মাঠের বড় পর্দায় তখন সবার চোখ। তাতে ফুটে উঠলÑ‘আউট’। সেদিকে তাকিয়ে ঈষৎ হাসলেন ডেভিড ওয়ার্নার। বিদায়ের মলিন হাসি!
যার হাতে তার বিদায়, সেই বোলার সাজিদ খান সবার আগে অভিনন্দন জানালেন। সদ্য ভাঙা জুটির সঙ্গী মার্নাস লাবুশেন জড়িয়ে ধরলেন। ছুটে গিয়ে পিঠ চাপড়ে দিলেন প্রতিপক্ষের আরও অনেকে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে।
২৫ হাজার দর্শকের তুমুল করতালিতে প্রকম্পিত চারপাশ। ছিলেন তার স্ত্রী, সন্তান, স্বজনরা। সাজঘরে ফেরার সময় দুহাত প্রসারিত করে এবং ব্যাট উঁচিয়ে সবার অভিনন্দনের জবাব দিলেন ওয়ার্নার।
এরপর মাঠ ছেড়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠে গেলেন ড্রেসিংরুমে। সাদা পোশাকে শেষবার। ধারাভাষ্যকার বললেন, ‘গেম ওভার ফর দ্য গেম চেঞ্জার।’
টেস্ট আঙিনা থেকে ওয়ার্নারের বিদায়টা হলো রূপকথার মতো। সাদা পোশাকে শেষ ইনিংসেও চেনা রূপে দেখা গেল অসি ওপেনারকে। বিনোদনের পশরা সাজিয়ে দাপুটে ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের আশা মাড়িয়ে দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের দুয়ারে।
শনিবার সিডনি টেস্টের চতুর্থদিন পাকিস্তানকে আট উইকেটে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করল অস্ট্রেলিয়া। তার স্ট্রোকসমৃদ্ধ নান্দনিক ফিফটির সঙ্গে দলের জয়ে শেষটাও হলো বর্ণিল।
আগেরদিন ৬৮ রানে সাত উইকেট হারানো পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস কাল থামে ১১৫ রানে। ১৩০ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যায় আট উইকেট হাতে রেখে। ৭৫ বলে ৫৭ রান করে ওয়ার্নার যখন বিদায় নেন, জয় থেকে তখন মাত্র ১১ রান দূরে স্বাগতিকরা।
অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংসে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়ায় এ নিয়ে টানা ১৭ টেস্টে হারল পাকিস্তান। টেস্ট ইতিহাসে আর কোনো দল কোনো দেশে টানা এত ম্যাচ হারেনি।
৩-০তে সিরিজ হারের হতাশা একপাশে সরিয়ে রেখে ম্যাচ শেষে পাকিস্তান দলের সবার সই করা একটি জার্সি ওয়ার্নারকে উপহার দেন অধিনায়ক শান মাসুদ। সিরিজসেরা হওয়া অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, ‘ওয়ার্নারের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। সে সত্যিই এক দুর্দান্ত ব্যক্তিত্ব।’ ১১২ ম্যাচে প্রায় ৪৫ গড়ে ৮৭৮৬ রান নিয়ে শেষ হলো ওয়ার্নারের টেস্ট ক্যারিয়ার।
বিদায়ি টেস্টের আগে বিদায় জানিয়েছেন ওয়ানডেকেও। তবে আন্তর্জাতিক টি ২০তে আরও কিছুদিন দেখা যাবে ৩৭ বছর বয়সি ওয়ার্নারকে। মানুষ কীভাবে মনে রাখবে তাকে? ওয়ার্নারের চাওয়া, ‘রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী একজন হিসাবে, খেলার ধরন দিয়ে যে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।’