Logo
Logo
×

অর্থনীতি

সংস্কার না হলে রাজস্ব ক্ষতি ৫০ লাখ কোটি টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০০ পিএম

সংস্কার না হলে রাজস্ব ক্ষতি ৫০ লাখ কোটি টাকা

ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হলে ২০৪১ সালের মধ্যে রাজস্ব ক্ষতি হবে ৫০ লাখ কোটি বা ৫০ ট্রিলিয়ন টাকা। এছাড়া সংস্কারের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে কর ছাড় বাদ দিলে আগামী চার বছরে ৬০ হাজার কোটি বা ৬০০ বিলিয়ন টাকা আয় করা সম্ভব। এজন্য টেকসই উন্নয়ন করতে হলে কর ব্যবস্থা সংস্কারের বিকল্প নেই। 

পাশাপাশি বাংলাদেশ যেহেতু উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে চায় সেহেতু এসব কার্যক্রম না করলে দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই কর প্রশাসন, কর আদায় ব্যবস্থা সংস্কার, সুশাসন নিশ্চিত এবং অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। 

মঙ্গলবার পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন : ইমপারেটিভস অ্যান্ড রোডম্যাপ’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কামরান টি. রহমান, পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার প্রমুখ। 

আহসান এইচ মনসুর বলেন, কর যা আদায় হয় তার ৪৩ শতাংশই চলে যায় বেতন, ভাতার টাকা পরিশোধে। এ ছাড়া সরকার যে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণ করতে হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ঋণ সংকুচিত হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের রাজস্ব জিডিপির শতাংশ হিসাবে বিশ্বের সর্বনিম্ন। এত দুর্বল রাজস্ব আদায় স্বল্প মেয়াদে অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং মধ্য মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০৪১-কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হলে দেশের রাজস্ব আহরণ ভারত ও কম্বোডিয়ার কাছাকাছি দাঁড়াবে। কিন্তু রাজস্ব সংস্কার পদক্ষেপ বাণিজ্য করের ওপর নির্ভর করলে হবে না। কারণ, বাণিজ্য কর রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি বহুমুখীকরণকে নিরুসাহিত করে। ফলে আগামীতে কর যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। যদি দেশীয় কর রাজস্ব জিডিপির ২ শতাংশ বাড়ানো যায় তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমান স্তরের ওপর শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে। 

সেমিনারে বলা হয়, বাণিজ্য করের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারত ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ৩ দশমিক ১ শতাংশ শুল্ক রাজস্বের তুলনায় কম থাকে। এসব দেশ বাণিজ্য করের ওপর নির্ভর করে না। দেশের রাজস্ব ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে, যেমন শুল্কমাত্রা যৌক্তিকীকরণ করার প্রয়োজন। এ ছাড়া পোশাক খাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভালো অবদান রেখেছে। কিন্তু পোশাক খাতের বাইরে অধিকাংশ রপ্তানি শিল্পই এমন সুবিধা পাচ্ছে না। ফলে অসহযোগিতামূলক নীতি তৈরি হয়েছে। এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম এবং মুনাফা বেশি হওয়ায় পোশাক খাতের বাইরে শিল্প রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। জাতীয় শুল্কনীতির আবদ্ধ সীমাবদ্ধতার কারণে রপ্তানি বহুমুখীকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আগামী বাজেটে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবহারের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ব্যবহারের বিষয়ে এখানে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। চলমান সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে অনেক কিছুই সহজীকরণ হবে। যেমন আইবাস সিস্টেম চালু হওয়ায় এখন বাজেট প্রণয়ন সহজ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করছাড় যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। ২৫ বছর আগের প্রণোদনা এখনো কেন থাকবে? আমরা সন্তানদের কি ২৫ বছর পর্যন্ত পকেট মানি দেই? রাজস্ব আদায় বাড়াতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে কর সংগ্রহ করতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো দরকার। অর্থনৈতিক কাঠামো এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে এতে কোনো কোনো জায়গায় কম্প্রোমাইজ করতে হয়। সুদহার ব্যাংক রেটের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। করনীতি এবং সংগ্রহ দুটিকে আলাদা করা দরকার। এক্ষেত্রে রাজস্ব প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও নিয়ে হতাশার কিছু নেই। মালদ্বীপ, নেপালসহ অনেক দেশ বেশি কর আদায় করতে পারে কারণ তাদের মূল উৎস পর্যটন খাত। সেখানে অনেক বেশি কর বসানো যায়। তাই এক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক দেশের তুলনায় আমরা এগিয়ে আছি। মনে রাখতে হবে সরকার যত বেশি ঋণ নেবে তত বেশি কার্যক্রম বাড়বে। রাজস্বও বেশি আদায় হবে। তাই ঋণ বিষয়ে হতাশার কিছু নেই। এনবিআরের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে ভালো লাগে না। কারণ, অভিযোগ শোনার মতো কাজ তো আমরা করি না। আমি সাফাই গাচ্ছি না। শিল্পের জন্য আমরা সহায়তা দিচ্ছি। ফলে এ দেশেই এখন মোবাইল, এসি, ফ্রিজ, লিফট, অটোমোবাইল শিল্পের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। অটোমেশনের কাজ চলছে। এতে কর জিডিপি রেশিও অবশ্যই বাড়বে। ইতোমধ্যে টিআইএনধারীর সংখ্যা বেড়ে ১ কোটি ২০ লাখ হয়েছে। এর মধ্যে রিটার্ন দেওয়া বেড়ে হয়েছে ৩৯ লাখ। ভ্যাট প্রদানকারী ২ লাখ থেকে বেড়ে ৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। তবে কর ছাড়ের জন্য অনেক বড় তদবির আছে আমাদের কাছে। সবার সবকিছুই সহ্য হয় কিন্তু করের লোড নিতে পারে না। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, যারা কর দিচ্ছেন শুধু তাদেরই চাপ দেওয়া হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ভয়ংকর, যারা অনেক বেশি ব্যবসা করছে। কিন্তু কর দেয় না। এখন শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। গ্রামগঞ্জে যেতে হবে। সেখানে মানুষ অনেক বেশি আয় করে। কর আদায় দুর্ভোগমুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক সুদ এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ১৪ শতাংশের ওপরে সুদ দিতে হয়। এ দেশে সুশাসন জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ডলার রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা চাচ্ছেন। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম