সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফয়েজ আহমদ ১৯২৮ সালের ২ মে ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের বাসাইলভোগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। তার পিতার নাম গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এবং মাতার নাম আরজুদা বানু।
ভারত বিভাজনের পর ফয়েজ আহমদ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক আইয়ুব খানের আমলে তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ৪ বছর কারাবন্দি ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের আমলেও একবার কারাভোগ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেন।
১৯৪৪ সালে কলকাতার সওগাত পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে ফয়েজ আহমদ কর্মজীবন শুরু করেন। ভারত বিভাজনের পর ঢাকায় চলে আসেন। তিনি পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে মূলধারার সাংবাদিকতা শুরু করেন। সে সময় তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ ও পরবর্তী সময়ে পূর্বদেশ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫০ সালে ‘হুল্লোড়’ এবং ১৯৭১ সালে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে পিকিং রেডিওতে বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য নিযুক্ত হন। এছাড়া তিনি ঢাকা রেডিওতে ১৯৫২-৫৪ সালে ‘সবুজ মেলা’ নামে ছোটদের বিভাগটি পরিচালনা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে দৈনিক বঙ্গবার্তার প্রধান সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন। সাংবাদিকতা করার সময় থেকে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট গ্যালারি ‘শিল্পাঙ্গন’।
ফয়েজ আহমদ প্রধানত শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া ও কবিতা লিখেছেন। তার বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশ। ফয়েজ আহমদের বইগুলোর মধ্যে ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ উল্লেখযোগ্য। এই বই সিরিজের বাকি তিনটি হলো : ‘সত্যবাবু মারা গেছেন’, ‘নন্দনে নন্দিনী’ ও ‘এবং তারপর’। ছড়ার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘গুচ্ছ ছড়া’, ‘রিমঝিম’, ‘জোনাকী’, ‘একালের ছড়া’ ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি চীনসহ বিভিন্ন দেশের পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে হো চি মি নের জেলের কবিতা উল্লেখযোগ্য।
ফয়েজ আহমদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, নুরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।