Logo
Logo
×

সোশ্যাল মিডিয়া

‘কেন্দে দিয়েছি’ থেকে ‘জায়েদ খানের ডিগবাজি’, ২০২৩ এ ভাইরাল যত ঘটনা

Icon

বিবিসি বাংলা

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৮ পিএম

‘কেন্দে দিয়েছি’ থেকে ‘জায়েদ খানের ডিগবাজি’, ২০২৩ এ ভাইরাল যত ঘটনা

দিন যতই যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারও তত বাড়ছে। মানুষের জীবনের সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো।

অনলাইন থেকে অনেক কিছুই ট্রেন্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে অফলাইন দুনিয়াতেও।

প্রতি বছরের মতো ২০২৩ সালেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক কিছুই ভাইরাল হয়েছে, বছরজুড়ে আলোচনায় থেকেছে।

হিরো আলম, জায়েদ খান যেমন সারা বছর আলোচনায় ছিলেন। চুরির পর একজনের ভুল স্বীকার, এক মধ্যবয়সীর অভিনয় করে ডাকাত ধরার গল্প বলা, বিদেশি ভ্লগারদের বাংলাদেশে ভিডিও করতে আসা এবং সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ ঘিরেও সরগরম ছিল সামাজিক মাধ্যম। এরকমই কিছু আলোচিত ঘটনায় নজর দেয়া যাক এবার।

চোর আর ডাকাতের গল্প

গাইবান্ধায় ২০২২ সালের একেবারে শেষ দিকের একটি ঘটনা। চুরি করতে গিয়ে একজন হাতেনাতে ধরা পড়েন, এরপর জনতার ভিড়ের মধ্যে ক্যামেরার সামনে তাকে বলতে শোনা যায়, আমার ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দেন।

ব্যাস, তার বলা এই একটি লাইন ব্যাপক ভাইরাল হয়ে পড়ে। আরো অনেকেই শেয়ার দিতে থাকেন ভিডিওটি, প্রচুর কন্টেন্ট তৈরি হতে থাকে তাকে নিয়ে।

ভিডিওতে তিনি নিজের পরিচয় দেন সিদ্দিক নামে। মূলত এই ছোট্ট ভিডিওতে সরলভাবে তার ভুল স্বীকার পছন্দ করেন সবাই।

অনেকেই নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে এই লাইনটি এখনো প্রায়শই ব্যবহার করে থাকেন।

সামাজিক মাধ্যমে শাহীন নিয়ে একটি মিম

তবে ২০২৩ সালের শুরুর দিকেই নজর কেড়ে নেয় এক ডাকাতির গল্প। এই ঘটনাটা সুনামগঞ্জের ছাতকের।

সেখানে এক প্রবাসীর বাড়িতে রাতে ডাকাতরা হানা দেয়। এরপর ডাকাতি করে পালানোর সময় বাড়িতে থাকা এক প্রবাসীর উপস্থিত বুদ্ধিতে ডাকাতদলের কয়েকজন ধরা পড়ে।

পরদিন স্থানীয় নানা গণমাধ্যমে খবরটি প্রচারিত হয়। কয়েকটি গণমাধ্যম ভিডিও প্রতিবেদন করে এবং সেসবে ঐ প্রবাসীর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। সেখানে তিনি যেভাবে আঞ্চলিক ভাষায় ডাকাতদের ধরার বর্ণনা দেন তা দ্রুতই নজর কেড়ে নেয় অনেকের।

বিশেষ করে ভিডিওতে তিনি শাহীন নামের তার ছোটভাইকে যেভাবে চিৎকার দিয়ে ডাকাত ধরতে বলেন এবং একইসঙ্গে তার পাশে থাকা দুজনকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ডাকাত ধরার বর্ণনা দেন সেটি ব্যাপক ভাইরাল হয়।

এরপর শাহীন নামের লোকেরা খানিকটা বিপাকেই পড়ে যান, প্রচুর মিম শেয়ার হয় শাহীন নামটি ঘিরে।

বিদেশি ব্লগারের বাংলাদেশ ভিডিও

গত এপ্রিলে বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন অস্ট্রেলিয়ান তরুণ ভ্লগার লুক ড্যামান্ট। কারওয়ান বাজার এলাকায় স্থানীয় বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করছিলেন তিনি।

এ সময় রাস্তার পাশে এক খাবার দোকানে তার সঙ্গে পরিচিত হোন এক সাদামাটা বৃদ্ধ। ঐ ভ্লগারের সঙ্গে তার অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলা অবাক করে অনেককেই।

তবে এরপর মি. লুক দোকানিকে বিল দিয়ে বাড়তি টাকা তাকে রেখে দিতে বললেও সেটা কৌশলে নিয়ে নেন ঐ বৃদ্ধটি। তারপর রাস্তায় লুক ড্যামান্টের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তাকে বেশ বিরক্ত করতে দেখা যায়।

যা নিয়ে একটা ভিডিও বানান মি. লুক এবং “অ্যাভয়েড দিজ ম্যান ইন বাংলাদেশ”- এই ক্যাপশানে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তিনি।

ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়, পরে বিদেশিকে হেনস্থার অভিযোগে তাকে আটক করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, তার নাম আব্দুল কালু এবং এরপর থেকে নেটিজেনদের মধ্যে কালুচাচা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

এখনো নানান কন্টেন্ট এবং মিমের জন্ম হয়ে চলেছে তাকে ঘিরে।

জায়েদ খানের ডিগবাজি

নানান রকম কথাবার্তায় ২০২৩ সাল জুড়েই সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডের শীর্ষে ছিলেন অভিনেতা জায়েদ খান। নিজের পোশাক-আশাক ও তার প্রতি মেয়ে ভক্তদের ভালোবাসার কথা বিভিন্ন ভিডিওতে বলতে শোনা যায় তাকে। যা নিয়ে প্রচুর ট্রলও করেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

তবে তিনি বেশি আলোচনায় আসেন ডিগবাজি দিয়ে। এক রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক হিসেবে প্রথম ডিগবাজি দেন জায়েদ খান। মূহুর্তেই তার সেই ডিগবাজির ক্লিপ ভাইরাল হয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়।

এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে গিয়ে মঞ্চে উঠে বেশ কবার দুই হাত মাটিতে রেখে ডিগবাজি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

তবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ চলচ্চিত্রের জন্য ফেসবুকে করা এক প্রচার ভিডিওতে তার এই ডিগবাজি সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে।

যথারীতি অনেক ট্রল ও সমালোচনাও হয়েছে এটি নিয়ে।

তারকাদের ক্রিকেট

সামাজিক মাধ্যমে এ বছর বোধহয় সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলে তারকাদের একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।

বেশ ঘটা করে গত সেপ্টেম্বরে মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয় সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ-সিসিএল। যাতে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে একে অপরের মুখোমুখি হন।

টিভি ও সামাজিক মাধ্যমে লাইভ দেখানো হয় এটি। ফলে এর বিভিন্ন ছোট ছোট ক্লিপ ছড়িয়ে পড়তে থাকে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকে।

তবে শুরু থেকেই এ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আলোচনায় আসে নেতিবাচক কারণে। একে অপরের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ, খেলা বন্ধ থাকা থেকে তা হট্টগোল এমনকি মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। হাসপাতালেও শুশ্রুষা নিতে যেতে হয় অনেককে।

কয়েক দফা বন্ধ হয়ে যায় সিসিএল। গনমাধ্যমগুলোও এ নিয়ে নিয়মিত খবর প্রচার করতে থাকে, ফলে টাইমলাইনজুড়ে অনেকেই শেয়ার করেন সেসব।

আবেগের কাছে বিবেকের হার

এ বছর আলোড়ন ফেলে চট্টগ্রামের একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তবে খুব শিগগিরই সেই নৃশংস ঘটনা ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে আসে এই হত্যাকান্ডে জড়িত এক নারীর সরল স্বীকারোক্তির সাক্ষাৎকার।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন – পিবিআইকে তদন্তে সাহায্য করার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে নিহতের পুত্রবধূ ঐ নারী বলেন, আমি দোষী, আমি কি আপনাদের একবারও বলেছি আমি নির্দোষ? তখন আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনাই।

তার সাক্ষাৎকারের এই অংশটুকু ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। টিকটকে ও রিলসে ব্যাপক শেয়ার হয়েছে এটি।

সিমরিন লুবাবাকে হয়রানি

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সবকিছুই শেষ পর্যন্ত আর শুধু মজায় সীমাবদ্ধ থাকে না।

যেমন ২০২৩ সালের আলোচিত সিনেমা; মুজিব – একটি দেশের রুপকার। সেটার প্রদর্শনী শেষে সাক্ষাৎকার দেন প্রখ্যাত অভিনেতা আব্দুল কাদেরের নাতনী শিশুশিল্পী সিমরিন লুবাবা।

সেখানে কথার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দে দিয়েছি’, তার এই কথাটা নিয়ে ব্যাপক ট্রল হতে থাকে, অনেকেই হাস্যরস করেন মেয়েটিকে নিয়ে।

যা ব্যাপক প্রভাব ফেলে লুবাবা ও তার পরিবারের উপর। এই শিশুশিল্পী অনেক সাক্ষাৎকারেই বলেন এই ঘটনা মানসিক অবসাদ তৈরি করেছে তার উপর।

একপক্ষ এ নিয়ে মজা চালিয়ে গেলেও সামাজিক মাধ্যমে আরেক পক্ষ মেয়েটির পাশে দাঁড়ায়। ট্রলকারীদের সমালোচনা করে ছোট্ট মেয়েটিকে রেহাই দেয়ার কথা বলেন তারা।

এসবের বাইরেও ছোটখাটো নানান ঘটনা কখনো কখনো আলোচনায় উঠে এসেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। যার মধ্যে আছে মোয়ে মোয়ে গান।

আর বছর শেষে মানুষ ফেসবুকে বিনোদন খুঁজে পাচ্ছে সুইজারল্যান্ড প্রবাসী নামের এক স্যাটায়ার পেজে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম