Logo
Logo
×

অন্যান্য

ব্যবসার সনদ নবায়নে ৬ গুণের বেশি ঘুস

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১০:১৫ পিএম

ব্যবসার সনদ নবায়নে ৬ গুণের বেশি ঘুস

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে শিল্পকারখানা স্থাপন বা ব্যবসা শুরু করতে ১৭-১৯ ধরনের সনদ (লাইসেন্স) লাগে। এর মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর), বিআইএনসহ (ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর) ব্যবসাসংক্রান্ত সনদও আছে। এসবের সঙ্গে একাধিক সরকারি দপ্তর যুক্ত থাকায় সব শ্রেণির শিল্পোদ্যোক্তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার সনদ নবায়নে সরকারি ফির তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে ৬ গুণের বেশি ঘুস দিতে হয়। সনদ গ্রহণ-নবায়ন পদ্ধতি পুরোপুরি অটোমেটেড করতে পারলে সময় ও অর্থ- দুটিই সাশ্রয় হবে। 

মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আয়োজিত এক সংলাপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

‘ব্যবসাসংক্রান্ত বাধা ও সম্ভাব্য সমাধান’ শীর্ষক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম। 

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। এফবিসিসিআই, জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড এবং সিপিডি যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাংলাদেশকে এখন আর সস্তা শ্রমিক দিয়ে বিবেচনা করা হয় না। বাংলাদেশ এখন লিড সার্টিফাইড কারখানার দেশ। ব্যবসা সহজীকরণ করতে পারলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবেই। 

তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধার জন্য জাপান, চীন, ভারতসহ ২৬টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোচনা হচ্ছে। ২ বছরের মধ্যে এটি করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, উচ্চসুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্প করা সম্ভব নয়। কারণ, একটি ভবন নির্মাণ করা হয় ৫০-১০০ বছরের জন্য বা কারখানা করা হয় ২৫-৩০ বছরের জন্য। কিন্তু ঋণ শোধ করতে হয় ৮ বছরের মধ্যে। তার মতে, ব্যাংকিং সিস্টেম খেলাপি ঋণের জন্ম দিচ্ছে এবং সেটা পৃথিবীর সব দেশেই আছে। ২০০৮ সালে আমেরিকা ট্রিলিয়ন ডলারের বেইল আউট প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে কখনো সফল হচ্ছেন, কখনো বিফল হচ্ছেন। উদ্যোক্তারা সাহস করে ঝুঁকি না নিলে বাংলাদেশে এত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ছিল না।

মূল প্রবন্ধে গোলাম মোয়াজ্জেম তৈরি পোশাক, চামড়া, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফুড প্রসেসিং ও সিরামিক শিল্পে কতগুলো সনদ নিতে হয়, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ব্যবসা করতে ডকুমেন্টেশন বা সনদ গ্রহণের প্রয়োজন আছে। তবে সেটি আরও সহজ করা যেতে পারে। যেমন: সিটি করপোরেশন ২৯৬ ধরনের ট্রেড লাইসেন্স দেয়। এ লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে ৭-৮টি ধাপ রয়েছে। এ ধাপগুলো কমিয়ে আনার মাধ্যমে সময় সাশ্রয় করা সম্ভব। আবার ব্যবসা সনদ প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। এর পরিবর্তে সনদের মেয়াদ ৩-৫ বছর করা যেতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া গেলে তা ব্যবসা সহজীকরণে ভ‚মিকা রাখতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসার আরেক প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়ন। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সুদহার অনেক। মূলত অনাদায়ি ঋণের কারণে সুদহার কমানো যাচ্ছে না। এর দায় নিতে হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণে আরও সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এসএমই শিল্পকে সুদের সঙ্গে অতিরিক্ত এক শতাংশ সুপারভিশন চার্জ দিতে হয়। 

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, নানা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ যেমন সহজে ব্যবসার সূচকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তেমনই ব্যবসার খরচও বেড়ে যাচ্ছে এখানে। এ পরিস্থিতিতে অটোমেশনের বিকল্প নেই। শুল্ক বিভাগ থেকে শুরু করে রাজস্ব বিভাগ- সবখানেই এটা করা যায়। ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করছে; ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, বিডার মতো যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করছে, তারা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাহীন। আবার বিডার সব সেবা সহজে পাওয়া গেলেও অন্যখানে বিলম্ব হয়। এখানেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। এক দরজায় সেবা দেওয়ার পরিধি বৃদ্ধি করা গেলে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ বাড়বে।

জার্মান দূতাবাসের উপপ্রধান জ্যান জ্যানওসকি বলেন, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে জার্মান বিনিয়োগকারীরা চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। জার্মানিতে এই নীতি ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ জার্মানি চীন থেকে সরে এসে উৎপাদনের নতুন কেন্দ্র খুঁজছে। এ মুহূর্তে জার্মান বিনিয়োগকারীরা মূলত ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতির সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। তবে এজন্য ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত ও ব্যবসা সহজীকরণ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, গত দেড় বছরে ঝামেলা ও হয়রানিমুক্তভাবে বিডা সব সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিডা শতভাগ স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা সনদ গ্রহণ সময়সীমা কমিয়ে আনতে বিডা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি সব দপ্তর সনদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক আছে।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম