একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে ছেলের থেকে ভালো ফলাফল বাবা-মায়ের
এমএ আলিম রিপন, সুজানগর (পাবনা)
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ পিএম
পাবনার সুজানগরে মা-বাবা ও ছেলে একইসঙ্গে এবার এইচএসসি পাশ করেছেন। বাবা বিএম ফারুক হোসেন জিপিএ-৪.৭১, মা মোছা. জাকিয়া সুলতানা জিপিএ-৪.২৫ এবং ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম জিপিএ- ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
মঙ্গলবার এইচএসসির ফল প্রকাশের পর এমন সাফল্যে পরিবার-পরিজনসহ এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন বাবা-মা ও ছেলে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখা থেকে বাবা ও মা এবং ছেলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ইংলিশ ভার্সন) থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু জানান, বিএম ফারুক ও তার স্ত্রী জাকিয়া তার প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং ছেলেসহ একইসঙ্গে বাবা-মা পাশ করার এ সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।
বাবা-মায়ের সঙ্গে এইচএসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় পাশ করে উচ্ছ্বসিত ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম। তিনি জানান, একই বছর আমার সঙ্গে আমার বাবা ও মা এইচএসসি পাশ করায় সত্যিই আমি অনেক খুশি।
মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমার খুব ইচ্ছা ছিল এইচএসএসসি পাশ করার। কিন্তু মা-বাবার সংসারে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পরে আমি আমার স্বামী ও ছেলের পরামর্শে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখায় ভর্তি হই। আমার সঙ্গে স্বামীও ভর্তি হন। এইচএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছি, তাই আমি আনন্দিত।
বাবা বিএম ফারুক হোসেন বলেন, অল্প বয়সে ২০০২ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর সংসারের হাল ধরার কারণে আর লেখাপড়া হয়ে উঠেনি। আমার ২ ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী ও আমি একইসঙ্গে কলেজে ভর্তি হই এবং স্ত্রী ও বড় ছেলের সঙ্গে একই বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করে আমি অনেক খুশি।
তিনি আরও বলেন, সমাজে চলতে অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। সত্যি কথা বলতে লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। পাশ করার ফলে আমাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি এবং আমার স্ত্রী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পড়ালেখা চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে সুজানগর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুস শুকুর বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা নয়। এমনকি বিয়ে-সংসার কিংবা সন্তান লেখাপড়ায় অন্তরায় হতে পারে না। এমনটাই করে দেখালেন ফারুক-জাকিয়া দম্পতি।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, একই সঙ্গে বাবা-মা ও ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আমাদের সামনে তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের এমন কৃতিত্বকে সবার সম্মান করা উচিত। তাদের দেখে অন্যরাও উচ্চশিক্ষায় অগ্রসর হবেন বলে প্রত্যাশা করি।
উল্লেখ্য, পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামের মৃত জানু বিশ্বাসের ছেলে বিএম ফারুক হোসেন ২০০২ সালে ১০ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় বিয়ে করেন উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের ময়েন উদ্দিন মোল্লার কন্যা মোছা. জাকিয়া সুলতানাকে। ২০০৩ সালে তাদের দুজনেরই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় এবং সাংসারিক চাপে শেষপর্যন্ত আর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি তাদের। পরে ২০২২ সালে খয়রান লুকমান হাকিম টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন এই দম্পতি।