আমরা কি-বোর্ডে যে বিন্যাস বা লেআউট ব্যবহার করি, সেটার নাম কোয়ার্টি। কি-বোর্ডে বাঁ হাতের ওপরের দিকের অক্ষরগুলো দেখুন। ইংরেজিতে Q, W, E, R, T ও Y অক্ষর ছয়টি পাশাপাশি পাবেন। এই ছয় অক্ষর এক করেই বিন্যাসটিকে বলা হয় কোয়ার্টি। কেবল কম্পিউটারেই নয়, স্মার্টফোনেও এখন একই বিন্যাসের ভার্চুয়াল কি-বোর্ড ব্যবহার করা হয়।
১৮৭৩ সালে রেমিংটন টাইপরাইটারটি প্রথম যেদিন বাজারে ছাড়া হয়, বর্তমানের জীবিত ব্যক্তিদের কেউ তখন জন্মাননি। অথচ ১৪৮ বছর পর আজও আমরা এই বিন্যাস আঁকড়ে পড়ে আছি। আধুনিক কি-বোর্ডে অক্ষরের বিন্যাস বেছে নেওয়া হয়েছে উনিশ শতকের এই যন্ত্র থেকে।
সেই সময় টাইপরাইটারের অক্ষরগুলো এভাবে সাজানোর পেছনে কারণ তো ছিল বটেই! তবে মূল কারণ যে কোনটি, তা নিয়ে দুই ধরনের তত্ত্ব পাওয়া যায়। একটি তত্ত্ব হলো, শুরুতে টাইপরাইটারে অক্ষরগুলো বর্ণানুক্রমিক ছিল। তবে সে সময় কেউ কেউ কি-বোর্ডে এত দ্রুত টাইপ করতেন যে বোতামগুলোর নিচে যুক্ত রড একটি আরেকটিতে আঘাত করত। কখনো কখনো আটকে গিয়ে বন্ধ হয়ে যেত টাইপিং। সেই সমস্যা সমাধানে কোয়ার্টি কি-বোর্ডের প্রচলন করা হয়।
কোয়ার্টি বিন্যাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্ষরগুলো দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেন টাইপ করার সময় নিচের রডগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি বাড়ি না খায়। রেমিংটন কি-বোর্ডের জনপ্রিয়তার সঙ্গে জনপ্রিয় হয় কোয়ার্টি কি-বোর্ডও।
তবে জাপানি গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওপরের তত্ত্বটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন ‘স্মিথসোনিয়ান’ ম্যাগাজিনের জিমি স্ট্যাম্প। কোয়ার্টি বিন্যাসসহ কি-বোর্ডের পেটেন্ট প্রথম করেন ক্রিস্টোফার শোলস। তবে কেবল তিনিই বিন্যাসটির উদ্ভাবক নন বলে জানিয়েছেন স্ট্যাম্প। বরং টেলিগ্রাফ অপারেটররা মোর্স সংকেতের ইংরেজি প্রতিলিপি তৈরির জন্য টাইপরাইটার ব্যবহার করতেন। তাদের সুবিধার্থে দ্রুত এবং সহজে টাইপ করার জন্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে কোয়ার্টি কি-বোর্ড। অর্থাৎ অনেক গবেষণার পর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে উদ্ভাবিত হয় কোয়ার্টি।
এরপর নতুন ধরনের লেআউট প্রচলনের চেষ্টা যে হয়নি, তা নয়। তবে একে তো কোয়ার্টি কি-বোর্ডে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। দ্বিতীয়ত, একবার শিখে গেলে এটা বেশ সহজও। আর অনেকে তো না দেখেই দিব্যি কি-বোর্ডে ঝড় তুলতে পারেন।
সূত্র: দ্য আটলান্টিক, গিজমোডো