Logo
Logo
×

সাহিত্য

নির্ঘুম জীবন

Icon

রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

নির্ঘুম জীবন

প্রতীকী ছবি

মানুষ কেন!প্রাণিকে কোনোকিছু শিখিয়ে দিতে হয় না। বংশগতি সংরক্ষণ ও বাঁচার প্রয়োজনে সে সবকিছু শিখে নেয়। হোক সেটা সংঘর্ষ শান্তি শ্রান্তি বিনোদন দারিদ্র্য বিমোচন।

অনলাইনে পড়ালেখা, সিনেমা নাটক প্রেম বিরহ সংসার চাকরি; পাতি নেতা বড় নেতা হওয়ার বাসনা, রান্না কান্না খুড়ি আপু হয়ে ধর্মগুরুর উপদেশ রীল; ইউটিউবার সেলিব্রেটি হতে দেখা উপলব্ধি নিয়ে মানিকনগর গ্রামের বেকার যুবক সাকলাইন নারী পুরুষ স্বাবলম্বী হতে অনলাইন হাতে খড়ি স্কুল খুলে দিলেন।

চ্যাট অপশনের শত শত সাংকেতিক ইমোজি স্টিকার হাসি কান্না ঘৃণা ভাষা রপ্ত করেন। মুখ বেঁকিয়ে গাল ফুলিয়ে কোমর  নিতম্ব সাপের মতন দুলিয়ে দুর্দান্ত রীল ব্যবসায়ী হতে রিচলিত স্খলিত শরীরী ভাষা প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন।' হুম ' শব্দের
প্রায়োগিক দুর্দশা নিয়ে হাতে কলমে ইশারা তালি তালিম মিশেল ভাবনায় রয়ে সয়ে একাকার জীবন গড়ে নিলেন।

মানিকনগর বর্ধিষ্ণু গ্রামের সরল-গরল ঘরাণা মানুষগুলোর চিত্র-বিচিত্র রঙধনু মনের রং  ঢং সঙ জীবন ধীরে ধীরে ক্ষীয়মান হতে হতে হুম সাহিত্যে হাত পাকিয়ে - পাস্তুরায়ন নিরুপদ্রব অন্তর্জাল জীবন সাহিত্যে যে যার মতন একা একা ইমোজি স্টিকার জীবন বেছে নিলেন।

মানিকনগর গ্রামে চা দোকানের বাগড়া ঝগড়া বিবাদ মারামারি থেমে গেল। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাট বাজার হয়ে গেল- রাক্ষস খোক্ষস পুরী। সকলের কানে কানে লাগানো ব্লুটুথ হেডফোন। নেই হাঁক ডাক চিৎকার চেঁচামেচি অট্টহাসি কোলাহল। গাজীপুর পূবাইল সিনেপাড়ার স্যুটিং স্পট ভাড়াটে উপকরণ ঘরবাড়ি জমিজিরাত বউ বাচ্চার মতন পাল্টে গেছে এখানেও রাতারাতি মানুষের জীবনাচার। নতুন করে হাতে খড়ি জীবনাচারের সুফল পেতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে কিছুদিন। তবে এটা ঠিক যে, বর্তমান হয়ে আগামী দিনের ফেসবুকীয় শুদ্ধাচার সবাই মেনে নেন।

মানিকনগর গ্রামের মানুষজন এখন পারতপক্ষে কথা বলেন কম। মৌনতা বাড়িয়ে দেয় দীর্ঘজীবন, - রহস্য জেনে  কুশল বিনিময়েও তারা সংহত সংযত। দারিদ্র্যতা একমাত্র নরক অভিশাপ জেনে তারা পারতপক্ষে ফেসবুকীয়
মনিটাইজেশন শুদ্ধাচারের বাইরে হাঁটেন কম।

এ বারের এমপি প্রার্থী মানিকনগর গ্রামের চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন। ফেসবুকীয় মনিটাইজেশন দয়াপানে তাকিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। ফেসবুক আছে যার পৃথিবী তার, মুখে শ্লোগান হাতে বুড়ো আঙুল ঘষে ঘষে পরশুরাম লাঙল চষে বেড়ান - আট ইঞ্চি চার ইঞ্চি টাচ স্ক্রীনে।

গর্ব করে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন বলেন - এ বদ্বীপের আলম আদম রতন স্বপন মুরগি ছাগল চোর কলম চোর প্রজেক্ট চোর ছেঁচড়া প্রতারক বাটপার যেখানে এমপি হয়ে টেবিল চাপড়ে ভিআইপি হতে পারেন;
পুলিশ পাহারায় সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ পিটিয়ে হাড়গোর ভেঙে দিতে পারেন; সে তুলনায় আমিত ভিআইপি প্রার্থী। কারোর টাকা মেরে খাইনি,দেশের টাকা পাচারের বদনাম নেই,সন্ত্রাস করিনা,দখল বেদখলে রাখিনি ব্যক্তিগত কিংবা সংখ্যাগুরু লঘু কারোর সম্পদ কিংবা সম্পত্তি। কারোর বউ
মেয়ে ভাগিয়ে বিয়ে করিনি। নারী নিয়ে লটর পটরের বদনাম নাই। নাচি গাই খাই দাই এটা ওটা দেখাই। বানরের মতন লম্পঝম্প দিয়ে ফরেন টাকা ডলারে আনি। দেশের মান ইজ্জত রুজি বরকত বাড়িয়ে দিয়েছি সোমালিয়া জলদস্যুদের মতন কয়েকগুণ বেশি। সোমালিয়া নৌবাহিনী সদস্যরা যেমন সরকারী চাকরি শেষে রিটায়ার্ড করে জলদস্যু টীমে কাজ করেন;আমিও  আগামী বছর পাঁচেক পরে
ফ্রিল্যান্সিং পেশা বেছে নিতে পারব।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন পরীক্ষা জিতে হুম স্টিকার প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে জনমত জরিপে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিনের পক্ষে ইউটিউবার অপু ভাই রাঁধুনি শেফালি খালা
ভাড়াটিয়া জিহ্বাস্ত্র নিয়ে সেফুদার আকাশচুস্বী স্বপ্ন দেখানো ভোট বিজ্ঞাপন যুদ্ধে ইউটিউবার এমপি প্রার্থী চৌধুরী ময়েজ উদ্দিনই এগিয়ে রইলেন। সবার দেয়া এটা ওটা প্রতিশ্রুতি বিজ্ঞাপন যুদ্ধের ডামাডোলে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন অনলাইন অফলাইনে বললেন, - প্রিয় মানিকনগর কাঞ্চননগর পাইন্দং বেড়াজালী রাঙ্গামাটীয়া নিবাসী,যদি এমপি
পদে নির্বাচিত হতে পারি; ইন্টারনেট সেবা ফ্রি পাবেন। সার কীটনাশক ফ্রি পাশাপাশি মাঠে ঘাটে সিনেমা নাটক দেখবেন,ভিডিও কলে কথা বললেন মন চাইলে প্রেম করবেন। পরিবারের সবাইকে চোখে চোখে রাখবেন।

চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন প্রতিশ্রুতি প্রতিজ্ঞা বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজিমাত করে সবার মন জিতে এমপি চেয়ার পানে অপেক্ষা করতে থাকেন।

মেম্বার হতেও যে রকমের উতলা টেনশন কাজ করে; তার চেয়েও সহজ মনে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন বিপুল ভোট পেয়ে এমপি হয়ে গেলেন। ছোটখাটো কালভার্ট ব্রিজ অনলাইনে উদ্বোধন করেন। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং নিয়ে ওসি উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও নিয়ে আমিত্ব অহঙ্কার নেই বললেই চলে। নিজেও সরকারি কাজের বাইরে অনলাইনে আয় করেন। পার্থক্য এটুকুন যে,সরকারের টাকা নয় ছয়
করেন না।

চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন - মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সে বিখ্যাত উক্তি -  সুযোগ ও পার পেয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলে সবাই খারাপ ব্যবহার করেন; নিয়ে
বেশ সতর্ক ও সংযত। সে সুযোগ পারতপক্ষে এমপি সাহেব কাউকে দেন না।

যথারীতি এমপি চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন নিজ এলাকায় হুম অনলাইন হাতেখড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্হাপন করলেন। হুম একাডেমি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল
কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা

চালিয়ে যাচ্ছেন। দিকে দিকে হুম প্রেম হুম বিচ্ছেদ নির্ঘুম জীবন গতিধারা গড়ে হুম সাহিত্যে - রাতারাতি প্রথাবিরোধী এমপি অমরত্ব এনে দেন।

চিরকালই মানুষ চেয়েছে সুখ শান্তি। জাগতিক সুখ দুখের বাইরে একমাত্র প্রথাবিরোধী হাতে গোনা ক'জন ছাড়া হেঁটেছেন কম। লক্ষ মানুষেতেও প্রথাবিরোধী মানুষ নেই বললেই  চলে। তাইত মানুষের কাছে সুখের বিপরীতে সম্পর্কের গুরুত্ব কম। শখ সুখ আয়েশী জীবনের বিপরীতে মানুষের নির্ঘুম জীবন। হোক না বাবা মা সন্তান স্বামী স্ত্রী প্রেমিক প্রেমিকা স্বকীয়া পরকীয়া অজাচার নিষিদ্ধ সম্পর্ক বন্ধু সুজন কুজন। যে কোনো প্রকারেই হোক না কেন মানু্ষের সুখ চাই।

সে অয়োময় মরীচিকা সুখের খোঁজে মানুষ সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে হয়েছেন, যুগে যুগে দেশান্তরী সুখান্তরী। সুখের ধ্রুপদী মহোৎসবে কেউ হয়েছেন মহারাজ সম্রাট; কেউবা পিছিয়ে পড়ে হয়েছেন নিষণ্ন নিষাদী।

সংসদ অধিবেশন সপ্তাহখানেক ধরে মূলতবী। এমপি হোষ্টেল ছেড়ে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন নিজের এলাকা পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। হুম হুম অধিবেশন  স্পিকার মুখে হুম হুম জয়যুক্ত হয়েছে টেবিল চাপড়িয়ে এরি মাঝে দেশ বিদেশের
ভাইরাল মুখ ময়েজউদ্দিন। এমপি হয়েও ফেসবুকীয় শুদ্ধাচার মনিটাইজেশন সাহিত্যের বাইরে পারতপক্ষে যেতে চান কম।

ফ্রি ইন্টারনেট পাবার পরে রাতারাতি পাল্টে গেছে মানিকনগর গ্রামের হালচাল। 

কেউ কারোর সাথে মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ টেলিগ্রাম ছাড়া পারতপক্ষে অধরওষ্ঠ এক করে কথা বলেন কম। বিয়ে শাদী কনে দেখা হয়ে প্রেম বাসর দেনদরবার পর্যন্ত ফেসবুক রীল মনিটাইজেশন বাণিজ্যে সবকিছু সেরে নেন। এলাকায় এমপি হয়ে আসার পরেও কদর নেই তেমন। দান দয়া নিতেও কেউ আসেন না তেমন। গ্রামের মুরুব্বী ছাড়া যুবশক্তি কেউ দেখা করতে চাইছেন না দেখে এমপি চৌধুরী ময়েজউদ্দিন সাহেব
বেশ চিন্তিত। কেউ কেউ সরবে নীরবে বলাবলি করে বলেন,- নেই আমাদের পারিবারিক সনাতনী বন্ধন। নেই পরিবার সংসার। নেই বউ বাচ্চা। মুরুবীরা ক্রন্দন করে বলেন,বাবা আমাদের বেশি টাকার দরকার নাই। আমরা ইন্টারনেট সংসার চাই না । এনে দাও ঠিক আগের মতন অটুট পারিবারিক বন্ধন। সবকিছু এনে দাও আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম যেমন। 

এমপি সাহেবের সরকারী গাড়িতে জাতীয় পতাকা। কানে ব্লুটুথ পরে হেলেদুলে সিংঘম রাজকীয় থোরাই কেয়ার না করে হেঁটে চলেছেন,কিছু কিশোর গ্যাং। সাইট না পেয়ে ফেসবুকীয়  শুদ্ধাচার  মনিটাইজেশন ধনী কিশোর গ্যাং চোখে চোখ রেখে এমপি সাহেবকে বলেনঃ
' আপনি এমপি তাতে আমাদের কী?

আপনার কাজ - জনগণের সেবা করা।' এমপি চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন প্রটেকশন পুলিশের দিকে তাকালেন। কিশোর গ্যাং এবার- সহজ প্রশিক্ষণ বিশাল মনিটাইজেশন বাণিজ্য যুদ্ধ জেতা গেরিলা কৌশলে মোবাইলে লাইভ চালু রেখে বলেনঃ আপনারা দেশপ্রেম বোঝেন না; দেশপ্রেমিক মনিটাইজেশন রেমিটেন্স যোদ্ধা চিনেন না। আপনাদের কে বেতন
দেয়? কোথা হতে আসে বেতন? আপনারা এমপি পুলিশের বেতন এ সহজ সরল ফেসবুক মনিটাইজেশন যোদ্ধাদের নিকট হতে আসে।

এ কী! মিনিট কয়েকের মাঝে হাজার লক্ষ আবেগীয় পর্যবেক্ষক এমপি পুলিশ নিয়ে নয় ছয় বলে চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে লাইক শেয়ারে সারি সারি ফোরাত কারবালা বেদনাশ্রু বইয়ে দিচ্ছেন। কিশোর গ্যাং বেধনাস্ত্র হয়ে অনেক টাকা কামাই করে নিলেন।

ফেসবুকীয় পৃথিবী দ্বীপের ভরাট বেদনার বদ্বীপের ঘরে ঘরেও চলছে ফেসবুকীয় লাভ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। সে ট্রায়াঙ্গলে নেই লজ্জা শরম নামের কোনো নৌযান সাগরযান কিংবা ডুবোযান। ঘরে ঘরে
চলছে অন্তর্জাল চিৎকার হাহাকার। সংসার নাই, সংসার কই আমার? ক্রন্দন। কোথায় স্ত্রী পুত্র কন্যা পিতা মাতা পরিজন প্রেমিক প্রেমিকা আমার তোমার তার?

ঢাকা মোহাম্মদপুর তাজমহল সড়কের সি ব্লক, গোশালা কোচিং সেন্টারে চলছে ফেসবুক মনিটাইজেশন শোকের মাতম। গোশালা মালিক পি সরকার, সংসার কই? আমার সংসার কই?
বলে হাপিত্যেশ করে চলেছেন।  খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন,তার ফেসবুকীয়

মনিটাইজেশন সংসারে অন্য কেউ সংসার পেতে বসে আছেন। মাঝে মাঝে টেস্টোস্টেরন হরমোন মেডিসিন গিলে আবেগহীন দায়সারা কন্ঠে
চিৎকার করে বলেনঃ শিমুল, তুমি কই?  তুমি কই?

কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা কেন যেনো তোমায়!

দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে তোমার দেহ মন; আমি সুখের সংসার করতে চাই।

পৃথিবীদ্বীপ  বদ্বীপের  ঘরে ঘরে চলছে সুখে সংসার করার তীব্র হাহাকার শোকের মাতম।

লেখক: রাজীব কুমার দাশ
প্রাবন্ধিক ও কবি
পুলিশ পরিদর্শক,বাংলাদেশ পুলিশ।
মেইলঃ rajibkumarvandari800@gmail.com
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম