ফ্রি কিক থেকে কার্লোসের কীর্তি
যে গোলে আজও মন্ত্রমুগ্ধ ফুটবল বিশ্ব
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
ফুটবল ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত থাকে, যা শুধুমাত্র একটি গোলের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠে— জন্ম দেয় অনন্য রহস্য, বনে যায় বিস্ময়ের বিষয়।
১৯৯৭ সালের ৩ জুন, ব্রাজিল বনাম ফ্রান্সের এক সাধারণ ম্যাচে ঘটে গিয়েছিল এমনই এক মুহূর্ত। সে মুহূর্ত ফুটবলপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে আজও। লিওনে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে রবার্তো কার্লোস এমন একটি ফ্রি-কিক নেন, যা কেবল ফুটবলের ইতিহাসেই নয়, বিজ্ঞানের জগতেও জায়গা করে নেয়।
ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিল ফ্রি-কিকের সুযোগ পায়। বল ছিল গোলপোস্ট থেকে প্রায় ৩৫ মিটার দূরে। স্বাভাবিকভাবে এত দূর থেকে সরাসরি গোল করার সম্ভাবনা খুবই কম।
কিন্তু কার্লোস সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন। তিনি বলের ডানদিকে নিচু কোণে পা রাখলেন, প্রচণ্ড গতিতে শট করলেন, আর বল ছুটল মাঠের ডানপ্রান্ত দিয়ে। খালি চোখে মনে হচ্ছিল বলটা বেরিয়ে যাচ্ছে বারপোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই বল বাঁ দিকে বাঁক নেয়, ফ্রান্সের গোলরক্ষক ফ্যাবিয়েন বার্তেজকে হতভম্ব করে দিয়ে জালে জড়ায় বলটা।
সেই গোল এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল যে একে বলা হয় ‘দ্য ইম্পসিবল ফ্রি-কিক’। ইতিহাসেরই সেরা ফ্রি কিক গোল কি না এটি, সে আলোচনাও হয়েছে বেশুমার।
কিন্তু কীভাবে সম্ভব হয়েছিল এই অসাধারণ গোল? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের এক চমৎকার নীতিতে, যাকে বলা হয় ‘ম্যাগনাস এফেক্ট’।
নিউটনের প্রথম গতি সূত্র অনুযায়ী, একটি বস্তু একই গতিপথে চলতে থাকবে, যতক্ষণ না অন্য কোনো বল প্রয়োগ করা হয়। রবার্তো কার্লোস যখন বলটি মারলেন, তখন তিনি তাকে শুধুমাত্র গতি দেননি, বরং বিশেষভাবে ঘূর্ণনও দিয়েছিলেন।
এতে একপাশে বাতাসের গতি বলের বিপরীত দিকে চলতে থাকে, আর অপর পাশে একই দিকে। ফলে এক পাশে বায়ুচাপ বেশি ও অন্য পাশে কম হয়ে যায়, যা বলকে বাঁক নিতে বাধ্য করে। এটাই ম্যাগনাস এফেক্ট, যা বলটিকে অসম্ভব কৌণিক গতিপথে বাঁক নেওয়ার সুযোগ দেয়।
ফ্রান্সের গোলরক্ষক বার্তেজের সামনে তখন শুধুই হতাশা। বল যখন জালে প্রবেশ করে, তখন তার মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল, এমন গোল তিনি কোনোদিন দেখেননি। ফুটবলের এই মুহূর্তটি আজও ভক্তদের মনে মুগ্ধতার সৃষ্টি করে।
সেই গোলের রহস্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাও পাওলোর রবার্তো কার্লোস ফিজিক্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক লুইস ফার্নান্দো ফন্টানারি বলেছিলেন, ‘যদিও পদার্থবিজ্ঞান পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারে বলের গতিপথ, তবে সেই সময়ের সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি—কিকের শক্তি, বলের ওপর আঘাতের স্থান এবং গোলের দূরত্ব এতটাই বিরল ছিল যে আমরা এটিকে অলৌকিক বলতেই পারি।’