পাঁচ বছরের সর্বনিম্নে শেয়ারবাজার
বিনিয়োগকারীদের কান্না কেউ শুনছে না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ থামছে না। সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৬৬ পয়েন্ট কমেছে। গত আড়াই মাসে সূচক কমেছে ১ হাজার ১১৭ পয়েন্ট এবং বাজারমূলধন কমেছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর বাজারের বর্তমান অবস্থান গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। সোমবারও বিনিয়োগকারীরা ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের কান্না কেউ শুনছে না।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগষ্টের পর অর্থনীতির দুই একটি খাত কিছুটা পরিবর্তন হলেও শেয়ারবাজার ব্যতিক্রম। পুরোবাজার নেতিবাচক অবস্থায়। চলতি বছরের ১১ আগষ্ট ডিএসইর মূল্যসূচক ছিল ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট। সোমবার পর্যন্ত তা কমে ৪ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসেবে আড়াই মাসে সূচক ১ হাজার ১১৭ পয়েন্ট কমেছে। ওই সময়ে গড় লেনদেন ছিল ৭শ কোটি টাকায়। কিন্তু বর্তমানে তা ৩শ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১১ আগষ্ট ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা কমে ৬ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে বাজারমূলধন ৭০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। মৌলভিত্তি সম্পন্ন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
তবে নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে ভিন্ন কথা। যারা আগে বাজারে কারসাজি করেছিল, তাদের বেশ কিছু লোকজনের ব্যাপারে বিএসইসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে ওই চক্রটি বাজারে পরিকল্পিতভাবে পতন ঘটাচ্ছে। এদিকে ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে পরপর কয়েকদিন ইতিবাচক হয় বাজার। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এ সময়ে বিএসইসিতে পরিবর্তন আসে। একজন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দিয়ে পরেরদিন আবার পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা একেবারেই অনভিজ্ঞ। বাজারের ব্যাপার কোনো ধারণা নেই। বাজারের অনেক পরিভাষাই তারা বুঝেন না। নতুন কমিশনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ছিল বির্তকিত। স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ গঠন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। বিষয়টি বাজার সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে নেয়নি। ফলে টানা দরপতন শুরু হয়। এখনও তা অব্যাহত আছে।
একক দিন হিসেবে ডিএসইতে সোমবার ৩৯৭টি কোম্পানির ১৭ কোটি ৩৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৩৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ১০৫টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২৪৬টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৬ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৬ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এদিকে পতনের প্রতিবাদে সোমবারও ডিএসইর সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময়ে তারা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকছুদের পদত্যাগ দাবি করেন।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : ডিএসইতে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল পলিমার, তৌফিকা ফুড, ইসলামি ব্যাংক, ফারইস্ট নিটিং, মালেক স্পিনিং, খান ব্রাদার্স পিপি, ট্যাকনো ড্রাগ, জিপি ও ব্যাক ব্যাংক। ডিএসইতে সোমবার যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো- ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্কয়ার নিট, ডেসকো, কপার টেক, ইভিন্স টেক্সটাইল, ট্যাকনো ড্রাগ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট হোল্ডিং ও ফারইস্ট নিটিং। অন্যদিকে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো- জেনেক্স ইনফোসিস, দুলামিয়া কটন, সলভো কেমিক্যাল, ভিএফএস থ্রেড, জাহিন স্পিনিং, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মালেক স্পিনিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।