Logo
Logo
×

খেলা

ঈদের একাল সেকাল, স্মৃতিচারণে শাহরিয়ার নাফীস

Icon

আল-মামুন

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১১ পিএম

ঈদের একাল সেকাল, স্মৃতিচারণে শাহরিয়ার নাফীস

আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য খুবই আনন্দের দিন। ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম তথা রোজা পালন শেষে মুসলমানরা ঈদগাহে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে মুসাফাহা-মুআনাকার মাধ্যমে খোশমেজাজে খোঁজ-খবর নিয়েছেন।

ঈদুল ফিতরের এই খুশির দিনের স্মৃতি চারণ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস। তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্পোর্টস রিপোর্টার আল-মামুন। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ যুগান্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

ঈদুল ফিতরটা আসলে রোজা কেন্দ্রিক, আমরা ছোট বেলায় বাসায় যে জিনিসটা দেখতাম- রমজান মাসটা খুব ইনজয় করতাম, সেহরি করে রোজা রাখা, ইফতারি করা। এটা আমাদের বাসায় উৎসবের মতো ছিল, এখনও উৎসবের মতোই আছে। তবে এখন যেটা বুঝি, ছোট বেলার ইফতার খুব নির্ভার ছিল। ইফতার-সেহরির মেন্যু কী হবে, এসব নিয়ে আমাদের তেমন কোনো চিন্তা-ভাবনা এমনটি কোনো দুশ্চিন্তাও ছিল না। এই বিষয়গুলো বাবা-মার উপর ন্যস্ত ছিল। তারা দেখভাল করতেন।

তবে রোজায় আমরা খুব এক্সাইটেড থাকতাম, রোজার কারণে স্কুল বন্ধ থাকত। তেমন পড়াশুনার চাপ ছিল না। আমরা তিন ভাই ছিলাম, ঈদের ছুটিতে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতাম। যেটা বলব, ছোট বেলার ঈদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কোনো দুর্ভাবনা নেই, কোনো টেনশন নেই। এখনতো ঈদের সালামির তেমন প্রচলন নেই বললেই চলে। থাকলেও দিন দিন সেই রীতি উঠে যাচ্ছে। সালামির রীতি থাকলেও তেমন দেখা যায় না। কিন্তু ছোট বেলায় ঈদ সালামিতে কে কত টাকা কালেকশন করল, সেটা নিয়েও প্রতিযোগিতা হতো। সালামির সেই টাকা বাবা-মার কাছে জমা রাখতাম, কখনো পুরো টাকা ফেরত পেতাম, কখনো পেতাম না (হাসি), তবে সেটা খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল।

কিন্তু এখনকার বাচ্চাদের মধ্যে ঈদে সালামি-দেওয়া বা নেওয়ার তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের সময়ে সালামি নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হতো। আমাদের সময়ে ঈদের আগে বা পহেলা বৈশাখের আগে কার্ড দিয়ে একজন আরেকজনকে দাওয়াত দিত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে, প্রযুক্তি হাতের নাগালে চলে আসায় সেই ঈদ কার্ডের প্রচলনও উঠে যাচ্ছে। 

সেই সময়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বাড়ির উঠান বা রাস্তার পাশে গাছের পাতা বা খড়খুটায় তৈরি ছোট ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে রশি দিয়ে ঈদ কার্ড সাঁটিয়ে রাখত, সুপারি-নারকেল বা নাম মাত্র টাকায় সেই কার্ড বিক্রি করত। কার্ড দিয়ে বন্ধু-বান্ধবকে ঈদের দাওয়াত দিত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে সেই ঈদ কার্ডের প্রচলন নেই বললেই চলে, সেই রীতি উঠে যাচ্ছে। এখন আমরা একজন আরেকজনকে মোবাইলে এসএমএস দেই, অথবা একটা স্টিকার পাঠিয়ে দেই। কিন্তু সেই আবেগ আর কাজ করে না। 

আগে আমরা পরিকল্পনা করে একটা ঈদ কার্ডে কী কী লিখব, লেখাগুলো কী হবে, হাতের লিখা কতো সুন্দর হল। কার্ডটি মানানসই হলো কিনা। লিখা শেষ হলে ঈদ কার্ডটি পাঠানোর মধ্যেও অনেক আবেগ-উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করত। কিন্তু এখন সেটা শুধুই অতীত।

আমরা তিন ভাই ছিলাম, আব্বা-আম্মা যেটা করতেন, তিন ভাইয়ের জন্যই একই কালারের একই কাপড় নিয়ে আসতেন। যে কারণে ভালোটা নিজে না নিয়ে বড় ভাই, বা ছোট ভাইকে দেওয়ার মধ্যে যে সেক্রিফাইসের বিষয় ছিল সেটা কাজ করত না। আমরা ঈদে বেশ কিছুদিন ছুটি পেতাম, সেই ছুটিতে খেলাধুলা করে কাটিয়ে দিতাম। সেই ছুটি পাওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। 

রমজান মাসে দেশের বাইরে অনেক ছিলাম। কিন্তু খেলার কারণে দেশের বাইরে ঈদ করার আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমি ঈদে বাড়িতেই ছিলাম। বাবা-মার সাথেই ঈদ করতে পেরেছি। তবে এখনকার ব্যস্ত সূচিতে ক্রিকেটারদের অনেক সময় দেশের বাইরে পরিবারকে ছাড়া ঈদ করতে হয়। তবে এই সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমার হয়নি। দেশে থেকে পরিবারের সঙ্গেই ঈদ করতে পেরেছি। 

এখনকার ঈদ আর সেই সময়ের ঈদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পার্থক্য আমার কাছে মনে হয়-আমরা যখন ছোট ছিলাম বা আমার বাবা-মারা যখন ছোট ছিলেন, তখন পরিবারগুলো অনেক বড় ছিল। যেমন আমার বাবারা সাত ভাই-বোন, বড় পরিবার থাকলে যেটা হতো, একদিন রাখতে হতো বাবার পরিবারের আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। আরেকদিন রাখতে হতো মায়ের বাড়ি তথা নানা বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে ঈদ উদযাপনের জন্য। এতে দেখা যেত একদিন যদি নানা বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম, তখন ছোট খালা, বড় খালা, মেজ খালা-এভাবে ছোট, বড় এবং মেজ মামার বাড়িতে বেড়াতে যেতে হতো। আরেকদিন ফুফু এবং চাচাদের বাসায় যেতাম, তখন অনেক মজা হতো, ছুটির দিনগুলো খুব ভালো কাটত। 

কিন্তু এখন দেখেন আমরা তিন ভাই, আমি বাংলাদেশে থাকি। আমার দুই ভাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। তো আমার বাচ্চাদের জন্য কিন্তু তাদের চাচাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কোনো অপশন নেই। যেহেতু তারা দেশের বাইরে থাকে। মানুষ যতই নিউকিলিয়াস ফ্যামিলির দিকে যাচ্ছে, এই আনন্দগুলো কমে যাচ্ছে। তবে আমার কাছে ঈদের দিনের সবচেয়ে এক্সাইটিং হলো নামাজের মাধ্যমে দিনের শুরু করা। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে ঈদগাহে যাই, নামাজ পড়ি। ঈদের দিনটা আমার জন্য খুবই স্পেশাল।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম