মুহম্মদ আসফ উদ-দৌলা রেজা

নাজনীন মহল অঞ্জনা
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আমার আব্বার পুরো নাম রেজাউল মুস্তাফা মুহম্মদ আসফ উদ-দৌলা রেজা। তার পড়ালেখা শুরু বগুড়ার চান্দাইকোনা স্কুলে; পরে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে ইতিহাসে বিএ অনার্স শেষে এমএ-তে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতা-শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত চান্দাইকোনা হাই স্কুলে; পরে ঢাকায় সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুলে। সমাজ ও দেশ সেবার লক্ষ্যে চলে এলেন সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লিখেছেন, ‘...আসফ উদ-দৌলা রেজা সত্য ও সুন্দরের সাধনায় নিমগ্ন হতে পেরে আনন্দ বোধ করেছিলেন।...তার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে তিনি আপসহীন নিষ্ঠার সঙ্গে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে সমাজকে বর্তমান সম্পর্কে সজাগ ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। গণতন্ত্রের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ নিষ্ঠা। এদেশের মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয় লক্ষ করে শিউরে উঠেছেন। প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন মানুষের মূল্যবোধ সম্বন্ধে...তরুণকে সতর্ক ও সজাগ করার।’
তার জীবনের সব কর্মকাণ্ডের অন্তরালে সমাজকল্যাণ বোধ সবসময়ই ক্রিয়াশীল ছিল। সেই মানুষটির প্রাপ্য সম্মান দিতে আমাদের কার্পণ্যের শেষ নেই! তরুণ সাংবাদিকদের অনেকেই হয়তো বা ‘সাংবাদিকতা জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র’ আসফ উদ-দৌলা রেজার নামই জানেন না!
সাহিত্যিক ও পল্লি সাহিত্য গবেষক অধ্যাপক মনসুর উদ্দীন আব্বার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেছেন, ‘...সাংবাদিকতা ছিল তার কাছে একটি মিশন। এ মিশন অব্যাহত রাখতে গিয়ে প্রায় সব সরকারের রোষানলে তাকে পড়তে হয়েছে।...সংবাদপত্র যে এ দেশে শিল্প হতে পারে সেটা প্রমাণ করেছেন আসফ উদ-দৌলা রেজা ও তার ইত্তেফাক।’
দৈনিক আজাদে সাংবাদিকতা শুরু করলেও সরকারি তোষণনীতির সঙ্গে আপস করতে না পেরে ১৯৫৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দিয়ে আমৃত্যু (১৯৮৩) জড়িয়ে ছিলেন প্রাণপ্রিয় ইত্তেফাকেই। ১৯৭০ সালে কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজউদ্দীন হোসেন ও বার্তা সম্পাদক আসফ উদ-দৌলা রেজার গণতান্ত্রিক চেতনা আর সাহসী কলমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ইত্তেফাক ছিল অসহযোগ আন্দোলনে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের মুখপত্র। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ আব্বার মৃত্যুতে বেগম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা বলেছেন, ‘ইত্তেফাক ভবনের প্রতিটি ইটের ভাঁজে রেজা সাহেবের ঘাম মিশে আছে। তিনি কেবল দৈনিক ইত্তেফাকের দায়িত্ব পালন করেননি, ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স এবং আমার পরিবারের দায়িত্ব পালনে আমি তাকে সবসময় অভিভাবক হিসাবে কাছে পেয়েছি।’
সাংবাদিক, কবি আল মুজাহিদী লিখেছেন, আমাদের সাংবাদিক অঙ্গনের অতি আপন মানুষ আসফ উদ-দৌলা রেজা। তার সান্নিধ্য যারা পেয়েছি, তাদের অহংকার করার আছে।... ইত্তেফাকের মতো এত বড় একটি ইনস্টিটিউশনকে কখনো নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেননি, করতে শেখেননি। শিরাজী দৌহিত্র আসফ উদ-দৌলা রেজার ধাতে তা সওয়ার নয়।’ সব সরকারপ্রধানই আব্বাকে যেমন বিপর্যয়ে ফেলতেন, তেমনি তারাও আতঙ্কিত থাকতেন আব্বার কারণে। তিনি চীন, জাপান ও তুরস্ক-এই তিন দেশে রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ছিল তুরস্ক-১৯৬৫ সালে; যে দেশে মাতামহ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী যুদ্ধে গেছেন এবং সুলতান কর্তৃক ‘গাজী এ বলকান’ খেতাবে সম্মানিত হয়েছেন ১৯১৩ সালে। আব্বা রাজনীতি করতেন না, কিন্তু আমাদের বাসায় আনাগোনা ছিল শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা এবং ছাত্র-নেতাকর্মীদের।
নাজনীন মহল অঞ্জনা : মুহম্মদ আসফ উদ-দৌলা রেজার সন্তান