ফিল সিমন্স
বিসিবিপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের বিদায় এক রকম নিশ্চিতই ছিল। মাঝে কিছুটা সময় লেগেছে এই যা। মঙ্গলবার হাথুরুকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিয়ে দিয়েছে বিসিবি। আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্সকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কে এই ফিল সিমন্স? ক্রিকেটার ও পরবর্তীতে কোচিং হিসেবে তার অর্জন-ই বা কী?
খেলোয়াড়ি জীবনে সিমন্স ছিলেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং করতেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। নামের পাশে ২৬টি টেস্ট এবং ১৪৩ ওয়ানডে। টেস্টে তার আছে হাজারের ওপর রান, ওয়ানডেতে ৩৬৭৫। বল হাতে টেস্টে ৪টি এবং ওয়ানডেতে ৮৩ উইকেট শিকার করেছেন সিমন্স।
২০০২ সালে অবসরের পর কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন সিমন্স। প্রথম কাজ জিম্বাবুয়ের হারারে-ভিত্তিক একটি একাডেমিতে। সেখান থেকেই পরিচয়ের সুবাদে ২০০৪ সালের মে মাসে জিম্বাবুয়ের হেড কোচ নির্বাচিত হন সিমন্স। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে সেই চাকরি হারান।
এরপর আয়ারল্যান্ডের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান সিমন্স। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর আয়ারল্যান্ডের হেড কোচ হন। সিমন্সের অধীনে আয়ারল্যান্ড বেশ কয়েকটি ট্রফি জিতেছে, আইসিসির প্রতিটি বড় ইভেন্টে কোয়ালিফাই করেছে।
২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপে তারা হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়েকে। বলতে গেলে সিমন্সের কোচিংয়েই জায়ান্ট কিলার উপাধি পায় আইরিশরা।
তাই এই কোচকে সহজে ছাড়তে চায়নি আয়ারল্যান্ড। ২২৪টি ম্যাচে তার কোচিংয়ে খেলেছে আইরিশরা, যা কিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো কোচের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কোচিং করানোর রেকর্ড।
২০১৫ সালের মার্চে নিজের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে প্রস্তাব পান সিমন্স। হেড কোচের দায়িত্ব নিয়ে পরের বছরই (২০১৬) সালে ক্যারিবীয়দের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতান। অথচ তার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল রীতিমত ধুঁকছিল। সিমন্সই তাদের সেরা দশ র্যাংকিংয়ে ফিরিয়ে আনেন।
এরপর আফগানিস্তানের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান সিমন্স। সেখান থেকে ২০১৭ সালে দলটির হেড কোচও হয়ে যান। এরপর ২০১৯ সালের জুনে কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের কোচ হন সিমন্স।
সে বছরই অক্টোবর মাসে ফের তাকে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পদত্যাগ করেন সিমন্স। কিন্তু বোর্ডের অনুরোধে অস্ট্রেলিয়া সফরেও ক্যারিবীয়দের কোচিং করান তিনি।
২০২৩ সালে পাকিস্তান সুপার লিগের করাচি কিংসের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান সিমন্স। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে পাপুয়া নিউগিনির স্পেশালিস্ট কোচ হিসেবে স্বল্পমেয়াদে কাজ করেন তিনি।
সেখান থেকে তার পরবর্তী গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। আপাতত ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বিসিবির। তবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যেই সাফল্য তার, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেবেন এই কোচ দর্শকের প্রত্যাশা অন্তত তেমনটিই।