সচেতন উদ্দেশ্য ছিল না তাদের। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। পরে এখন তো নতুন বোর্ড আছে। ইচ্ছে করলে তারা তো প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু তারাও তো করেননি। এটা প্রকাশ হওয়া উচিত। কী হয়েছিল তা মানুষের জানা উচিত। এই স্বচ্ছতাটা থাকা উচিত। আমি আশা করি বর্তমান বোর্ড সেভাবে দেখবেন। 

যুগান্তরের সঙ্গে আলাপে সাজ্জাদুল আলম ববি

যুগান্তর: আপনাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বোর্ড ভেঙে গেল। পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনারা কী আঁচ করতে পেরেছিলেন চলমান বোর্ড আর টিকবে না। আপনাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল? 

সাজ্জাদুল আলম ববি: আমি কষ্ট পাই, এটা পীড়াদায়ক। আপনি অফিসে যেতে পারেন না বা বাসায় সমস্যা অথবা দেশে নেই। তাহলে কি আপনার পদ চলে যাবে? এটা তো হওয়া উচিত নয়।  এই যে বাদ বাকি পরিচালকদের দেখানো হলো, তিনটা মিটিংয়ে যেতে না পারায় বাদ। বাকি পরিচালকদের পদ শূন্য হলো। এটা যে উদাহরণ হয়ে গেলো, এটা যে সামনে ফিরে আসবে না তা বলা যাবে না। এটা জোর করে দেখানো হয়েছে। এই বোর্ডের মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। উচিত ছিলো সেটা চালিয়ে যাওয়া। ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ২০২৫ সালের অক্টোবরে যদি নির্বাচন হতো তখন পরিবর্তনগুলো আসতো, তখন সেটা ভালো উদাহরণ হতো। আপনি তাদের ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না করতে পারেন। কিন্তু তারা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এসেছিলেন। তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে দেওয়া দরকার ছিল। তাহলে এখানে একটা উদাহরণ হয়ে থাকতো। আমি একটা অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি, এই প্রক্রিয়াটা যেভাবে করা হলো এটা ন্যক্কারজনক। এটা মনের মধ্যে রয়ে যাবে। আমাদের ক্রিকেট এটা কি এভাবেই চলবে? এটা অগ্রহণযোগ্য। এভাবে হওয়া উচিত না। 

যুগান্তর: কিন্তু সংবাদমাধ্যমে বোর্ডের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নানাবিধ অভিযোগ এসেছে ।

সাজ্জাদুল আলম ববি: দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে, তাহলে সেগুলোর তদন্ত করা হোক। বিচার হোক। কোর্ট কাছারি হোক। মুখে মুখে যদি বলি, উনার বিরুদ্ধে এরকম পেয়েছি, এরকম শুনেছি; এভাবে দেশ চলে না। যদি সেরকম তথ্য উপাত্ত থেকে থাকে তাহলে অ্যাকশন নিক। অ্যাকশন নিয়ে নেওয়া হোক। অ্যাকশন নিয়েই করুক। প্রমাণ ছাড়াই আগে থেকে অ্যাকশন নিয়ে নিচ্ছি। এটা তো ঠিক না। এই উদাহরণ ন্যক্কারজনক একটা প্রক্রিয়া হয়েছে এবার, এটা মনের মধ্যে রয়ে যাবে অনেকেরই। এটার যে আবারও পুনরাবৃত্তি হবে না, সেটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম