অনিয়মের গ্রাসে ‘অন্যরকম’ বিপিএল, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিগের তালিকায় নাম
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরুর আগে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল, এবারের টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে ‘অন্যরকম’। কীভাবে অন্যরকম সে প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি পেয়ে থাকেন, তবে আপনি সৌভাগ্যবান। কারণ সাধারণ দর্শক থেকে শুরু থেকে বিশ্লেষকরাও ‘অন্যরকম’-এর ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাচ্ছেন না। অন্যরকম শব্দটি ইকো হয়ে ‘অনিয়ম’ হিসেবে ফিরে আসছে।
বিপিএলের সবচেয়ে পুরোনো রোগের নাম পারিশ্রমিক জটিলতা। এই টুর্নামেন্টের শুরুর লগ্ন থেকেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর গড়িমসি আর বোর্ডের ফাঁকা বুলিতে ক্রিকেটাররা তো অতিষ্ঠই, সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও এই ঘুণে ধরা ‘সংস্কৃতি’ নিয়ে বিরক্ত।
দীর্ঘকাল পর বিসিবির শীর্ষপদে পরিবর্তন এসেছে। বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলেরও খোলনলচে পাল্টে গেছে। কিন্তু পারিশ্রমিক জটিলতা নামের সেই পুরোনো রোগ এখনো বিপিএলের শরীরে বাসা বেঁধে রয়েছে। এখনো ক্রিকেটারদের বেতনের জন্য অনুশীলন বর্জন করতে হয়, সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে চাঁছাছোলা সমালোচনার পর হুঁশ ফেরে দায়িত্বশীলদের।
এছাড়া টিকিট নিয়ে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে চরম অব্যবস্থাপনার দেখা মিলেছিল, যার ফলে মিরপুর স্টেডিয়ামে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
তবে সেই অব্যবস্থাপনা বিসিবি কিছুটা সামাল দেওয়ার পর ক্রিকেটপ্রেমীরা যখন মাঠের খেলার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন, তখনই হাজির হলো পারিশ্রমিক ইস্যু।
সে ইস্যু আপাতত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কেউ ২৫, কেউ ৪০ বা ৫০ ভাগ পারিশ্রমিক প্রদান করে সামাল দিয়েছে। কিন্তু যারা বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মতিগতি সম্পর্কে টুকটাক ধারণা রাখেন; তারা ভালো করেই জানেন, পারিশ্রমিক নিয়ে ফের কোনো একটা ‘দুর্গন্ধময়’ পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাব্যতা একেবারে কম নয়।
বিপিএলে এখন বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ ক্রিকেটাররা খেলতে চান না, এক্ষেত্রে অনেকেই শিডিউল এবং তুলনামূলকভাবে অর্থের অপ্রতুলতাকে দায়ী করেন। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বুঝা যায়, আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানা এবং বিসিবির এই বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অক্ষমতাই মূলত বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেটারদের পছন্দের তালিকা থেকে বিপিএলকে সরিয়ে দিয়েছে।
আইপিএল, পিএসএল, বিগ ব্যাশ, এস২০ এমনকি সহযোগী দেশগুলোর টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতেও পারিশ্রমিক নিয়ে এমন ঘটনার অবতারণা হয় না। যদিও বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি ঘটনা ঘটেও যায়, তা অল্পতেই মিটিয়ে নেওয়া হয়। অথচ বিপিএলের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক ইস্যুতে জটিলতা বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে।
গত বছর বিপিএল খেলে যাওয়া ১৪ বিদেশি ক্রিকেটারের বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে বোর্ড। সেটাও ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন থেকে তাগাদা দেওয়ার পর। পারিশ্রমিক নিয়ে এমন কেচ্ছা-কাহিনীর জন্য বিপিএলকে ক্রিকেটারদের বৈশ্বিক সংগঠন ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিগের তালিকায় রেখেছে বলে একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল।
এসব অব্যবস্থাপনার পরও কেউ চাইলে মাঠের ক্রিকেটে রান বেশি হচ্ছে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন। ‘ছোট বাউন্ডারির’ বদান্যতায় ওভারপ্রতি গড়ে রান হচ্ছে ৯.০২ হারে, যা বিপিএলে আগে দেখা যায়নি। তবে পারিশ্রমিক সমস্যার কারণে যে সেই তৃপ্তিটুকুও স্বস্তিতে উপভোগ করা যাচ্ছে না। পুরোনো রোগ না সারালে মাঠের ক্রিকেটের এই টুকটাক উন্নতি খুব সহজেই চাপা পড়ে যাবে, তৈরি হবে বিতর্ক। পারিশ্রমিক ইস্যুতে এবারের কাণ্ড বিসিবি কর্তাদের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।