Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

বে-নজির আহমদ

Icon

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতিসচেতন এবং মুসলিম সমাজের ঝড়োপাখি হিসাবে অভিহিত কবি বে-নজীর আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৩ সালের ২৯ অক্টোবর, বর্তমান নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে। তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সাহস ও উদারতা। তার জীবনী পর্যালোচনা করলে আমরা তাকে একাধারে একজন কবি, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক হিসাবে দেখতে পাই।

যুবক বয়সে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে গ্রেফতার হন। পরবর্তী জীবনে তিনি সাংবাদিকতা ও লেখালেখি করেছেন। বে-নজীর আহমদের সাংবাদিক জীবন শুরু হয় মাসিক সাহিত্যপত্র নওরোজ (১৯২৭) সম্পাদনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে। পরে তিনি দৈনিক আজাদ ও দৈনিক নবযুগ (১৯৪১) পত্রিকায়ও সাংবাদিকতা করেন।

সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে বে-নজীর আহমদ ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের রীতির অনুসারী। তবে তার রচনার মূল সুর ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদ। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে কবিতা ‘বন্দীর বাঁশী’ (১৯৩২), ‘বৈশাখী’ (১৯৪৫) এবং প্রবন্ধ ‘ইসলাম ও কম্যুনিজম’ (১৯৪৫) অন্যতম। তার অন্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো : ‘আশ্চর্য আর আশ্চর্য’, ‘কমলমণি’, ‘কোরানের গল্প’ ইত্যাদি। তিনি বেশকিছু গান ও গজল রচনা করেছেন। তার বিভিন্ন লেখা বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ছাত্রাবস্থায় তার কবিতা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। তবে যৌবনে তিনি কবিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন ‘বন্দীর বাঁশী’ দিয়ে। নবীন কবিকে অভিনন্দন জানান কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। ‘বন্দীর বাশী’তে নজরুলের বিদ্রোহী ও বিপ্লবী চেতনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। স্বয়ং কবিও এটি স্বীকার করেছেন। ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্তে’ নজরুল অনুসারী কবি হিসাবে বে-নজীর আহমদকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফরাসি মনীষী রুশোর ‘স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, তবু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত’-এই ভাবসত্যের ওপরেই তার ‘বন্দীর বাঁশী’র মূল বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত।

কবি বে-নজীর আহমদ ছিলেন ‘জীবনের জন্য শিল্প’ নীতিতে বিশ্বাসী। বাংলার দুটি ঘটনা বিশ্বযুদ্ধ ও মন্বন্তর তার কবিতায় প্রভাব ফেলেছে। বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের চিত্র উঠে এসেছে ‘আমার সাগরে জেগেছে উর্মি’ ও ‘মৃত্যুর নিশীথ শেষে’ কবিতায়। কবি ভীষণভাবে আহত হয়েছেন মন্বন্তরের (চল্লিশের দশকের দুর্ভিক্ষ) অভিঘাতে। এর প্রকাশ ঘটেছে তার ‘কংকাল’ কবিতায়।

বে-নজীর আহমদ কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৪ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৭৯ সালে একুশে পদক। ১৯৮৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৯টায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম