
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো সিয়াম বা রমজান। ইসলাম মানব জীবনের আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার যে পদ্ধতি নির্ণয় করে দিয়েছেন, পবিত্র কুরআনের পরিভাষায় তারই নাম সিয়াম বা রমজান।
পবিত্র রমজান মাস মুমিনের ঈমান-আমলের তরবিয়তের বিশেষ মাস এবং খায়ের ও বরকতের বসন্তের মাস। এ মাস পাপ মোচনের, ঝগড়া বর্জনের, তাকওয়া অর্জনের, নেকি বাড়ানোর, কুরআনের হক আদায়ের, সর্বোপরি আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত।
সহিহ হাদীসে এসেছে, ‘রমজান মাসে আসমানের দরজাগুলো (অন্য বর্ণনায় রহমতের দরজাগুলো) খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং খবীস শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’
পাপ ক্ষমার সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। রমজানের দিনগুলোতে আমরা যদি একান্তই আল্লাহর জন্য রোজা রাখি এবং নিজের দোষ-ত্রুটির ক্ষমা চাই, তাহলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন এবং অতীতের সব গুনাহও ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে এরশাদ করেন, ‘আর তিনিই (আল্লাহ) তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ শুরা: ১৫)
গুনাহ মাফের বিশেষ তিনটি আমল
রমজান মাসের বিশেষ তিনটি আমল গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম:
(১) ফরজ সিয়াম (রোজা) মহান আল্লাহ যা শুধু রমজান মাসেই মুসলিম জাতিকে দান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের সিয়াম রাখে, তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যায়।(বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৫)
(২) ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যাবে। বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৭
(৩) লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত, যা রমজান মাস ব্যতীত বছরের আর কোনো মাসে পাওয়া যায় না। এ রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। এই রাতে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবেকদরে ক্বিয়ামুল লাইল করবে ঈমান ও এহতেছাবের সঙ্গে, আল্লাহপাক তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।(বুখারি, হাদিস নম্বর ২০১৪)
পবিত্র রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে বান্দার দোয়া কবুল হয়। যেমন ইফতারের আগমুহূর্তে। এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক।
রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)
তাই আমাদের উচিত রমজানে হতভাগা না হয়ে তাওবা করে নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়া।