
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম
‘জামশেদ মজুমদার প্রতারণার হিরো, ধর্ম ব্যবসায়ী’

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম

আরও পড়ুন
ফিলিস্তিন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না উদ্যোক্তা জামশেদ মজুমদারের। এবার তাকে ‘প্রতারণার হিরো’ ও ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ বলে অ্যাখ্যা দিলেন চীনে অধ্যয়নরত এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তার নাম সায়েফ মুনওয়ার সৌরভ। তিনি চীনের সাংহাই প্রদেশের টংজি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।
মঙ্গলবার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে সৌরভ বলেন, বাংলাদেশে একটা প্রতিষ্ঠান গড়তে যে কী পরিমাণ কষ্ট হয়, এটা সাধারণ মানুষদের জন্য বোঝা মুশকিল। জামশেদ মজুমদারের ‘ঘরের বাজা ‘ তৈরি করতেও হয়তো প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে। ভেবে কষ্ট পাচ্ছি তার ফেসবুক পেজ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে এবং হয়তো ব্যবসারও ক্ষতি করে দেওয়া হয়েছে অনেকটা।
‘কিন্তু ‘ঘরের বাজার’ নিয়ে আমার জেনুইন কনসার্ন আছে। যেটা না বলে পারছি না। আচ্ছা ঠিক কোন কারণে এই লোক ১৫০ টাকা কেজি ছোলা বুট বিক্রি করেছে এই রমজানে আমারে বলেন তো। রমজানে আজওয়া খেজুর সে বিক্রি করেছে ২০০০ টাকা কেজি’।
বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় জামশেদ মজুমদারের সমালোচনা করে বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী আরও বলেন,বাংলাদেশে আমরা দেখেছি শুধু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করার কারণে ভোক্তা অধিকার ছোট ছোট ব্যবসায়ীদেরও হাজার লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ‘ঘরের বাজার’র ক্ষেত্রে এই নিয়ম নাই কেন?
বাংলাদেশের মানুষ চটকদারদের বিজ্ঞাপন দেখে সহজেই প্রতারিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামশেদ মজুমদার এই প্রতারণার হিরো। সে নিজেই হিরো সেজে ভিডিও বানায় আর লাখ লাখ টাকা বুস্টিংয়ে খরচ করে। সে সিম্পল মধুরে জমাইয়া ক্রিস্টাল হানি বলে ডাবল দামে বিক্রি করে। যে নাটস আর হানি মেশালে ৫০০ টাকা হয় না, সেটা সে ১৫০০ টাকা বিক্রি করে। শুধু চটকদার বিজ্ঞাপন করে।
‘জামশেদের এই খারাপ সময়ে এসব কথা বলতাম না কিন্তু গেল রমজানের শুরুতে এদের ফোন দিয়ে আমার কনসার্নটা জানিয়েছিলাম, পাত্তা তো দিলোই না, উলটা ভাবখানা এমন যে, তাদের এসবে কিছু যায় আসে না। পাবলিক তো নিচ্ছে এ দামেই। এই জন্য আমি এই লোকদের ধর্ম ব্যবসায়ী ছাড়া কিচ্ছু মনে করি না’, যোগ করেন সৌরভ।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘট কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানায় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে কর্মবিরতি পালন করে। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ সরকারও। ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যখন বিক্ষুব্ধ, ঠিক তখনই গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন জামশেদ মজুমদার।
রোববার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে জামশেদ বলেন, ‘একটা সত্যি কথা বলবেন? ফিলিস্তিন নিয়ে আপনার অন্তরে রক্তক্ষরণ হয়েছে, বিষণ্নতা কাজ করছে, এর মধ্যেও আপনি আজকে নামাজ পড়েননি এমন কেউ কি আছেন? না না আমি মোটেও বলছি না- আপনি বেনামাজি হলে আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেন না। জাস্ট আমরা কতটুকু আল্লাহকে মানি সেটা বোঝার চেষ্টা করা যদিও বোঝা সম্ভব না। আসলে যে ঈমান আমারই কাজে আসে না, সে বিষয়ে অন্যের কী কাজে আসতে পারে’।
জামশেদের এমন মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। তারা এই উদ্যোক্তার তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ঘরের বাজার’ বয়কটের আহ্বান জানান। ফেসবুকে তোপের মুখে একপর্যায়ে জামশেদ তার বিতর্কিত পোস্টটি ডিলিট করে পেজটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর লাইভে এসে ফিলিস্তিন ইস্যু তুলে অযাচিতভাবে বিভিন্ন মন্তব্য করেন জামশেদ; যা মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানে। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে ক্ষমা চান তিনি।