সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আলোচনার সময় সম্ভবত এসে গেছে বাংলাদেশ দলের। সাকিবের নিজেরও ভাবার সময় এসে গেছে। মাঠে ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্সটাই তো সবার আগে, সেখানে অনেকদিন ধরেই ফর্মহীন আছেন তিনি, সে আলোচনা এবার উঠছে জোরেশোরে।
সেটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, দেশের বাইরেও। সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও সাকিব ব্যাটে-বলে নিদারুণভাবে ব্যর্থ, এরপর সাকিবকে সমালোচনায় রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান বীরেন্দর শেবাগ। নিজের পরিসংখ্যান দেখে সাকিবের লজ্জা পাওয়া উচিৎ জানিয়ে শেবাগ বললেন, সাকিবের আরও আগেই বোঝা উচিৎ ছিল, তিনি টি-টোয়েন্টিতে আর চলেন না।
বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে বল হাতে ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য, ব্যাট হাতে ১৪ বলে ৮ রান করে দলকে বিপদে রেখেই আউট। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো সাকিব দলে তার প্রয়োজন নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেওয়ার মতো খেলেছেন।
আম্পায়ারের ভুলে হার, এবার বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ালেন ওয়াকার
এমন পিচে সাকিবের বোলিং খুব একটা কাজে আসবে না, সেটা অনুমিতই ছিল। সাকিবকে এক ওভারের বেশি বোলিংই করাননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এর পর ব্যাট হাতে দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে গেছেন সাকিব। লিটন, শান্তরা তো ব্যর্থতার নিয়মিত চিত্র দেখিয়েছেনই, সাকিবও নর্কিয়ার বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে এলেন। ফিরলেন ৪ বলে ৩ রান করে, বাংলাদেশকে অষ্টম ওভারেই ৩৭/৩ বানিয়ে।
নর্কিয়া এই বিশ্বকাপে ত্রাস ছড়াচ্ছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর বোলার তিনি। ১৫০ কিলোমিটারের আশপাশে গতি ওঠাচ্ছেন নিয়মিত। তার বলেই দুর্বল হুক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেওয়া, তাও দলের সবচেয়ে সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের একজনের এমন শট… ক্রিকবাজে বিশ্লেষণে সাকিবকে ধুয়ে দিয়েছেন শেবাগ।
যদিও শেবাগের বাংলাদেশকে খাটো করে দেখানোর সুর সব সময়ই থাকে, সেটি কালও ছিল। তবে সাকিবকে নিয়ে তার সমালোচনাকে অযৌক্তিক বলার উপায় থাকছে না, ‘ওকে যদি অভিজ্ঞতার কারণেই দলে নেওয়া হয়ে থাকে, সেটার কিছুই আজ আমাদের চোখে পড়েনি। অন্তত ক্রিজে কিছুটা সময় তো কাটানো উচিৎ ছিল। তুমি তো আর হেইডেন বা গিলক্রিস্ট নও যে কিনা হুক বা পুল শট অনায়াসে খেলতে পারে… তুমি বাংলাদেশেরই একজন খেলোয়াড়। তুমি তোমার মান অনুযায়ী খেলো। তুমি যদি হুক বা পুল শট খেলতে না পার তাহলে যে শট খেলতে পার সেটাই খেলো।’
বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ হারের পর সাকিব বলেছিলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা ‘ওয়েইক আপ কল!’ এ নিয়েও সাকিবকে ধুয়ে দিয়েছেন শেবাগ, ‘সাকিবের ওপর মানুষের প্রত্যাশা থাকে, সেটাতে ভুলও কিছু নেই। কারণ ও সেই প্রথম বিশ্বকাপ (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) থেকে খেলে আসছে। বিশেষ করে দল যখন বিপদে পড়বে, তখন তরুণ খেলোয়াড়েরা তো ওর দিকেই তাকাবে। সাকিব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরে যাওয়ার পর বলল ওটা নাকি ঘুমভাঙানির ডাক ছিল। ১৫ বছর খেলার পরও যদি ওয়েইক আপ কল দরকার হয়, তাহলে ভাবুন তো ও কেমন ঘুমিয়েছে!’
টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের দিন আরও আগেই ফুরিয়েছে বলেও মনে হচ্ছে শেবাগের, ‘আমার মনে হয়েছে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের সময় আরও অনেক আগেই ফুরিয়েছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়। ও এত লম্বা সময় অধিনায়কত্ব করেছে, এত সিনিয়র একজন খেলোয়াড়, এরপর যদি ওর পরিসংখ্যান এমন হয়, ওর তো লজ্জা হওয়া উচিৎ, তাই না?’
নিজের অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়েই সাকিবকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেবাগ, ‘ওর নিজেরই বোঝা উচিৎ যে ও আর টি-টোয়েন্টিতে চলে না এবং সেটা বুঝে অবসরে যাওয়া উচিৎ। আমি যখন শ্রীলংকায় ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছিলাম, বুঝতে পারলাম যে আমি ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল এবং আফগানিস্তানের একজন বাঁহাতি পেসার ছিল…এদের বলে ইচ্ছামতো রান নিতে পারছিলাম না। সে কারণে আমি সোজা নির্বাচকদের গিয়ে বলে দিলাম যে আমাকে আর এই ফরম্যাটের জন্য চিন্তা করবেন না। কারণ, দিন শেষে আপনিই তো আপনার মানটা সবচেয়ে ভালো বুঝবেন, সেই আপনি যদি অবদানই রাখতে না পারেন, তাহলে আর খেলার মানে কী! আমার মনে হয় না ওর (সাকিব) আর খেলা উচিৎ বা ওকে আর খেলানো উচিৎ।’