শফিউর রহমান ১৯৫২ সালের গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের একজন অমর শহিদ। তিনি ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর জনপদের কোন্নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। তার মা কানেতাতুন নেসা। কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে শফিউর রহমান চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন। দেশবিভাগের পর ১৯৪৮ সালে বাবার সঙ্গে তিনি ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা হাইকোর্টে হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানি পদে যোগ দেন।
১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে করে অফিসের উদ্দেশে রওনা হন শফিউর। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবাবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আগের দিনের বের হওয়া মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ মিছিলেও পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের রাইফেলের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। গুলি তার পৃষ্ঠভেদ করে বের হয়ে যায় এবং এতে তিনি তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ডা. অ্যালিনসন অপারেশন করেন। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় তিনি মারা যান। জানা যায়, গুলিতে শহিদ শফিউরের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিল। অপারেশনের সময় শফিউরের মা, বাবা, স্ত্রী, মেয়ে শাহনাজ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুর পরপরই পুলিশ আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করেনি। ১৯৫২ সালের ১৪ মার্চ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত সরকারি তথ্যবিবরণী অনুসারে, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট তার জানাজা পড়ান। জানাজায় তার বাবা ও ভাই উপস্থিত ছিলেন। এরপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শফিউর রহমানকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার গেঞ্জি ও পাজামা রক্তে এত ভিজে গিয়েছিল যে সেগুলো আজিমপুর কবরস্থানে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। স্ত্রীর জমানো একশ টাকা দিয়ে কবরের জায়গা কেনা হয়েছিল। শফিউর রহমানের রক্তমাখা শার্ট, কোট, জুতা সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে এগুলো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে শহিদ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শফিউর রহমানকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০০৬ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদ হওয়া অন্যান্য পরিবারের পাশাপাশি তার স্ত্রী বেগম আকিলা খাতুনকে আজীবন ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার।