Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

গল্প

সামান্য ভুল

Icon

আরিফ মজুমদার

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সামান্য ভুল

জালালের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। চুলে হালকা পাক ধরেছে। ছা-পোষা জীবনে বিস্তর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই তো সে শুরু করেছিল ঘটকালি পেশা। স্বল্পকালীন নতুন পেশায় তার যতটুকু বাড়তি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো, অনেকে হয়তো সারা জীবনেও ততটুকু বুঝে উঠতে পারে না। সংসারের নানামুখী চাহিদা আর চাপ সামলাতে গিয়ে একই অফিসের ফাইলে মুখ গুঁজে হাত-পা গুটিয়ে কতজনের নিস্তরঙ্গ জীবন কাটে! জালাল বোধহয় ঠিকই উপলব্ধি করেছিল-একটু ভিন্ন পেশায় চেষ্টা না চালালে তো আর বৈচিত্র্য আসবে না তার তুচ্ছ জীবনে! সামান্য ভুল-ত্রুটি হলেও দোষ কী? জীবনী শক্তিও দ্রুত কমছে, লোভ-লালসারও কেমন অপব্যয়! ভুল-ত্রুটি, লোভ-লালসা, প্রেম-কাম, হিংসা-ষড়যন্ত্র, রোগ-শোক, জরা-ব্যাধি আর জন্ম-মৃত্যু নিয়েই তো মানুষের জীবনচক্র। জালালের জীবনে কয়েকটি ঘটনা কেমন অমোচনীয়ও! একটি ঘটনার কথাই জানা যাক, একদা চুরির মামলায় পুলিশের হাত থেকে রেহাই পেতে যখন শহরের বস্তিতে আশ্রয় নেয় জালাল, তখন সে বুঝতে পারে-ছিন্নমূল মানুষের চেয়ে বস্তিতে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক আর দেহ ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপকর্মের লোকজনই বেশি। বস্তিতে অপকর্মে মোটেও পিছিয়ে নেই নারীরা। দেহ ব্যবসা আর মাদক ব্যবসা তো তারা সমান তালেই সামলে নেয়। কথিত নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় আর পুলিশের সঙ্গে সখ্য করে অপরাধীরা বস্তিতে দেদার চালিয়ে যাচ্ছে সমাজ আর আইনবিরোধী কাজকর্ম। দু-চারজন ধরা ঠিকই পড়ে, তবে আসল হোতারা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা না থাকায় বস্তিতে বেড়েই চলে নিত্যনতুন অপকর্ম! হাত বাড়ালেই মিলে হরেক রকম মাদকও। রাত দিনেই বস্তি এলাকায় কত জঘন্য অপরাধ ঘটে! দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়ও বস্তিগুলো। অধিকন্তু বস্তির কাছাকাছি নিম্নমানের আবাসিক হোটেলগুলোতে আনাগোনা কিছু দালাল চক্রের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই ওইসব নিম্নমানের হোটেলগুলোতে শুরু হয় মেয়েদের অশ্লীল নাচ-গানের আড্ডা আর মাদক কেনাবেচা। সামান্য ইস্যুতে কদিন পরপরই ঘটে খুন-খারাবিও। বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের গ্রেফতারও করে পুলিশ। জেলহাজতেও পাঠায়। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে সেই একই কাজ করে তারা। বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনায় ফিরি-তখন দিনের আলোতে জালালের এক পেশা আর রাত হলেই সেই পেশা বদলে যেত। জালাল দিনভর ঘোরাঘুরি করত কয়েক গ্রামে। লোকজন তাকে ডাকত-জালাল ঘটক। তাকে দেখেও মনে হতো অত্যন্ত সৎ আর সহজ-সরল ধরনের মানুষই। ভিজিটিং কার্ডেও জালালের নাম-পরিচয় বিয়ের ঘটকই। ঘটকালির আড়ালে যদিও জালাল তখন পেশাদার চোর। গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী পেশা বটে! রাতে দলবেঁধে কয়েক গ্রাম ঘুরে ঘুরে চুরি করত জালাল। কী জানি! মধ্যবয়সে ভাগ্যই বোধহয় তাকে ঠেলে দিয়েছিল এমন নিম্নমানের আর ভুল পেশায়! জালাল ধরাও খেল শেষে। এক নিশিথে ঘরের সিঁধ কেটে গরু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে জালাল। তখন হঠাৎ করেই ওই গ্রামে হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু-ছাগল চুরির পাশাপাশি ঘরে সিঁধ কাটার উপদ্রোপও বেড়ে যায়। সারা রাত পাহারা বসিয়েও এসব ছোট বড় চুরি ঠেকানো যাচ্ছিল না। শ্রাবণ মাসের এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে রাস্তার পাশের একটা বাড়িতে ঢুকে তিনজনের চোরের দল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আশপাশে কোথাও আলো নেই। বাড়িতে কেমন ভূতুড়ে পরিবেশ! মানুষজনও বোধহয় জেগে নেই! শুধু অবিরাম বৃষ্টির ঝুপঝুপ শব্দ। গ্রামে বর্ষার রাতে কেমন ভয়ানক অন্ধকার নামে, সেটা তো না দেখে কল্পনা করা দুঃসাধ্য। খুব শক্ত করে কোনো লোকের চোখ বেঁধে দিলে বা অন্ধ করে দিলেও বোধহয় এর চেয়ে বেশি অন্ধকার বোধ হয় না। কৃষ্ণপক্ষের রাতে গ্রামে এমনিতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে চায় চারদিক। কেবল কোথাও কোথাও আকাশের তারাগুলা চোখ মেলে চেয়ে থাকে বহু দূরে। ঝড়-বৃষ্টির ওই রাতে হাবিব মিয়ার দুধেল গাভি রাখার ঘরটায় সিঁধ কাটা শুরু করে চোরের দল। তখন হাবিব মিয়া তার স্ত্রীর শরীর থেকে কাপড়টা সরিয়ে ঝড়ের রাতের রোমান্টিক অনুভূতি নিয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে কেবল! ঠিক সেই মুহূর্তে দুধেল গাভি রাখার পাশের ঘরটায় সিঁধ কাটার শব্দ পেয়ে হাবিব মিয়া আর তার স্ত্রী যৌনকর্ম মুলতবি রেখে তড়িগড়ি করে বিছানা ছেড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে কুপি জ্বালিয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। তাৎক্ষণিক বাড়ির লোকজনও লাঠিসোটা নিয়ে যে যার ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে চোরদের ধাওয়া করে। পালানোর চেষ্টাকালে বাড়ির দক্ষিণ দিকের খেলার মাঠের কাছটায় জালালকে ধরে ফেলে তারা। গণপিটুনিতে অচেতন হয়ে পড়ে জালাল। তাকে বেঁধে রাখা হয় ইউপি সদস্য কায়েস মোল্লার কাচারি ঘরে। জালালের বাড়ি আরও দুই গ্রাম দূরে। দ্বিতীয় বিয়ের পর জালাল বসবাস করছিল পাশের গ্রামটিতে। গণপিটুনিতে আহত জালালের দুই হাত বেঁধে রাখা হয়। রাত যতটা পেরিয়ে আসছে, জালালের উদ্বেগ আর অস্থিরতাও ততটা বাড়ছে। সকাল হতেই তাকে ঘিরে গ্রামের লোকজন ভিড় করে। চোর ধরার খবর যেতে থাকে গ্রামের চতুর্দিকে। হাবিব মিয়ার স্ত্রী কয়েক বাড়ি ঘুরে ঘুরে গলা ফুলিয়ে বলে বেড়ায়, ‘আমরার ঘরে চুরি করতে আইছিল জালাল চোরা। ঘরের মাটি সরাইবার আওয়াজ পাইয়া চিৎকার মারি আমরা। বাড়ির মানুষ মিইল্যা ধইরা ফেলি জালাল চোরারে...।’ রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে বসে পুরো ঘটনা বারবার বলাবলি করে কুদ্দস মিয়াও, ‘জালাল এলাকায় বিয়ের ঘটকের কাজ করত। হগলের বাড়ি-ঘরের খবর সে রাখত। গতকাইল রাইতে আমাদের বাড়িতে চুরি করতে আইছিল হেয় কয়েকজন চোর লইয়্যা। চোরদের হাতে ধারালো রাম দাও আছিল। আমরা জালাল চোরারে ধইরা ফেলি। জালাল চোরারে দিয়ে অন্য চোরাদের খোঁজখবর জানবার চেষ্টা চলতাছে।’ চায়ের দোকানদার বরকত মিয়া বলে, ‘বড় আজব ব্যাপার-স্যাপার! এই লোকটা বিয়ের ঘটকালি করত জানতাম। পুরা গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাইত তারে। লোকটা যে রাইতে চোরার দল লইয়া বাড়িতে বাড়িতে চুরি করত, হেডা তো আগে বুঝতে পারি নাই...!’ এদিকে জালাল চোরকে একনজর দেখতে ভিড় করছে আবালবৃদ্ধবনিতা। চাপা উত্তেজনা নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। লোকজনের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে, চুরির অপরাধে জালালের দুই হাত কাটা হবে! হাত কাটার বিষয়টি নিয়ে সবার কেমন আনন্দ অনুভব হচ্ছে! কয়েকজন মিলে পাহারায় রাখে জালালকে। যদিও সেটা নিষ্প্রয়োজন। জালালের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তো দূরের কথা, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মতো শারীরিক শক্তিও এ মুহূর্তে নেই। জালালের একটা পা প্রায় ভেঙে দিয়েছে। থেঁতলে ফেলা হয়েছে তার হাতের আঙুলগুলো। নাকটা ফেটে রক্তাক্ত। গায়ের শার্ট ছিঁড়ে রক্তে মাখামাখি অবস্থায়। তারপরও দুই হাত কাটার কথা শুনে কেঁপে ওঠে জালালের বুক। পরিস্থিতিও খারাপই মনে হচ্ছে। ভয়ে লোকজনের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে জালাল বলে, ‘ভাই-গো! দয়া কইরা আমার হাত দুইটা কাইটেন না। আমি হইলাম গিয়া বিয়ের ঘটক। সামান্য ভুল হইয়া গেছে...।’ পাশে দাঁড়ানো মধ্যবয়সি একজন এগিয়ে এসে শক্ত হাতে তার গালে থাপ্পড় দেয় একটা। প্রচণ্ড থাপ্পড়ে কেমন লুটিয়ে পড়ে জালাল। কায়েস মোল্লার বাড়ির উঠানে আমগাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা, নইলে থাপ্পড়ের ধাক্কায় হয়তো দূরে ছিটকে পড়ত সে। থাপ্পড় খেয়ে জালালের বোধশক্তি সামান্য লোপ পায়। চারদিকে অন্ধকার দেখে। তার মাথার ভেতর পাক দেয়। মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে! কায়েস মোল্লা কাছে এসে বলে, ওই, হারামজাদা! তোর লজ্জা-শরম নাই-রে? আবার মুখে কস সামান্য ভুল হইয়া গেছে! চোরা, এটা কেমন সামান্য ভুল-রে? জালাল মরা গলায় বলে, ‘ভাই-গো, একটু পানি দেন। পিপাসা লাগছে। আমি আর বাচুম না-গো, ভাই...! কায়েস মোল্লার ইশারায় নলকূপ চেপে এক বালতি পানি এনে তার সামনে রাখা হয়। বালতির পানির দিকে চেয়ে অসহায় ভঙ্গিতে জালাল বলে, আমার মুখে পানি দেন-গো, ভাই। আমার হাত বান্ধা। একজন এগিয়ে এসে বালতিটা জালালের মুখের সামনে ধরে। জালাল বালতির পানিতে মুখ ডুবিয়ে গরুর মতো পানি গিলে। কায়েস মোল্লা ফের বলে, ‘কিরে! আর চুরি করবি?’ জালাল মাথা নেড়ে না বলে। চোখ তুলে চারদিকে তাকায় জালাল। আশপাশে দাঁড়ানো শিশুদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! অল্প দূরে দা হাতে কাঠের চেয়ারে বসে আছে এক শক্তিশালী যুবক। সত্যি সত্যি কী তার দুহাত কেটে ফেলা হবে? লোকজন তাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কায়েস মোল্লা উপস্থিত লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সকলের মতামত নিয়াই কাটা হইবে জালালের হাত। নিজের হাতে আইন নিয়া ঝামেলা বাড়াতে চাই না। চেয়ারম্যান সাহেবরেও জানানো হয়েছে বিষয়টি। তিনিও আসবেন শুনেছি। দেখি কী হয়...!’ কায়েস মোল্লার কথায় জালালের মনের ভয় আরও বেড়ে যায়! এমন বিপদগ্রস্ত মুহূর্তে তার মনে পড়ে, এক জুমার খুতবার আগের আলোচনায় ইমাম সাহেব মুসল্লিদের বিপদ মুক্তির দোয়া শিখিয়েছেন। জালাল মনে মনে বিপদ মুক্তির দোয়া পড়তে থাকে-‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমাল ওয়াকিল; নেমাল মাওলা ওয়া নেমান নাছির।’ দোয়ার অর্থও ইমাম সাহেব বলেছিলেন, ‘আল্লাহতায়ালাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কাজ সম্পাদনকারী। আল্লাহতায়ালাই হচ্ছেন উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।’ ইমাম সাহেব শেষে বলেছিলেন, ‘আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, দুশ্চিন্তা আর পেরেশানি থেকে বাঁচতে এ দোয়া পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন...।’ বিপদ মুক্তির দোয়া পড়তে পড়তে জালালের মনের ভয় কাটে সেদিন দুপুরের পর। তাকে উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। গণপিটুনিতে আহত শরীরে জালালের জরুরি চিকিৎসা দরকার। সদর হাসপাতালের বেডে শোয়া জালাল। সেলাইন পুশ করা হয়েছে তার বা-হাতে। পাশে দাঁড়ানো অল্প বয়সি এক সুন্দরী নার্সকে দেখে জালাল বলে, ও-আপা, আমি হইলাম বিয়ার ঘটক। চুরির বিষয়টি মিথ্যা! ও-আপা, আপনের কী বিয়ে-শাদি হইছে? আমার কাছে ভালো ভালো পাত্র আছে। সরকারি বড় চাকরি করা পাত্রও আছে! আপনে কইলে...।’ সুন্দরী নার্স কোনো প্রয়োজনে জালালের ওয়ার্ড থেকে বেরোলো নাকি বিয়ের কথায় সামান্য বিরক্ত বোধ নিয়ে চলে গেল-সেটা ঠিক বুঝা গেল না। তবে জালালও বোধহয় এমনটাই চেয়েছিল। জালালের ওয়ার্ডের বাইরে পাহারায় তখন দুজন পুলিশ সদস্য। নার্স চলে যাওয়ার পর আস্তে-ধীরে উঠে বসে জালাল। এদিক-ওদিক দেখে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসে জালাল! তারপর কতগুলো বছর জালালের জীবন থেকে পুরিয়ে গেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে পালিয়ে! স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই কতদিন! তাতে কী? সময় তো আর থেমে নেই! জীবনের নিয়মে জালালের স্ত্রীর যৌবনও গেছে? ছেলেমেয়েরাও নিশ্চয়ই বড় হয়েছে? এতদিন পর পঞ্চাশোর্ধ্ব জালাল ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে নিজের বাড়িতে ঢুকে তো হতবাক! সে কী ভুল কিছু দেখছে! তার চেনা ঘরবাড়ি, চেনা পরিবেশ কেমন বদলে গেছে! বাড়ির চারদিকের পরিচিত গাছগুলো নেই! তার টিনের ঘরটাও নেই! সেখানে পাকা ঘর হয়েছে। জালাল কী সামান্য ভুল করে অন্য বাড়িতে ঢুকেছে! কী আশ্চর্য! বাড়ির পূর্ব দিকের হরেক জাতের মাছের বড় পুকুরটাও নেই? ভরাট হয়ে গেছে!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম