আবদুল জব্বার ১৯৫২ সালের গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের একজন অমর শহিদ। তিনি ১৯১৯ সালের ১১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসান আলী এবং মাতার নাম সাফাতুন নেছা। আবদুল জব্বার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জীবন দেন। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহিদ হিসাবে ভূষিত করা হয়।
আবদুল জব্বার ছিলেন পিতা-মাতার প্রথম সন্তান। তিনি স্থানীয় ধোপাঘাট কৃষ্টবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যয়নের পর দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেন। পনের বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন তিনি। গৃহত্যাগ করে নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সেখানে জাহাজ ঘাটে এক ইংরেজ ব্যবসায়ীর সান্নিধ্যে আসেন। সেই ব্যবসায়ী তাকে একটি চাকরি দিয়ে বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) পাঠান। সেখানে দশ-বারো বছর অবস্থান করেন। পরবর্তীকালে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে (পিএনজি) যোগদান করেন। পিএনজি ভেঙে দেওয়া হলে পরবর্তীকালে তিনি আনসার বাহিনীতে যোগদান করেন। ময়মনসিংহ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে নিজ গ্রামে ‘আনসার কমান্ডার’ হিসাবে কাজ করেন।
আবদুল জব্বারের শাশুড়ি ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তাকে নিয়ে তিনি ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। হাসপাতালে তার শাশুড়িকে ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থলে (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী সিরাজুল ইসলামের রুমে (২০/৮) ওঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে শাশুড়ির রোগের ব্যাপারে কথা বলে আবদুল জব্বার মেডিকেলের গেটের বাইরে কিছু ফল কিনতে যান। সে সময় তিনি দেখেন রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বেশকিছু ছাত্র-জনতা ব্যানারসহ সমবেত হয়েছেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে অনবরত স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। আবদুল জব্বার আর স্থির থাকতে পারেননি। তিনি অসুস্থ শাশুড়ির জন্য ফল নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ব্যানার হাতে মিছিলের অগ্রভাগে এসে দাঁড়ান। ওই সময়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গোলাগুলি শুরু হয়। এতে আবদুল জব্বার গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আবদুল জব্বারকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা হিসাবে বাংলা শাসনতান্ত্রিক স্বীকৃতি লাভ করে। মহান ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় আবদুল জব্বারকে বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে।