বিএনপির বর্ধিত সভায় ১০ প্রস্তাব গৃহীত
জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে দলকে সর্বাত্মক প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে দলকে সর্বাত্মক প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এজন্য দল এবং সব অঙ্গ দল ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মাঝে সক্রিয় হতে এবং কথা ও কাজে জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দলীয় নীতি, আদর্শ, কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবহেলা এবং দুর্নীতি-অনাচারসহ গণবিরোধী সব কর্মকাণ্ড ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকতে সবাইকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড।
শুক্রবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার দলের বর্ধিত সভায় গৃহীত প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তের এসব কথা জানানো হয়। দীর্ঘ ৭ বছর পর বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হল মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই নগরী থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সকালের উদ্বোধনী সভা শেষে দুপুর থেকে মধ্যরাত অবধি চলা রুদ্ধদ্বার দ্বিতীয় অধিবেশনে তৃণমূলের প্রায় শতাধিক নেতা বক্তব্য দেন। বর্ধিত সভার শেষের দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তৃণমূলের কাছ থেকে মতামতের ভিত্তিতে ২০টির বেশি সিদ্ধান্ত উত্থাপন করেছিলেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ১০টি প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ঘোষিত-‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ এই আদর্শকে ধারণ করে এই সভা ‘ঐক্যেই শক্তি-ঐক্যেই মুক্তি’ এই আপ্তবাক্যকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে বিজয়ের পথে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে।
এতে আরও বলা হয়- ২০১৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এবং যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে গৃহীত ২০২৩ সালে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার আলোকে রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দল ও সংগঠনের সঙ্গে মিলে অব্যাহতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলা হয়, ‘ঐকমত্যে গৃহীত যেসব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন সম্ভব তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং যে সব সংস্কারের জন্য আইন বা সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন তা নির্বাচিত জাতীয় সংসদে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করছে। বর্ধিত সভা মনে করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমেই শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে থাকে। এই মৌলিক অধিকার থেকে এদেশের জনগণকে প্রায় দেড় যুগ বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ফলে এই বঞ্চনার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার কোনো অজুহাত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সভা থেকে দাবি করে বলা হয়, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে যথাশীঘ্র সম্ভব সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’ দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল এবং শ্রেণিপেশার সংগঠনকে আস্থায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে পতিত সরকারের সৃষ্ট ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের পাশাপাশি অযৌক্তিক কারণে আন্দোলনের নামে জনজীবন বিপর্যস্তের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীরা নির্বিঘ্নে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং এখনো অসংখ্য অপরাধী অবাধে কিভাবে বিচরণ করছে তার একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বিএনপির বর্ধিত সভা সরকারের কাছে দাবি করছে। এসব অপরাধীর বিচার ও শাস্তি প্রদানে বিলম্বে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, বিদেশে অবস্থান করে যারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও শান্তি-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের এবং তাদের দেশীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কূটনৈতিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এই সভা পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার এবং তাদের সহযোগী এক-এগারোর সরকারের দায়ের করা মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
বর্ধিত সভায় ঐক্যবদ্ধ বিএনপি ও অঙ্গদল, সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।
বর্ধিত সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধী এই গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি স্থাপন ও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিজয়ী করার লড়াইয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কৌশলী, সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রশংসা অর্জন করেছে। দলের দুঃসময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে দলের কার্যক্রমকে শক্তিশালী, দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত করা, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি ফ্যাসিবাদ পতনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সহায়তার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি মানবিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বর্ধিত সভায় দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম আন্দোলন এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহত, পঙ্গু, দৃষ্টিহীন ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে প্রকৃত শহিদদের তালিকা প্রণয়ন, তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে।