রোহিতের অবসরে টেস্টে ভারতের পরবর্তী অধিনায়ক কে?
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পাঁচ ম্যাচের সিরিজের ইতোমধ্যে চতুর্থ ম্যাচ শেষ হয়েছে। মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্ট জিতে ২-১ এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ আগামীকাল সিডনিতে শুরু হচ্ছে। সেই সিডনি টেস্টের পরই অবসর নেবেন ভারত অভিনায়ক রোহিত শর্মা? তেমনটাই শোনা যাচ্ছে। যদি তা-ই হয় তাহলে টেস্টে ভারতের পরবর্তী অধিনায়ক কে? এ দৌড়ে কারা এগিয়ে রয়েছেন, সে বিষয়ে একটু দেখে নেওয়া যাক।
এদিকে ব্যাটিং ফর্ম প্রভাব ফেলেছে রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বেও। দলের হার আরও চাপ বৃদ্ধি করছে রোহিতের ওপর। চারদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সিডনি টেস্টের পরই অবসর নিচ্ছেন রোহিত?
যদি তা-ই হয়, তাহলে কার ওপর ভারত দলের টেস্টের দায়িত্ব পড়ছে? এর আগে পার্থে রোহিতের অবর্তমানে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তিনি ভারতের সহ-অধিনায়ক। পার্থে বুমরাহ জেতালেও পাকাপাকিভাবে কি তার হাতেই যাবে নেতৃত্ব?
ভারত টেস্ট দলের অধিনায়কত্বের দৌড়ে রয়েছেন তিনজন ক্রিকেটার। বুমরাহ ছাড়াও আরও আছেন দুজন। একজন হলেন ঋষভ পান্ত , অন্যজন লোকেশ রাহুল। এ দুই ক্রিকেটারের সুযোগ রয়েছে ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার।
জাসপ্রিত বুমরাহ—
ভারতের পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে জাসপ্রিত বুমরাহ। তার সবচেয়ে বড় কারণ— তার ফর্ম। পার্থে বুমরাহ দেখিয়েছেন ভালো অধিনায়ক হওয়ার সব গুণ তার মধ্যে রয়েছে। সেখানেও প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু তাতে হতাশ হয়নি দল। উল্টে অস্ট্রেলিয়াকেও চাপে ফেলে দিয়েছিল তারা। তাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বুমরাহ।
পার্থ টেস্টের পর বুমরাহের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিলেন সাবেক ক্রিকেটাররা। দলের ক্রিকেটাররাও জানিয়েছিলেন— বুমরাহ কোনো সময় হতাশ হননি। বারবার ক্রিকেটারদের তাতিয়েছেন। সেখান থেকেও যে ম্যাচ জেতা যায়, সেই তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
ভারতকে সব ফরম্যাট মিলিয়ে মোট পাঁচটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুমরাহ। শুরুটা হয়েছিল টেস্টেই। ২০২২ সালে রোহিতের কোভিড হওয়ায় বার্মিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টেস্টে বুমরাহ অধিনায়কত্ব করেন। শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকেও হারতে হয়েছিল। যদিও পার্থে জিতে নজর কেড়েছেন তিনি। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও বুমরাহ ভারতের অধিনায়ক হয়েছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচ জেতে ভারত। তৃতীয় ম্যাচ খেলা হয়নি। বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল।
দলের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বুমরাহ। চলতি সিরিজে চারটি টেস্টে ৩০ উইকেট তিনি নিয়েছেন, যা দুই দেশের বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক। প্রতি ইনিংসে ২০ ওভারের বেশি বল করছেন। একের পর এক স্পেল করছেন। দেখে মনে হচ্ছে না, ক্লান্তি গ্রাস করেছে তাকে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও একজন পেসার। তিনি দলকে ভালো নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অতীতে কপিল দেব, ইমরান খানদের ক্ষেত্রেও তা দেখা গেছে। সেই পথে গিয়ে বুমরাহ দলের পরবর্তী অধিনায়ক হতেই পারেন।
তবে বুমরাহের অধিনায়ক হওয়ার পথে একটিই বাধা রয়েছে। টেস্টে পেসারদের টানা খেলতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে বুমরাহের মতো পেসারদের ক্ষেত্রে বোর্ড আগেও বিশ্রাম-নীতি নিয়ে চলেছে। অর্থাৎ কম গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সিরিজে তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। বুমরাহের চোটের ইতিহাস রয়েছে। একটা সময় দীর্ঘ কয়েক মাস খেলার বাইরে ছিলেন তিনি। তাই তাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয় না বোর্ড। বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হয় তাকে। কিন্তু একজন অধিনায়ক বিশ্রাম নিলে দলকে নেতৃত্ব দেবেন কে? কামিন্স বা অতীতে কপিল, ইমরানরা টানা ম্যাচ খেলতেন। সেটা বুমরাহ কি পারবেন? কারণ অধিনায়ক বুমরাহের থেকে সেরা ফর্মের বোলার বুমরাহকে ভারতের বেশি প্রয়োজন। সেদিকটাও দেখতে পারেননি নির্বাচকরা।
ঋষভ পান্ত —
ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা হওয়ার পর পান্তকে দলের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসাবে ধরা হতো। মাঝে দুর্ঘটনার পর ১৪ মাস ক্রিকেটের বাইরে থাকায় তাতে ভাটা পড়ে। আবার সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। আইপিএলে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা রয়েছে পান্তে। তবে জাতীয় দলে এখন পর্যন্ত এ দায়িত্ব পাননি তিনি। যতদিন তিনি খেলছেন, ততদিন টেস্টে অন্য কাউকে উইকেটের পেছনে দস্তানা হাতে দেখার সম্ভাবনা নেই। ফলে পান্তের ধারাবাহিকভাবে খেলা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে ফেরার পর এখন তাকে শারীরিকভাবে আরও ভালো দেখাচ্ছে। ওজন আগের থেকে কমিয়েছেন। ফলে ফিটনেস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন পান্ত। তার মানসিকতা আক্রমণাত্মক। তাই অধিনায়কের দৌড়ে রয়েছেন তিনি।
তবে এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের উল্টো দিকে পান্তের সবচেয়ে বড় খামতি তার উইকেট ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা। চলতি সিরিজে বারবার সেটি দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি ইনিংসে শুরুটা করেছেন তিনি। ২৫-৩০ রান পর্যন্ত ধৈর্য ধরে খেলেছেন। এরপর এমন একটা শট খেলে আউট হয়েছেন, যা অপরাধ। মেলবোর্নে দুই ইনিংসেই সেই ছবি দেখা গেছে। প্রথম ইনিংসে স্কট বোলান্ডের বলে ‘স্কুপ’ খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন পান্ত। তাকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি সুনীল গাভাস্কার। পান্তকে ‘স্টুপিড’ বলেছেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো খেলছিলেন তিনি। ম্যাচ বাঁচানোর দায়িত্ব ছিল পান্তের কাঁধে। সেই সময় ট্রাভিস হেডের বলে অহেতুক বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মেলনে রোহিতও জানিয়েছেন, পান্তকে শিখতে হবে তার কাছ থেকে দল কী চাইছে? জানা গেছে, পান্তের ওপর ক্ষুব্ধ কোচ গৌতম গম্ভীর। অনেকেই দলের হারের জন্য পান্তের দিকেই আঙুল তুলছেন।
অধিনায়ক হওয়ার জন্য প্রয়োজন পরিণত মানসিকতা। ম্যাচ কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে, সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশেষ করে টেস্টে সেটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পান্ত সেই মানসিকতা দেখাতে পারছেন না। সেখানেই পিছিয়ে পড়ছেন তিনি। সে কারণেই হয়তো এখনো জাতীয় দলের হয়ে কোনো ম্যাচে অধিনায়কত্ব করতে দেখা যায়নি তাকে। সিডনির পর কি সেটি দেখা যাবে মনে হয়?
লোকেশ রাহুল—
ভারতের টেস্ট দলের পরবর্তী অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন লোকেশ রাহুলও। দীর্ঘ দিন ধরে ভারতীয় দলে খেলছেন তিনি। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন। অস্ট্রেলিয়ায় যে কয়েকজন ব্যাটারকে ভালো করতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে একজন রাহুল। ওপেন থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার, ব্যাটিং অর্ডারে সব জায়গায় খেলতে পারেন তিনি। এ রকম একজনের হাতে দলের দায়িত্ব দিতেই পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
বুমরাহ ও পান্তের থেকে রাহুলের অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতাও বেশি। ভারতকে ১৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জিতেছেন ১১টি। হেরেছেন পাঁচটি ম্যাচ। তার মধ্যে টেস্টে তিনটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন রাহুল। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারলেও পরের দুটি টেস্টে জিতেছেন তিনি। ১২টি একদিনের ম্যাচের মধ্যে জিতেছেন আটটি। হেরেছেন চারটি। একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহুল। সেটি জিতেছেন তিনি। অর্থাৎ তিনটি ফরম্যাটেই অধিনায়কত্ব করেছেন এই ব্যাটার। পাশাপাশি আইপিএল তো রয়েছেই।
তবে রাহুলের ক্ষেত্রেও একটি বিষয় তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। সেটি হলো— রাহুলের চোটপ্রবণতা। মাঝেমধ্যেই চোটের কারণে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। ফলে ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারেন না। দলের সিনিয়র ক্রিকেটার হয়েও দলে জায়গা পাকা নয় তার। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে বসিয়ে সরফরাজ খানকে খেলানো হয়েছে। যিনি ধারাবাহিকভাবে প্রথম একাদশে খেলতে পারেন না, তাকে কি অধিনায়ক করার কথা ভাববে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এই একটি প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।