ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনার পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বিসিবিতেও। নাজমুল হাসান পাপনের চেয়ারে বসেছেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। যার কারণে এখন শঙ্কায় পড়ে গেছে প্রধান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের ভবিষ্যৎ। কেননা বর্তমান বোর্ড সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই কোচ হাথুরুর ঘোরবিরোধী।
২০১৬ সালে বিসিবির প্রধান নির্বাচক থাকাকালেই হাথরুসিংহের সঙ্গে বিরোধ ছিল ফারুক আহমেদের। তাই সেই সময় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। এবার সেই তিনি যখন বোর্ডপ্রধানের চেয়ারে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে হাথুরুর ভবিষ্যৎ নিয়ে। তা ছাড়া নানা সময় হাথুরুকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন ফারুক। সেই অবস্থান যে এখনো বদলাননি তিনি, সেটিও বোর্ডপ্রধান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই।
নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে হাথুরু প্রশ্নে ফারুকের উত্তর ছিল— ‘চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চুক্তি কতদিন, আমি আসলে জানি না। তবে আমি আমার আগের অবস্থানেই আছি (হাথুরুর বিদায় চান)। এখন যেহেতু আমি দায়িত্ব পেয়েছি। এখন আমি বিকল্প খুঁজব, তার চাইতে বেটার কাউকে পাই কিনা, কাছাকাছি মানের কাউকে পাওয়া যায় কিনা— এসব দেখব।’ অর্থাৎ বিসিবিপ্রধানের বার্তাটা পরিষ্কার— হাথুরুকে বিদায় নেওয়ার ব্যাপারে ভাবছে বাংলাদেশ।
এ ক্ষেত্রে হাথুরু অবশ্য নিজের চুক্তির মেয়াদ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামার আগে। পদত্যাগের বিষয়ে হাথুরু তখন বলেন, ‘আমার ভবিষ্যতের কথা বললে, যতদিন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ আছে, আমি দায়িত্ব পালনের দিকে তাকিয়ে আছি। তবে বোর্ড যদি বদলে যায় এবং তারা যদি পরিবর্তন চায়, আমার তাতে সমস্যা নেই। তারা যদি আমাকে চালিয়ে নিতে বলে, আমাকে নিয়ে খুশি থাকে, আমিও খুশি মনে দায়িত্ব পালন করব।’
এ ক্ষেত্রে হাথুরুকে বিদায় করার পেছনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হাথুরুর বর্তমান মেয়াদ। চুক্তি অনুযায়ী আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত বাংলাদেশকে সার্ভিস দেওয়ার কথা হাথুরুর। আর এই সময়ে আয়কর ছাড়াই মাসে ২৫ হাজার ডলার পারিশ্রমিক পাবেন হাথুরু, ৩০ শতাংশ করসহ (বিসিবিপ্রদান করে) যেই বেতন দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ডলারের ওপরে। আর এই চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে হাথুরুকে বিদায় করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন মাসের বেতন দিতে হবে, যা নিয়ে তাই ভাবতেই হচ্ছে বিসিবিকে।
অবশ্য এর আগে নানা সময় বিসিবিপ্রধান ফারুক আহমেদ ও বর্তমান বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে বলতে শোনা গেছে, প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও হাথুরুকে সরানো উচিত। নয়তো আর্থিক ক্ষতির চেয়ে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেননা ক্রিকেটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা ও দ্বন্দ্ব তৈরি করার ব্যাপারে হাথুরুর ভূমিকা রয়েছে।
তবে বোর্ডের বাইরে থেকে বলা যতটা সহজ বোর্ডে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই কথা বলা যায় না। অনেক কিছু ভেবেচিন্তে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাই হাথুরুকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বিসিবিকে। কেননা হাথুরুর মেয়াদ শেষ হতে আর ৬ মাসও বাকি নেই। আর তা ছাড়া এই সময়ের মধ্যে নতুন কোচ নিয়োগ দিলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে দল গোছানোর মতো পর্যাপ্ত সময়ও পাবে না নতুন কোচ। ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাফল্য পাবে বাংলাদেশ, এমনটিও হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তা ছাড়া আগের বোর্ডপ্রধান পাপনকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন হাথুরু।
সেই পরিকল্পনা মেনেই পাকিস্তান সফরের আগে লম্বা সময় দেশে প্রস্তুতি নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। যার সুফল পেতে শুরু করেছে দলও। পাকিস্তানে বেশ ইতিবাচক টেস্ট খেলছে দল। এই সফরের ফল বাংলাদেশের পক্ষে এলে ও দলের অধিনায়ক ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করে হাথুরুর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিসিবি। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের মতামতও বেশ গুরুত্ব পাবে। সব মিলিয়ে তাই পাকিস্তান সফরই হতে যাচ্ছে হাথুরুর অ্যাসিড টেস্ট। যেখানে লেটার মার্ক পেলে হয়তো এ দফায় টিকেও যেতে পারেন এই লংকান মাস্টারমাইন্ড। তবে সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট ক্ষীণই বলা চলে।