সাব্বির রহমানকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দেখা গেল চেনা রূপে। ভুল হলো বোধ হয়। ‘চেনা’ নয় ঠিক, যে রূপে লোকে তাকে দেখতে চায়, ঠিক সে রূপে।
দলের রান ১৪০ ছোঁয় কি না, তা নিয়ে যখন সন্দেহ ছিল, ঠিক সে সময় সাব্বির জ্বলে উঠলেন। ৩৩ বলে ৮২ রানের ইনিংসে তিনি ঢাকা ক্যাপিটালসের রানটা নিয়ে গেলেন ১৭৭ এ, শেষ ৬ ওভারে উঠল ৮৯ রান! ঢাকা তবু ম্যাচটা হেরেছে, যা আবার তাদের টানা ষষ্ঠ হার। তবে তাতে সাব্বিরের অসামান্য ইনিংসটার মহিমা কমে দায় না একটুও।
এই ইনিংসের আগে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ফিফটিটা কবে ছিল সাব্বিরের জানেন? সেই ২০২০ সালে, বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। এমন অধারাবাহিকতার কারণ তিনি নিজেই। মাঠের বাইরের নানা ‘কীর্তি’ দিয়ে শিরোনাম কেড়ে নিয়েছেন। নিজের গায়ে চড়িয়েছেন ‘ব্যাডবয়’ তকমা।
মাঠের বাইরের কাজে শিরোনাম তো এই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও কেড়ে নিয়েছিলেন। ‘শৃঙ্খলাভঙ্গে’র কারণে তিনি এক ম্যাচ আগে ঢাকার চতুর্থ ম্যাচে জায়গা পাননি একাদশে, সেটা কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন নিজেই জানিয়েছিলেন। কারণটা ছিল, তিনি নাকি অনুশীলনে অনুপস্থিত ছিলেন টিম ম্যানেজমেন্টকে না জানিয়েই।
তা থেকে শিক্ষা নিয়েই যেন কাল জ্বলে উঠলেন সাব্বির। ম্যাচ শেষে তিনি জানালেন তার অনুশীলনে না আসা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কথা। সেটা অবশ্য দলের ভেতরের কথা, সেটা বাইরে আসায় কিছুটা ক্ষোভও ঝেরেছেন তিনি। বললেন, ‘কোচের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। কোচকে বলেছিলাম যে আমার পারিবারিক ইস্যু আছে। তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি। আমার মনে হয় দলের ভেতরের কথাগুলো সংবাদমাধ্যমে না বলাই ভালো।’
‘ব্যাডবয়’ তকমাটা গায়ে সেঁটে গেলে আর রক্ষা নেই। পান থেকে চুন খসলেই তখন দোষটা পড়ে নিজের ঘাড়ে। সাব্বিরও বিষয়টা টের পাচ্ছেন। নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করছেন এখন, কিন্তু অনেকেই নাকি সে পথটা আগলে ধরছেন নানা কারণে।
তিনি বলেন, ‘ছোট থেকেই এসব সামলে আসছি, বড় হয়ে নিজেকে কীভাবে সামলাব। তবু সাব্বির রহমানের কিছু হলেই শৃঙ্খলার কথা চলে আসে। আমি চেষ্টা করছি ঠিক করার জন্য। কিন্তু আশপাশের কিছু লোক হয়তো ভালো হতে দিচ্ছে না। তবে এটা নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত নই। আমার কাজ খেলা, পারফরম করা। সেটাই করছি।’
মাঠে পারফর্ম করার চেষ্টা করছেন। রাজশাহীতে নিজ খরচে অনুশীলনও করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিতই অনুশীলন করি। চেষ্টা করছি আবার ফেরার জন্য। বিপিএলে সুযোগ পেয়েছি… আলহামদুলিল্লাহ। চেষ্টা করব ভালো খেলার জন্য।’
সাব্বির জানালেন, চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ৩৩ বলে ৮২ রানের এই ইনিংস তাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভালো লাগছে। খুব আত্মবিশ্বাস অনুভব করছি।’ সেটা কি জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নও একটু করে বুনে দেয় না মনে? ২০২২ সালের নভেম্বরে সবশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন সবশেষ টি-টোয়েন্টিটা। সবশেষ টেস্ট আর ওয়ানডে খেলেছেন যথাক্রমে ২০১৮ আর ২০১৯ সালে।
সাব্বিরের মনের কোণেও আছে ফেরার আশা। তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন তো সবাই দেখে। আমাকে ইয়াং বলতে পারেন, সিনিয়রও বলতে পারেন। দুটো মিলিয়েই আমি। আমার ফিটনেস এখনো পড়ে যায়নি। দুই-তিনটি ইনিংস যদি ভালো খেলতে পারি, নির্বাচকেরা যদি সুযোগ করে দেন, অবশ্যই চেষ্টা করব ভালো (জাতীয় দলে) খেলতে।’