মুলতানকে বলা হয় ‘সিটি অব সেইন্ট’ পীর-আউলিয়ার শহর। এটি ইনজামাম-উল-হকেরও শহর। মুলতানের তিনটি জিনিস বিখ্যাত-আম, মিষ্টি ও মাটি। ২০০৪-এ টেস্ট ম্যাচ খেলতে শচীন টেন্ডুলকার যখন মুলতানে আসেন, তার স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকার তাকে অনুরোধ করেছিলেন মুলতানের মাটি নিয়ে আসতে। প্রসাধনের কাজে লাগে সেই মাটি।
পাক-ভারত ওই সিরিজের আগে ২০০৩ সালের ৩-৬ সেপ্টেম্বর মুলতানে তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সেই টেস্ট বাংলাদেশের জন্য শেষাবধি হৃদয়ভাঙার আখ্যান হয়ে ওঠে। ২০ বছর পর আরেক সেপ্টেম্বর যখন দুয়ারে, মুলতানে সেই টেস্টের স্মৃতি ফিরে এলো। যে টেস্ট ম্যাচ জেতার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে পাকিস্তান জিতে যায় ইনজামামের বাউন্ডারিতে।
অকল্পনীয় সেই হারের পর ড্রেসিংরুমে ফিরে বাংলাদেশ দলের সবাই কেঁদেছিলেন। মুলতান সেদিন কাঁদিয়েছিল বাংলাদেশকে। ক্রিকেট-বিধাতা বাংলাদেশের জয় লিখেও কেন সেদিন মুছে দিয়েছিলেন, আজও তা এক মস্ত বড় প্রশ্ন।
নানা কারণে সেই টেস্ট ছিল ঘটনাবহুল। পাকিস্তানি কিপার-ব্যাটার রশিদ লতিফ অলক কাপালির ক্যাচ ধরার ভান করেছিলেন বল মাটি স্পর্শ করার পর। পরে তিনি স্বীকারও করেন নিজের অসততার কথা। সেই অসৎ-কাণ্ডের জন্য তিনি নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যায় বাংলাদেশের। ওই ‘ভুয়া’ ক্যাচও বাংলাদেশের হারার অন্যতম কারণ। নিজের শহরে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ইনজামাম সেদিন অপ্রত্যাশিত জয় এনে দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে। সেই সঙ্গে বাঁচিয়েছিলেন নিজের ক্যারিয়ার।
২০০৩-এ পাকিস্তান সফরের আগে বাংলাদেশ ২১ টেস্টের মধ্যে হেরেছিল ২০টিতে। ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে প্রথম জয় যখন বাংলাদেশের মুঠোয়, তখনই মুলতান ট্র্যাজেডি। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ তাই বলেছিলেন, ‘বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, ম্যাচটা আমরা হেরেছি।’ এক উইকেটের সেই হার আজও পোড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট বুভূক্ষুদের।
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়াম শহরের অনেক বাইরে। সেসময় স্টেডিয়ামের সামনে ছিল আখখেত। জায়গাটির নাম গুলশানে ইউসাফ। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৩-এ ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে আমরা কজন বাংলাদেশি সাংবাদিক যখন হোটেলে ফিরছি, আমাদের সঙ্গী তখন ছায়া নয়, আক্ষেপ। পেছনে পড়ে রইল হাবিবুল বাশারের ফিফটি (৭২), রাজিন সালেহর ৪৯ ও ৪২, মোহাম্মদ রফিক (৬/৩৬) ও খালেদ মাহমুদরে (৪/৩৭) দুরন্ত বোলিং। আর পড়ে রইল দীর্ঘশ্বাসের ছায়া!