Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক

দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলেছে বিএনপি

সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব জামায়াতের * মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে-এনসিপি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলেছে বিএনপি

সংগৃহীত ছবি

বিএনপিই সবার আগে সংস্কারের কথা বলেছে বলে জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারের যেসব বিষয় আছে, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার কথাও বলেছে তারা। শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা জানিয়েছে দলটি। বৈঠকে সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছে জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে-মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দল মিলে একটি ঐকমত্য পোষণ করতে হবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে।

বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অন্য দলগুলো হলো-নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন। বেলা ১টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৈঠক শুরু হয়। সেখানে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জাতিসংঘ ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবির

সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

বৈঠক শেষে জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে কী নিয়ে আলাপ হয়েছে, বিএনপিই কী বলেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল আয়োজন করা হয়েছিল। এতে সংস্কার কমিশন প্রধানরা ছিলেন। মূলত এখানে সংস্কারের যেসব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, সেসব বিষয় সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানানো হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এতদিন যে কথা বলে আসছি, (জাতিসংঘের মহাসচিবকে) একই কথা বলেছি। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। সংস্কারের কথা তো আমরা আগে বলেছি। সেই সংস্কারটা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেই সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়, আমরা বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যেসব বিষয় আছে, সেগুলো করে ফেলা, দ্রুত নির্বাচন করা এবং একটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো করতে হবে। এটা (সংস্কার) চলমান প্রক্রিয়া। সেই বিষয়গুলো বলে এসেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব কিছু বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) করেননি। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আসলে এই গোলটেবিলটা...আমি ঠিক বুঝিনি আর কী।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা যা চাচ্ছে, সব তাদের দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিবকে টাইম ফ্রেম দিতে যাব কেন?

নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারা বসে রিফর্মস কী নেবেন, সেটা ঠিক করেন। উনি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী নির্বাচন, এমনটা উনি আশা করেছেন।

বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দল মিলে একটি ঐকমত্য পোষণ করতে হবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে। জনগণের কাছে আমাদের সংস্কারের যে কমিটমেন্ট, যে ধারাবাহিকতা, সেটা বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি। নাহিদ বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র যে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটাই আলোকপাত করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ সংস্কার রিপোর্টের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছিলেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের দলীয় অবস্থান সংস্কার বিষয়ে তুলে ধরেছেন।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে আমাদের সংস্কার বিষয়ে যে অবস্থান, আমরা মনে করি, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, বিচার ও সংস্কার অন্যতম কমিটমেন্ট জনগণের কাছে। সংবিধান সংস্কার নিয়ে এনসিপির অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান, গণপরিষদের মাধ্যমেই সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় সংসদের সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেও এটাই দেখতে পাই। তিনি বলেন, আমরা আমাদের এই দলীয় অবস্থান সংক্ষেপে বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিবও তার জায়গা থেকে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার তারা যেন নিজেরাই সমঝোতায় আসে। একটা ঐকমত্যে আসে। গণতন্ত্রের ট্রু এসেন্স সেটাকে মাথায় রেখেই যেন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, একটি ঐকমত্যে আসতে পারি সেটাই তিনি তার জায়গা থেকে বলেছেন।

গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরও ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি জাতিসংঘের মহাসচিবকে। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ, রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ভূমিকা নিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সাকি। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ও স্বচ্ছতার সঙ্গে চাই। সেজন্য জাতিসংঘ আমাদের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ জাতিসংঘের মহাসচিবকে দেশে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জাতিসংঘ বাংলাদেশ টিম, জেনেভার মানবাধিকার কমিশনের অবদান অনস্বীকার্য। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যে রাষ্ট্রীয় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তা মানবাধিকার দপ্তরের ১১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বিস্তারিত ফুটে উঠেছে। তিনি জানান, এবি পার্টি মনে করে বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে সর্বপ্রথম জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় শেখ হাসিনা পরিবারের যেসব আত্মীয়রা রাষ্ট্রীয় স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে এবং সেগুলোর অপব্যবহার করেছে দেশের জনগণের বিপক্ষে সেগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআরের আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টর, টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএসের আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরলীধরন, আইওএম-এর মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি।

রাজনীতিবিদদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের পরে তরুণ সমাজ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক শেষে বেরিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বলেছি, এখানে সামাজিক মাধ্যমে একটা সিরিয়াস বুলিং, সিরিয়াস হ্যারেজমেন্ট এবং মিস ইনফরমেশন স্প্রেড করা হচ্ছে। এটা তো সারা পৃথিবীরই একটা বাস্তবতা। যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল তখন কিন্তু মিয়ানমারের মিলিটারি এজেন্সির পক্ষ থেকে সিরিয়াস ফেইক নিউজ, মিস ইনফরমেশন সামাজিক মাধ্যমে সার্কুলেট করা হয়। যার ফলে রোহিঙ্গা জেনোসাইট তারা ফেসিলেটেট করে। আমরা কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে এটাই বলেছি যে, মিস ইনফরমেশন যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি তাহলে এর কিন্তু অনেক বড় একটা সোশ্যাল ইফেক্ট থাকবে। তাই জাতিসংঘকে আমরা এই বিষয়গুলো বলেছি।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে আরও অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশের ইকোনমিটাকে স্কাম্বল করে দেওয়া হয়েছে। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এসব তথ্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে আমাদের এখানে যে নারীর নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন এই প্রশ্নগুলো রেইস করেছি। ছাত্রদের পক্ষ থেকে যে কনসার্নগুলো, ইয়ুথ ইম্পাওয়ামেন্টের প্রশ্নগুলো রেইস করেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম