গণঅভ্যুত্থানের পরদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে কথা হয়েছিল মামুনুল হকের

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তিনি ভারত গিয়ে আশ্রয় নেন। এই আন্দোলনের ছাত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। ৫ আগস্ট অন্তবর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় হেফাজত নেতা ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকও ছিলেন। এর একদিন পর ৬ আগস্ট রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান মামুনুল। সেখানে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে কথা হয়। বিষয়টি সামনে এনেছেন মামুনুল হক নিজেই।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ছাত্রদলের কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেদিনের কথোপকথনের প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, হাসপাতালে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সহযোগিতায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার দীর্ঘ সময় আলাপ করার সুযোগ হয়েছিল।
দীর্ঘ এই আলোচনায় বেগম জিয়ার একটি বিষয়ে আমি খুবই অবাক হয়েছি। জীবনের শেষ সময় এসে শেখ হাসিনার দ্বারা তিনি যেভাবে নিগৃহীত, অপমানিত, লাঞ্চিত হয়েছেন, নিজের প্রিয় ভিটা-মাটি হারিয়েছেন, বছরের পর বছর কারাগারে দিন কাটাতে হয়েছে, যার ওপর অত্যাচার আর নির্যাতনের কোনো সীমা ছিল না। সেই মানুষটি সঙ্গে হাসিনার পতনের পর কথা বলার সময় তখন তো তার ওপর হওয়া বিগত দিনের অত্যাচার-নির্যাতন, শেখ হাসিনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু আমি বিস্মিত হলাম, তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপের মধ্যে একবারও শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করেনি।
মামুনুল হক বলেন, সে সময়ে তিনি (খালেদা জিয়া) আমাকে শুধু দুটি বিষয়ে বলেছেন। একটি হচ্ছে— আমার প্রয়াত বাবা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সঙ্গে তার রাজনীতির কিছু স্মৃতিচারণ। আর দ্বিতীয়টি হলো- তিনি বললেন, আপনাদের কথা মানুষ সব সময় শোনো; মানুষকে বলেন তারা যেন রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট না করে।
আমি অবিভূত হয়েছি তার এসব কথা শুনে। আমি খেয়াল করে দেখলাম তার কিন্তু অতীতের কোনো দুঃখ-কষ্টের কথা মনে নেই। তার শুধু মনে আছে দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালবাসা, দেশের সম্পদের প্রতি ভালোবাসা। আমি মনে করি আপনারা যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করে তাদের উচিত বেগম জিয়ার থেকে দেশপ্রেমের শিক্ষা নেওয়া।
বেগম খালেদা জিয়া আমাদেরকে বলতেন, আমরা (বিএনপি) ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করি না; তবে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আপনারা যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেন, আপনারা সামনে এগিয়ে গেলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাবেন, বিরোধীতা পাবেন না।
মামুনুল হক বলেন, অনেকেই বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে একই পাল্লায় পরিমাপ করেন। আমি মনে করি এটা অনেক বড় অবিচার। আওয়ামী লীগ কোনো ইসলামী সংগঠন নয়, বিএনপিও কোনো ইসলামী সংগঠন নয়। তবে এই দুটি সংগঠনের মধ্যে অনেক ঐতিহাসিক পার্থক্য রয়েছে।
ঠিক যেমনিভাবে আবু জাহেল ও আবু তালেব…কেউ কিন্তু ইসলামের পথে অনুসারী ছিলেন না। কিন্তু কেউ যদি আবু জাহেল ও আবু তালেবকে এক পাল্লায় মাপে তার চেয়ে বড় জালেম আর কেউ হতে পারে না। আমি মনে করি, ইসলামী রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিএনপি আবু তালেবের ভূমিকায় আর আওয়ামী লীগের আগাগোড়াই আবু জাহেলের ভূমিকা। কাজেই এই জন্য বিএনপিকে একথা মনে রাখতে হবে, তার নেতৃত্বকে এই কথা মনে রাখতে হবে।
বিএনপির উদ্দেশে এই হেফাজত নেতা বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনারা একটা আদর্শের রাজনীতি করেন আমরা আরেকটা আদর্শের রাজনীতি করি। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, সেটা হল বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং ইসলামী শক্তি পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। যদি জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং ইসলামী শক্তির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশ বিপন্ন হবে। বাংলাদেশ বিরোধী ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার শক্তিশালী হবে। যারা বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলতে চায় তারাই স্বাধীনতার শত্রু ; বাংলাদেশের শত্রু।