মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। দলের সঙ্গে থেকেও অনেক ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি।
শুধু তাই নয়, দলের সঙ্গে বিদেশ সফরে গেলেও মাঝপথে তাকে দেশে পাঠিয়ে অপমান করা হয়েছে। ফর্মে থাকা সত্ত্বেও নতুনদের সুযোগ দেওয়ার নামে রিয়াদকে একাধিক সিরিজে বসিয়ে রাখা হয়। তার গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় ‘বুড়ো’ হয়ে গেছেন এই ট্যাগ।
বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপের দলেও সুযোগ হয়নি তার। চলতি বছরে একাধিক সিরিজে তাকে দলে রাখা হয়নি। অনেক সমালোচনার পর রাখা হয় বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে সুযোগ দেওয়া হলেও তাকে নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটিং অর্ডারে খেলানো হচ্ছে না। প্রতি ম্যাচেই ওঠানো-নামানো হচ্ছে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের প্রয়োজনে মাহমুদউল্লাহকে উপরের দিকে ব্যাট করানো উচিত। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ উল হক তো বলেই দিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহকে অপচয় করছে বাংলাদেশ। তাকে খেলানো হয় ছয়-সাত ও আট নম্বর পজিশনে। শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে অনেক সময় বড় স্কোর খেলার জন্য বলও পান না।
বিশ্বকাপের চলতি আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং পজিশন নির্ধারণ করা হয় ৮ নম্বরে। তিনি ব্যাটিংয়ে নামার আগেই দলের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
সাধারণত জয় পেলে পরের ম্যাচে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা হয় না; কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পরও দ্বিতীয় ম্যাচে বসিয়ে রাখা হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তার পরিবর্তে খেলানো হয় শেখ মেহেদি হাসানকে। তিনি মাহমুদউল্লার পরিবর্তে খেলতে নেমে আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেননি।
যে কারণে পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেখ মেহেদির পরিবর্তে ফেরানো হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। সেই ম্যাচে রিয়াদ ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। ব্যাটিং বিপর্যয়ে রিয়াদের দায়িত্বশীলতায় শেষপর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৪৫ রান করে বাংলাদেশ।
এরপর ভারতের বিপক্ষে সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৪৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন রিয়াদ।
গতকাল মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন রানের পাহাড় ডিঙ্গাতে নেমে ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দলের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
১১.৫ ওভারে দলীয় ৪২ রানে মুশফিকুর রহিম আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরেন রিয়াদ। ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে একশ রানের আগেই অলআউটের শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে দুইশ পার করান এই অলরাউন্ডার।
দলীয় ২২৭ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১১১ বলে ১১টি চার আর ৪টি ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ১১১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। দুটি সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব আল হাসান।
রিয়াদের সেঞ্চুরির পরও ৩৮৩ রানের টার্গেট তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৩৩ রানে। ১৪৯ রানে হেরে যায় টাইগাররা।
এদিন ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদকে প্রশ্ন করা হয়, ‘দলে না থাকার সময়ে কিভাবে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন। উত্তরে রিয়াদ বলেন, ‘যদিও অনেক কিছুই বলার ইচ্ছা আছে, কিন্তু এটা সঠিক সময় নয় সবকিছু বলার। সময় হলেই সব বলব।’