সাংবাদিকদের ডিএসই চেয়ারম্যান
জুনের মধ্যে গতি শেয়ারবাজারে
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ পিএম
দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগে যতটা খরা, তার চেয়ে বেশি খরা শেয়ারবাজারে। এর কারণ হলো- অতীতের নানা অনিয়ম, অসংগতি ও আর্থিক ক্ষতির ফলে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থাশীল হতে পারছেন না। তবে অবস্থার পরিবর্তনে কাজ করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আশা করছি, চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরে আসবে।
শনিবার রাজধানীর পল্টনে আলরাজী কমপ্লেক্সে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত আলোচনায় ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তার মতে, কারসাজি ও সুবিধাভোগী লেনদেন এই দুটি বিষয় শেয়ারবাজারের অন্যতম সমস্যা।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও অতিথির বক্তব্যভিত্তিক এ অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিএমজেএফ টক’। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজের প্রধান মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছিল শেয়ারবাজারে সূচক ঠিক রাখা। বিনিয়োগকারী, সরকারের শীর্ষ পর্যায় ও বিভিন্ন সংস্থার চাপে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। এ কারণে সূচকের পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন মূল্যস্তর) আরোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ফ্লোর প্রাইস শেয়ারবাজারের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় বিনিয়োগকারীও এখনো ফ্লোর প্রাইস আতঙ্কে ভুগছেন। তাই শেয়ারবাজারে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না।
মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত বিনিয়োগ না হলে শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগ বাড়বে না। ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিল-বন্ডের উচ্চ সুদ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে বর্তমানে বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে প্রকৃত বিনিয়োগে যতটা খরা, তার চেয়ে বেশি খরা শেয়ারবাজারে। কারণ অতীতের নানা অনিয়ম, অসংগতি ও আর্থিক ক্ষতির কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা সেভাবে আস্থাশীল হতে পারছেন না। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ডিএসই।
মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, এসব কার্যক্রমের বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যাবে। তাই আশা করছি, জুনের মধ্যে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরে আসবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে ডিএসইর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চারটি কাজে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এগুলো হলো- সরকারের দিক থেকে শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, দেশি-বিদেশি কিছু ভালো কোম্পানিকে যত দ্রুত সম্ভব বাজারে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণাত্মক হিসাব (নেগেটিভ ইকুইটি) সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং শেয়ারবাজারে সুবিধাভোগী (ইনসাইডার) লেনদেন ও কারসাজি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, যে কোনো সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাজারে আইনকানুনসহ অনেক কিছুরই সংস্কার করতে হবে। সংস্কারকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা যাতে বাজারবিমুখ হয়ে না পড়েন, সেটিকেও মাথায় নিতে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু সংস্কারের কাজ করছি।
কারসাজি ও সুবিধাভোগী লেনদেন এই দুটি বিষয়কে শেয়ারবাজারের অন্যতম সমস্যা বলে আখ্যায়িত করেন ডিএসই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অতীতে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে কারসাজির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ স্টক এক্সচেঞ্জের ছিল না। স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা ছিল অনেকটা পোস্ট অফিসের মতো। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকাকে বাজার উন্নয়নের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে চাই। এজন্য কিছু আইনি সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পরিদর্শন বা তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন লাগে। সেটি যাতে না লাগে, সেজন্য আমরা আইনি ক্ষমতা বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাজারের কারসাজি রোধে আমাদের অবস্থান শূন্য সহনশীলতা বা জিরো টলারেন্স। এ ধরনের ঘটনায় ডিএসইর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।