Logo
Logo
×

রমজান

রোজা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ

Icon

মাওলানা তোফায়েল গাজালি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০১:১১ এএম

রোজা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ

‘রমজান’ আরবি শব্দ, যার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। রমজান আমাদের জীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। তাই রমজানকে রমজান নামে অভিহিত করা হয়। রমজান আসে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। রমজানের সাধনায় জাগ্রত হয় মুসলিম উম্মাহর ইমানের চেতনা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমান ও এখলাছের সঙ্গে যারা রোজা রাখে, মহান আল্লাহ তাদের অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘আমি নবিজি (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলাম, হে রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন নবিজি (সা.) বললেন, তুমি সিয়াম সাধনা কর। কারণ, এর কোনো তুলনা হয় না।’ ইতিহাস থেকে জানা যায়, এরপর সাহাবি আবু উমামার ঘরে দিনে আর কোনোদিন রান্না হয়নি।’

রমজান মুসলমানদের নিয়ে আসে এক বিশেষ প্রশিক্ষণের আওতায়। প্রতিদিন শেষ রাতে জেগে ‘সেহরি’ খাওয়া, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকা, সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা, তারপর রাতের একটি বিশেষ অংশ তারাবিহ ও তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করা। এভাবে দীর্ঘ ৩০টি দিন প্রশিক্ষণটি চালু থাকে। এটি হলো মূলত স্রষ্টার প্রতি আশরাফুল মাখলুকাত মানবসন্তানদের পরম আনুগত্য, সংযম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আন্তরিকতার অনুশীলন।

সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, এই মাহে রমজানে চারটি কাজ অবশ্য করণীয়। দুটি কাজ তো এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের পরওয়ারদেগার সন্তুষ্ট হন। আর অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গন্তব্য নেই। এ চারটির একটি হলো বেশি বেশি কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ কার আর দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা। এ দুটি কাজ আল্লাহপাকের নিটক অতি পছন্দনীয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ কাজ হলো বেশি বেশি জান্নাতের আশা করা আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দুটি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত জরুরি। রোজাদারকে কিয়ামতের দিন আমার হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করানো হবে, এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে আর কখনো পানির পিপাসা অনুভব করবে না। (ইবনে খুজাইমা)।

অন্যায় অসুন্দর কাজ থেকে আত্মরক্ষার জন্য দোজখের শান্তি থেকে মুক্তিলাভের জন্য রোজা হলো ঢালস্বরূপ। যেভাবে মানুষ ঢাল দ্বারা আত্মরক্ষা করে থাকে তেমনিভাবে রোজা দ্বারা দুর্বৃত্ত শয়তানের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করা যায়। তবে তার জন্য শর্তও রয়েছে, প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন- ‘যতক্ষণ না সে ঢাল কেউ বিনষ্ট করে ফেলে’। প্রিয় নবি (সা.)-এর কাছে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রাসুলুল্লাহ! রোজার ঢাল কীভাকে বিনষ্ট হয়? তিনি এরশাদ করেছেন, মিথ্যা ও পরনিন্দার দ্বারা রোজার ঢাল বিনষ্ট হয় তথা এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। অতএব রোজার হেফাজত করতে হলে মিথ্যা কথা, পরনিন্দা প্রভৃতি পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই রোজা শান্তি ও কল্যাণের কারণ হবে।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি, জান্নাতলাভ এবং আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক অতিবাস্তব ও কার্যকর পন্থা সিয়াম সাধনা। চরম সাফল্য লাভের একটি সুবর্ণ সুযোগ। প্রিয় নবি (সা.) এরশাদ করেছেন, রমজানের প্রত্যেক দিন ও রাতে দোজখের বন্দিদের মুক্তি প্রদান করা হয় আর প্রত্যেক মুসলমানের একটি দোয়া আল্লাহতায়ালার কাছে অবশ্যই কবুল হয়।

লেখক: মহাপরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম, চানপাড়া, উত্তরখান, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম