মাহবুবুল হক খান, যিনি আজম খান নামে পরিচিত, তাকে বাংলা রকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাকে বলা হতো ‘পপসম্রাট’। তিনি একাধারে গায়ক, গীতিকার এবং রেকর্ড প্রযোজক ছিলেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন।
আজম খান ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবও কেটেছে ঢাকায়। তার বাবার নাম আফতাবউদ্দিন খান এবং মা জোবেদা বেগম। বাবা ছিলেন সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পাশাপাশি একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। আর মা ছিলেন একজন গায়িকা। আজম খান সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে তিনি টিঅ্যান্ডটি কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু বাবা ও ভাইবোনদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে তার পড়াশোনা ব্যাহত হয়।
আজম খান ১৯৬৭ সালে ট্রিনিটি আর্টিস্ট গ্রুপের সঙ্গে সংগীত জীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি মেজর খালেদ মোশাররফের অধীনে সেক্টর ২-এ যুদ্ধ করেন। তিনি ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন এবং সেকশন কমান্ডার হিসাবে পদোন্নতি পান। তিনি যাত্রাবাড়ী-গুলশান এলাকার মধ্যে গেরিলা অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে ‘অপারেশন তিতাস’। তাদের লক্ষ্য ছিল ঢাকায় গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইন ধ্বংস করা। যুদ্ধ চলাকালে তিনি তার বাম কানে আঘাত পান, এতে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংগঠিত একটি যুদ্ধে তার সেকশন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়।
আজম খান ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রশিক্ষণ শিবির থেকে ফিরে আসেন এবং তার সংগীত জীবন পুনরায় শুরু করেন। তিনি তার বন্ধু নীলু (লিড গিটার), মনসুর (রিদম গিটার) এবং সাদেকের (ড্রামস) সঙ্গে অগ্রণী রক ব্যান্ড উচ্চারণ প্রতিষ্ঠা করেন। তারা প্রথম ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে উপস্থিত হন। ১৯৭৫ সালে ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’ হিট গানের মাধ্যমে তারা বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করেন। এরপর ১৯৭০-এর দশকে ‘আলাল ও দুলাল’, ‘সালেকা মালেকা’ এবং ‘পাপড়ি কেন বোঝে না’-এর মতো তার আরও কয়েকটি হিট গান প্রচারিত হয়।
আজম খান ২০১১ সালে ৫ জুন ৬১ বছর বয়সে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। তিনি মুখের ক্যানসারে ভুগছিলেন, যা তার ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সংগীত শিল্পে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।