জাতীয় দলের তারকা পেস বোলার শরিফুল ইসলামের একান্ত সাক্ষৎকার নিচ্ছেন যুগান্তরের স্পোর্টস রিপোর্টার আল-মামুন। ছবি-শামসুল হাবিব শাদিল
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিক পারফর্ম করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। গত বছরটা তার স্বপ্নের মতোই কেটেছে। ৩২ ইনিংসে শিকার করেছেন ৫২ উইকেট।
জাতীয় দলের এই তারকা পেসারের ইচ্ছা ছিল আইপিএলে খেলার। সেই স্বপ্নপূরণে আইপিএলের চলতি আসর শুরুর আগে নিলামে নামও এন্ট্রি করেন। কিন্তু জাতীয় দলের খেলা থাকায় পরে প্রত্যাহার করে নেন।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লখনৌ সুপার জায়ান্টস টুর্নামেন্টের মাঝপথে সম্প্রতি খেলার জন্য শরিফুলকে কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়। জাতীয় দলের স্বার্থে আইপিএলের প্রস্তাব নাকোচ করে দেন এই তারকা পেসার।
আইপিএলে সুযোগ পেয়েও খেলতে না যাওয়া, ক্রিকেটার না হলে পুলিশ হওয়া এবং আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের লক্ষ্য নিয়ে দৈনিক যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেছেন পেস বোলার শরিফুল ইসলাম। তার সেই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্পোর্টস রিপোর্টার আল-মামুন। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
দৈনিক যুগান্তর: শরিফুল আপনি কেমন আছেন?
শরিফুল ইসলাম: আলহামদুলিল্লাহ, আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
দৈনিক যুগান্তর: গেল বছরটা আপনার স্বপ্নের মতোই কেটেছে, ৩২ ইনিংসে ৫২ উইকেট শিকার করেছেন। এ বছর অনেক খেলা, আপনার টার্গেট?
শরিফুল ইসলাম: জি আলহামদুলিল্লাহ, গত বছর ভালো খেলতে পেরেছি। এজন্য আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। এ বছর আমার টার্গেট থাকবে সুস্থ থেকে যত বেশি ম্যাচ খেলা যায়। জানি না উইকেট পাব কিনা। উইকেট নিয়ে আমার কোনো লক্ষ্য নেই। আমার এমন কোনো লক্ষ্য নেই যে এতগুলো উইকেট পেতে হবে। আমার লক্ষ্য হলো-ফিট থেকে দলের প্রয়োজনে উইনিং বোলিং করা।
দৈনিক যুগান্তর: সাকিব এক বছর রেকর্ড ৭৭ উইকেট নিয়েছেন, তার রেকর্ড ভাঙার কোনো টার্গেট আছে কি?
শরিফুল ইসলাম: না আসলে ওরকম কারো রেকর্ড ভাঙার ইচ্ছা আমার নেই। ইচ্ছা শুধু একটাই, বারবার বলতে চাই- সুস্থ থেকে দেশের জন্য খেলতে। যাতে ভালো কিছু উপহার দিতে পারি। ভালো কিছু উপহার দিতে হলে অটোমেটিক রেকর্ড ভাঙবে। তবে আমার ভেতরে সাকিবের রেকর্ড ভাঙার কোনো ইচ্ছা নেই (হাসি)। আমি যদি সুস্থ থেকে খেলতে পারি, তাহলে অটোমেটিক রেকর্ড ভাঙার চান্স থাকবে।
দৈনিক যুগান্তর: নিউজিল্যান্ডের ফিন অ্যালেন এবং আফগানিস্তানের ইবরাহিম জাদরানকে পরপর ৬ ও ৫ বার আউট করায়, আপনার আত্মবিশ্বাস কী বেড়েছে?
শরিফুল ইসলাম: সত্যিই তাই, নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটসম্যানকে কোনো বোলার যদি প্রতি ম্যাচে আউট করতে পারে তাহলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তবে আমি কোনো ম্যাচকেই হালকাভাবে নেই না, আমি খুব ভালো করার চেষ্টা করি। উইকেট পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আমি কখনও ভাবি না। আমার টার্গেট থাকে ভালো বোলিং করে যাওয়া।
দৈনিক যুগান্তর: মাঠে বসে প্রতিপক্ষ বোলার বা ব্যাটসম্যান দাপট দেখালে সহ্য হয়?
শরিফুল ইসলাম: না না, ব্যাটসম্যানরাও খেলতে আসে, ওরাও চায় রান করতে। বোলাররাও চেষ্টা করে উইকেট নেওয়ার। যখন কোনো বোলারের উপর ব্যাটসম্যান চড়াও হয় তখন চিন্তা থাকে ওর উইকেটটা নিলে হয়তো আমার জন্য এবং আমার দলের জন্য ভালো। কারণ সে ভালো খেলে আমাদের চাপে ফেলছে। এক্ষেত্রে অনেক সময় সফল হই, অনেক সময় সাফল্য আসে না। অনেক বেশি রান দিয়ে ফেলি, এগুলো নিয়ে কখনও হতাশ হই না আবার বেশি খুশিও হই না। চাওয়া একটাই থাকে, যে ব্যাটসম্যান বোলারকে চার্জ করে, তার উইকেটটা নেওয়া।
দৈনিক যুগান্তর: ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছন্দের মতো খেলছেন, পাওয়ারপ্লে নাকি ডেথ ওভার, কোন বোলিংটা এনজয় করেন?
শরিফুল ইসলাম: আমি যখনই বোলিংয়ে আসি পুরো বোলিংটা এনজয় করার চেষ্টা করি, এনজয় করতে চাই। নির্দিষ্টভাবে পাওয়ারপ্লে বা ডেথ ওভার কোনো কথা নয়।
দৈনিক যুগান্তর: গত বছর ভারতে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেললেন, জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিজের কোনো লক্ষ্য?
শরিফুল ইসলাম: ইনশাআল্লাহ আমি চাইব, সবাই যাতে সুস্থ থেকে বিশ্বকাপটা খেলতে পারে। আমার চাওয়া আগের চেয়ে এবারের বিশ্বকাপ যেন ভালো যায়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবাই খুব ভালো ফর্মে আছে। আমরা খুব আশাবাদী ভালো কিছু হবে।
দৈনিক যুগান্তর: আইপিএলে খেলার জন্য লখনৌ সুপার জায়ান্টস থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন, আইপিএলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে যদি কিছু বলেন?
শরিফুল ইসলাম: আইপিএলে খেলার স্বপ্নতো অবশ্যই আছে; কিন্তু আমাদের সামনে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। দেশের খেলা রেখে তো আর আইপিএল খেলতে যাওয়া ঠিক হবে না। এটা কেমন দেখায়। এ সময়ে আমাদের খেলা না থাকলে হয়তো যেতাম। যেতে পারিনি এজন্য কোনো আপসোস নেই। ভালো খেললে ভবিষ্যতে অবশ্যই সুযোগ আসবে।
দৈনিক যুগান্তর: আপনার সফলতার মূলমন্ত্র কী?
শরিফুল ইসলাম: আমার সফলতার মূলমন্ত্র হলো মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা। আর অবশ্যই নিজের পরিশ্রম আছে। কারণ সবাই চায় সে ভালো করুক।
দৈনিক যুগান্তর: আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মারণীয় ম্যাচ কোনটি?
শরিফুল ইসলাম: ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ হলো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি। যে ম্যাচে আমরা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সেই ম্যাচে আমরা ভালো খেলেছি।
দৈনিক যুগান্তর: ভবিষ্যতে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
শরিফুল ইসলাম: ভবিষ্যত নিয়ে আমি আসলে এখন ভাবছি না। যেভাবে খেলছি দলের হয়ে কন্ট্রিবিউট করতে চাই। এভাবে করতে পারলেই আমি খুশি। এটাই আমার চাওয়া।
দৈনিক যুগান্তর: আপনার টার্গেট কী?
শরিফুল ইসলাম: আমার টার্গেট একটাই, যেভাবে শুরু করছি- সেভাবেই যাতে শেষ করতে পারি। উইকেট শিকার নিয়ে আমার আলাদা কোনো টার্গেট নেই। আল্লাহ যতগুলো কপালে রেখেছেন ততগুলোই হয়তো পাব। বেশি টার্গেট করে আসলে লাভ নেই।
দৈনিক যুগান্তর: ক্রিকেটার না হলে কী হতেন?
শরিফুল ইসলাম: ক্রিকেটার না হলে...যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি স্যাররা যখন মারতো তখন মতো হতো শিক্ষক হব। হাইস্কুলে ওঠার পর পুলিশ এবং আর্মিতে চাকরির প্রতি ঝোঁক ছিল। তারপর মূলত ক্রিকেটে চলে আসি। তবে ক্রিকেটার হওয়ার আগে আমি ভলিবল খেলেছি।
দৈনিক যুগান্তর: তাহলে কি বলা যায়, ক্রিকেটার না হলে পুলিশ হতেন?
শরিফুল ইসলাম: হয়তো তাই হতাম, আল্লাহ যদি কপালে রাখত। তবে ইচ্ছে ছিল পুলিশ হওয়ার।
দৈনিক যুগান্তর: ছোট বয়সে কার খেলা দেখতে আপনার ভালো লাগত?
শরিফুল ইসলাম: ছোট বেলায় ব্যাটসম্যানদের খেলা দেখতে ভালো লাগত। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ভাইয়ের খেলা দেখতে ভালো লাগত। যখন পেস বোলার হয়ে গেলাম তখন মোস্তাফিজ ভাইয়ের বোলিং ভালো লাগত। মোস্তাফিজ ভাইয়ের খেলা দেখেই আমার প্র্যাকটিস শুরু করা। ওনার সাথে খেলতে পারছি এটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। উনি অনেক অভিজ্ঞ একজন বোলার। ওনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
দৈনিক যুগান্তর: এখন জাতীয় দলের অনেক খেলা, খেলার কারণে অনেক সময় বিদেশে ঈদ করতে হয়। দেশের ঈদ আর বিদেশের ঈদের কোনো পার্থক্য?
শরিফুল ইসলাম: আমার কাছে মানে হয় সেইম। যখন দলের সঙ্গে থাকি তখন আর পরিবারের ঘাটতি মনে হয় না। তখন মনে হয় না যে পরিবার থেকে দূরে আছি।
দৈনিক যুগান্তর: অনেক ক্রীড়াবিদ বলেন বিয়ের পর তার মধ্যে পরিপক্বতা এসেছে, আপনি কি বলবেন?
শরিফুল ইসলাম: হ্যাঁ অবশ্যই। আলহামদুলিল্লাহ আমার স্ত্রী খেলাটা খুব সাপোর্ট করেন। সে খেলাটা খুব ভালো বুঝে। আমি চাই যাতে সে খেলাটা না বুঝক। কারণ খেলা বোঝার কারণে দুই একটা ম্যাচে খারাপ হলে ওরও মন খারাপ হয় (হাসি)। তবে ও আমাকে খারাপ সময়ে খুব বেশি সাপোর্ট করে।
দৈনিক যুগান্তর: পেস বোলারদের সবচেয়ে আতঙ্কের জায়গা হলো ইনজুরি, চোটের কারণে দলের বাইরে থাকাকালীন সময়টা কতোটা বেদনার?
শরিফুল ইসলাম: দেখেন, শুধু পেস বোলার না। যে কোনো প্লেয়ার যখন ইনজুরিতে পড়েন সবারই খারাপ লাগে। ইনজুরি থেকে কামব্যাক করা অনেক কঠিন। কেউ চাইবে না সে ইনজুরি আক্রান্ত হোক। যার ইনজুরি হয়েছে সেই বুঝে তার কতোটা কষ্ট লাগে।